স্মৃতি লিখন: কবি সৈয়দ আবদুস সাদিক
মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১:০৫ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
১৯৭৬ সনে কুমারখালী পাবলিক লাইব্রেরীতে কুমারখালী সাহিত্য পরিষদের কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান চলছিল। কুষ্টিয়া ও কুমারখালীর বেশ কয়েকজন কবি তাতে অংশ নেন। সে সময় এই জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোর সঞ্চালনার দায়িত্ব সাধারণত আমি পালন করতাম।
আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কুষ্টিয়ার কবিদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত সুকুমার দা এইসব ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন।
পাবলিক লাইব্রেরির তখনকার ক্ষুদ্র পাঠকক্ষের চেয়ার গুলো আমরা একদিকে গুছিয়ে রেখে অনুষ্ঠানের জায়গা করে নিতাম। পুরিসর ছোট হলেও এক মায়াময় পরিবেশ আমাদেরকে হৃদয়গ্রাহী করে তুলতো। সেই সব দিনের স্মৃতি কখনো ভুলবো না। কবি অশোক সাহা কে দিয়ে সাধারণত আমি উদ্বোধন করাতাম কবিতা পাঠ।
সেই সময় এই অনুষ্ঠান চলাকালে একজন আমাদের মাঝে ঢুকে বসলেন। আমি তাকে আগে থেকেই চিনতাম সেই ১৯৬৫ সন থেকে। দরগাবাড়ির নাতি ছেলে সৈয়দ আবদুস সাদিক। তখন খুলনায় থাকতেন। বললেন তিনি কবিতা পাঠ করবেন এবং করলেনও পরপর দুটো কবিতা।
আমাদের সেই সময়ে পঠিত কবিতাগুলোর উপর তুমুল আলোচনা হতো। দেওয়ান সাহেব এবং আমরা অনেকেই আলোচনা করতাম। সাদিক ভাইয়ের পঠিত কবিতার উপরে তাৎক্ষণিকভাবে আমি অনেকক্ষণ আলোচনা করি। আমার আলোচনায় উনি খুবই খুশি হন এবং বলেন তুমি যা বললে এগুলো আমাকে একটু লিখে পরে জানিও। সেই আমার প্রথম কবি সৈয়দ আবদুস সাদিকের সঙ্গে কাব্য যোগ স্থাপন।
আমার জানা ছিল উনার ছাত্র জীবন কেটেছে করাচি ও কুষ্টিয়াতে। খুলনার কবিতাঙ্গনে একসময় তিনি ছিলেন বিশিষ্ট একটি নাম। সৈয়দ সোহরাব আলী ও সৈয়দ আব্দুস সাদিক তখন খুলনার দুই জনপ্রিয় কবি।
সাদিক ভাইয়ের দিন রাতের বেশিরভাগ সময় সম্ভবত কবিতার চিন্তাতেই কাটতো। ফেসবুকে তার চেয়ে বেশি কবিতা খুব কম লোকই লিখেছেন। একজন প্রকৃত কবির সবসময়ই নিজের কবিতার প্রতি থাকে অসম্ভব রকম দুর্বলতা। উনারও ছিল। যেকোনো পরিবেশে কবিতা পড়তে তার কোন কার্পণ্য ছিল না। আমাদের দেশে কবিতায় কিছুটা নাম করলে কবিরা সাধারণত নিজেদেরকে বড় ভাবতে শুরু করে এবং সব জায়গাতে কবিতা পড়লে দাম কমে যাবে মনে করেন। সাদিক ভাই ছিলেন ব্যতিক্রমী। ফুটপাথ হোক কোন জলসা ঘরে হোক যে কোন স্থানেই তিনি কবিতা পাঠ করে মজা পেতেন। যাকে বলে নিবেদিত প্রাণ কবি।
কবির সঙ্গে আরও অনেকের মতো আমারও রয়েছে প্রচুর স্মৃতি। গত বছর কবিকে বাংলা একাডেমী পুরস্কার দেয়া যায় কিনা তা নিয়ে আমি কিছুটা এর ওর কাছে বলাবলি করেছিলাম ; অন্তর্গত তাগিদেই।
আজ কবি আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু কুষ্টিয়া কুমারখালীর কাব্য প্রিয় মহলে এখনো শোকের ছায়া বিদ্যমান। আমার সঙ্গে টেলিফোনে মাঝে মাঝেই আলাপ হত নানা বিষয়ে। আজকে কবির স্মরণে কি করা হবে তার একটি প্রস্তুতি সভা হয়েছে যা লিটন আব্বাস আমাকে জানিয়ে ছিলেন। যেটাই করা হোক শোক সন্তাপ নিয়ে দূরে থেকে হোক কাছে যেয়ে হোক আপনাদের সঙ্গে আমি আছি।
লেখক: কবি ও সাবেক সচিব
২০৩ বার পড়া হয়েছে