খাল-বিলে নেই পানি
খোকসায় পাট এখন কৃষকের গলার ফাঁস!
বৃহস্পতিবার , ১ আগস্ট, ২০২৪ ১১:১৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় চলতিবছর লক্ষ্যমাত্রা থেকেও প্রায় ৫৫ হেক্টর জমিতে বেশি পরিমাণ পাট আবাদ করেছে কৃষকরা । তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে অনাবৃষ্টির কারণে এ উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার বেশি আবাদ করেও লোকসানের আশঙ্কায় দিন কাঁটাচ্ছে করছেন পাট চাষিরা।
খোকসা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৪ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদে লক্ষমাত্রা ধরা হয়। কিন্ত প্রতি বছরের মত এবারও লক্ষামাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ৪০৬০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ করে কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রায় ২ হাজার ২৫০ জন কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে ৪ হাজার ১'শ হেক্টর সার বীজ সরবরাহ করা হয়। উপজেলায় প্রায় ৫৮,৯০০ বেল পাট উৎপাদনের টার্গেট করা হয়। এরই মাঝে কৃষকরা ৪০ শতাংশের বেশি পাট মাঠ থেকে কর্তন করেছে বলে জানা যায়।
সময় মত কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় উপজেলার প্রায় ৮ হাজার কৃষকেরা জমি থেকে পাট কাঁটতে পারছে না। ফলে জমিতেই পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছরে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় জমি থেকে পাট কেঁটে কৃষকরা জমিতে আবার ধান আবাদ করে কিন্তু তা এবার হচ্ছে না। এতে এ বছর শ্রাবনের মাঝামাঝিতে বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা পাট চাষ করে বেশ বিপাকে পড়েছেন। এ যেন কৃষকের উৎপাদিত পাট এখন গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর ও ডোবাতে পানি না থাকায় অনেক চাষী কাঁচা পাট যাক দেওয়া নিয়ে বিপাকে।
সাধারণত আষাঢ় শ্রাবণ মাসে বর্ষা মৌসুম হাওয়ায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দ্বিগুণ থেকে চারগুণ বৃদ্ধি হওয়ার কথা হলেও জলবায়ু পরিবর্তন ও সময়মত পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় স্থানীয় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এতে পাটচাষীদের মাথায়
জমিতে আবাদ করা পাট কাটচ্ছেন কৃষকেরা। ছবি: এইমাত্র
এ বিষয়ে কথা বলা হয় স্থানীয় কুমারখালী আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মামুনুর রহমানের সাথে তিনি এইমাত্রকে বলেন, জুলাই মাসে ২৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯০ শতাংশ ।
অন্যদিকে, কৃষক ষষ্ঠী চরণ বিশ্বাস ও শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, প্রচন্ড তাপদাহে কারণে পাটের আবাদও ভালো হয়নি এই মৌসুমে। আবার সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় পাট জাগ দেওয়ার জন্য জমি থেকেও পাট কাঁটতে পারছি না। পাট কাঁটলেও জাগ দেওয়ার কোন জায়গাও না থাকায় রাস্তার ধারে বা জমির কোলে ফেলে রাখা হয়েছে। আবার অনেকের জমিতেই পাটের পাতা ঝড়ে যাচ্ছেন। কোথাও আবার পোকার আক্রমন হয়েছে। বেশির ভাগ জমিতে পাটের মাঝখান থেকে শুকিয়ে লাল হয়ে যাচ্ছে।
এই বিষয়ে কথা হয় উপজেলার বিশিষ্ট পাট ব্যবসায়ী অজিত কুমার বিশ্বাসের সাথে তিনি এইমাত্রকে বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার পাটের মূল্য অনেক বেশি। এভাবে পাটের বাজার থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন। কিন্তু বর্তমানে ১ মণ পাট বাজারে ২ হাজার ৬'শ থেকে ৩ হাজার ২'শ টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে দেখা গেছে কাঙ্খিত বৃষ্টি ও পানি না থাকায় পাট (জাগ দেওয়া) পঁচানোর সমস্যায় পড়েছে কৃষকরা। এতে কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে বলেও জানান এই ব্যবসায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সবুজ কুমার সাহা বলেন, পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশ জমি থেকে পাট কাঁটা হয়েছে। আমাদের উপ কৃষি কর্মকর্তাগন কৃষকদের আধুনিক রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাটযাক ও পঁচানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। এবারে প্রতিবিঘা জমিতে ৯ থেকে ১০ মন হারে ফলন হচ্ছে। হাত পড়েছে।
১০৫ বার পড়া হয়েছে