সর্বশেষ

সাহিত্য

ভালোবাসার দর্পন

ন. নাহার আনছারী
ন. নাহার আনছারী

শুক্রবার, ৩১ মে, ২০২৪ ১১:০৬ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
ভালোবাসা নামক দর্পনের উল্টো পাশে যে বাস করে তার থাকতে নেই কষ্ট ! থাকে না ব্যথা বা অভিমান। যা থাকে তা কেবলই সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কিছু স্বচ্ছ ঘামের প্রতিফলন ! যৌবন তাড়িত সকালে ঘুম ভাঙ্গে নারী তোমার শান্তিরক্ষার চুক্তির পরিচয় পত্রের সম্মান আগমনের পথ চেয়ে।

সকালের এবাদতে একলা কাটানো সময়গুলো বিদ্রুপের হাসি হেসে তোমায় টেনে নিয়ে যায় হেঁশেল ঘরে। সে ঘর মাটির হোক কিংবা টাইলসের ! চুলাটা লাকড়ি বা কিচেনহুড সংলগ্ন।

তোমার আপডেট হেঁশেলে কাজের বূয়া থাকতেও পারে আবার না……ও !

সবই কপাল ! তুমি আঁছড়ে পরো! ঠিক যেমন করে রুটি ওঠে তাওয়া জুড়ে। সক্কলের নাস্তা, টিফিন, গরম পানি ,চা, কফি সাথে মুরুব্বী বৈশাখের ঔষোধ ! পথ্য ! সারাদিনের সকলের খাবার এর ব্যবস্থা সেরে ঠিক বাম হাতে রুটিটা চায়ের কাপে ভিঁজিয়ে চাবানোর জন্য ধৈর্য ব্যায় না করে যেই গিলতে যাবে ঠিক তখনই,

– আপা আমার পোলাডার জ্বর কাল ছুটি দেন ।

বমি উঠে আসতে চায়। ডান হাতটা এবার কাজে লাগে। ঠোঁট দুটো মোছার ফাঁকে চোখের

জল টুকু আঁচলে বেঁধে তুমি ছুটছো।

কোন রকমে গাড়ি হয়ত একটা জুটলেও জটিলতা থেকে মুক্তি কি পাও ?

বাচ্চা দুই বা চার । কে কখন ফিরবে কিভাবে ফিরবে ? রাস্তা ঠিকমত পার হতে পারবে তো !আর তুমি যদি বাইকার হও তবে তো হয়েই গেলো !

এসব ভাবতে যেয়ে সিগন্যাল ছাড়ার পর যদি সেকেন্ড দুই নিজেকে ভুলে যাও তো পাশে বলাবলি শুরু হবে, “ দেশটায় কোন আজরাইল যে আইছে ? নারী বাইকার দের জ্বালায়

পা ফেলানো যায় না। সাইকেল চালাইতে পারবো কিনা সন্দেহ, বাইক নিয়া বেড়ায়”।

তোমার কিন্তু গা জ্বলে না। নিত্য কটাক্ষ প্রেমের সুবাস তোমার শরীর সওয়া।

যে এভাবে বলছে সে শিক্ষিত নয়। নতুবা শিক্ষার আলো চোখে তার পরে নি।তুমি বুদ্ধিমতি তাই তার মা’কে দোষারোপ কখনও করবে না। সে যে নারী !

অফিসে তোমার পৌঁছাতে দু’চার মিনিট দেরী বস মানবেন না। কেনো মানবেন ?

সেটা তো নিয়ম নাই। নিয়ম হলো তোমার স্বামীকে সময় মত সঠিক জায়গায় পৌছে দেওয়া।

সেটাই তুমিই প্রতিদিন করো। করার জন্যই তোমার জন্ম।

খাওয়া বা পরা নিয়ে নারীদের কোন অভিযোগ থাকতে নেই। পিছনের কালে তোমার মা ! নানী! দাদী ! তার দাদীর দাদী কারোরই ছিলো না।

ছিলো না বলেই বংশ পরম্পরায় তুমি বংশজ ঘরের মেয়ে ।

এসব কৃতিত্ব অবশ্য কোন নারীর নয়। বংশ প্রসব করে কেবল পুরুষ ! ওটা তাদেরই কাজ।

ছুটির দিনে সকলের চাহিদা মেটানোর ফাঁকে একটু নিজের জন্য বের করা সময়টা তুমি ব্যয় করতে পারো নিজের ঘর গোছাতে। কিন্তু বেসিনের আয়নায় কাটা পরা হাতের জলে সাদা বেসিন কখন যেনো রাঙাজলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে সে দৃশ্য কি ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আর মনে থাকে বলো!

কাটা হাতেই হয়ত বাচ্চার খাবার মুখে তুলে দিতে হয়। কাটাহাতটা ধরে যখন কেউ পরম আব্দারে কাছে টানে তখন মুখকালো তোমাকে কি মানায় ? বাজারের ব্যাগ যখন তোমার পিছু নেয় তখন কি স্বার্থপর হতে পারো ? কাজের মানুষ থাক না থাক সংসার তো তোমারই, পালানোর উপায় কি আছে ? মেয়ে মানুষ চাকরী করার কি দরকার এটা যেমন সমাজের সাবলীল রক্তচক্ষুর ভাষা। ঠিক তেমনই, এত ছুটি লাগলে অফিসে নিয়ম থাকবে কথাটা যেনো নারীর জীবনের অলংকার। এ তো মধ্যবিত্ত ! নিম্নবিত্তের ঘামের দাম কপালে সয় না। শ্রমজীবি নারীরা হজমে আত্মবিশ্বাসী।


উচ্চবিত্তের মধ্যে ছাড়াছাড়ি শব্দটার বসবাস। শুধু কি দেশেই এমন চিত্র ! না বিদেশেও বাঙালি নারীদের অনেক স্বপ্ন ঘুমায় বালিশের কভারে এ কথা মিথ্যা নয় । যেমন; সত্যবালা অনেক নারীরাই খামে করে নিজদেশে নিজের ঘামের বদলে রক্তও পাঠায়।


এরপর কি তোমার নাম নারীদের তালিকায় স্থান পায় ? নারী হতে হলে যৌবন কিংবা নিজের শরীর এর নিরাপত্তা নিয়ে কথা কইতে নেই। বড় বড় টিপ যারা পরে হয়ত ওরা একাই নারী। এসির বাতাসে যারা একমুঠো চুল শুকাতে পারে তারা নারী।

কিংবা মিছিলে বাইক যে নারী হাঁকায় সেই নারী। পেটের দায়ে রিক্সা চালানো নারীদের গল্প

সুখের প্রদীপ চেনে না। অন্যের সংসারের ফেলে দেয়া ভাত এনে যে মা তার সন্তানকে ডাক্তার, প্রকৌশলী,আইনজীবি বা শিক্ষক হিসাবে গড়ে তোলেন; সে মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করাটা সংস্কৃতি নয়।

যে শিশু বাল্যবিবাহের শিকার সে কেবলই ঝরাবকুল । যে নানী ভোট দিতে পারে না।

তার বয়স কবরের কাছাকাছি। সে প্রতিবাদ করার কে ?

তুমি কোথাও নারী নও। কেবলই সংসারী মহিলা। নারীর সংগা বলে কিছু নেই।

যেমন পারিশ্রমিক নেই। ছুটি নেই। অবসর নেই।

যা আছে তা কেবলই ঘাম ! শ্রম ! নিঃস্বার্থ ভালোবাসার দর্পন। সে আরশিও তোমার জন্য নয়। সে আয়নায় মুখ দেখার অধিকার রাখে শুধু স্বার্থক জাতি। তবুও শান্তি ! এটাই কম কি বলো ?


নারী দিবসে সকল নারীর জন্য রইলো ভালোবাসার সুবাস। নারী তোমার ঘামের প্রতিটি বিন্দু ফুল হয়ে তোমায় আঁকড়ে ধরবে কোনও একদিন, সেটাই হোক আত্মবিশ্বাস !

১০৯ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
সাহিত্য নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন