হাতি তাড়ানোর ‘সোলার ফেন্সিং’ আবার কেন?

সোমবার, ৩ জুন, ২০২৪ ৩:৩৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
শেরপুরের ঝিনাইগাতী সীমান্তে গারো পাহাড়ে হাতি তাড়ানোর ‘সোলার ফেন্সিং’ কোনো কাজে আসছে না। সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা ১১ কিলোমিটার ‘সোলার ফেন্সিং’ কেবল রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ৬ মাসের বেশি স্থায়ী হয়নি। এরপরও শ্রীবর্দী উপজেলার বালিজুড়ি রেঞ্জে ফের নির্মাণ করা হচ্ছে ৮ কিলোমিটার ‘সোলার ফেন্সিং’।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘সোলার ফেন্সিং’ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করে চলে যায়। তাই সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কিছুদিনের মধ্যেই অকেজো হয়ে পড়ে এগুলো।
তবে বন বিভাগ বলছে, ঝিনাইগাতীর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার নির্মাণ করা হচ্ছে ‘সোলার ফেন্সিং’।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ের তাওয়াকুচা রেঞ্জে ২০১৮ সালে সোয়া কোটি টাকায় নির্মাণ করা ১১ কিলোমিটার ‘সোলার ফেন্সিং’ প্রকল্প চালু হয়। ছয় মাসের মাথায় সেটি মুখ থুবড়ে পড়ে। তবে সৌরবিদ্যুৎচালিত ওই বৈদ্যুতিক বেড়ায় হাতি তাড়াতে প্রাথমিক সফলতা আসে।
সম্প্রতি শ্রীবর্দী উপজেলার বালিজুড়ি রেঞ্জের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে ৮ কিলোমিটার ‘সোলার ফেন্সিং’। এ এলাকায় ২৫ ফুট প্রস্থ, ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রথম দুই সারিতে তিন ফুট অন্তর লেবু, বেত ও লেবু গাছ; পরে ‘সোলার ফেন্সিং’ এবং আবারও দুই সারিতে লেবু, বেত ও লেবু গাছ লাগিয়ে ‘বায়ো ফেন্সিং’ তৈরির কথা থাকলেও বন বিভাগের রোপণ করা এ ফেন্সিংয়ের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ‘সোলার ফেন্সিং’ নির্মাণ শেষ করা এবং সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের দাবি স্থানীয়দের।
বালিজুড়ি এলাকার খ্রিষ্টরপাড়ার বাসিন্দা ইলিয়াস বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর হলো এ এলাকায় ‘সোলার ফেন্সিং’ তৈরির কাজ শুরু হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। এদিকে, প্রায় প্রতিদিন হাতি আমাদের ধানক্ষেতসহ বাড়িঘরে আক্রমণ করে ক্ষতি করছে।’ দ্রুত সময়ের মধ্যে এ ‘সোলার ফেন্সিংয়ের’ কাজ শেষ করার দাবি জানান তিনি।
বালিজুড়ি বাজারের সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় সব সময় হাতির উপদ্রব লেগেই থাকে। বিশেষ করে ধান পাকার মৌসুমে ক্ষেত রক্ষায় রাত জেগে পালাক্রমে পাহারা দিতে হয়। হাতি ক্ষেতে নামলে কয়েক গ্রামের সবাই মিলে মশাল জ্বালিয়ে, ঢাকঢোল পিটিয়ে, হইহুল্লোড় করে ওদের তাড়াতে হয়। অনেক সময় হাতির আক্রমণে অনেকে মারাও যায়। আর হাতির আক্রমণে আহত হয়ে পঙ্গু জীবনযাপন করছেন আমাদের গ্রামের অনেক মানুষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু ‘সোলার ফেন্সিং’ নির্মাণ করলেই হবে না, বছরজুড়ে এগুলো সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের লোকও রাখতে হবে। যাতে করে সামান্য ত্রুটি হলেই সারিয়ে তোলা যায়। তাহলে হয়তো এ প্রকল্প আমাদের জন্য কাজে আসবে।’
‘সোলার ফেন্সিং’ নির্মাণ কাজের ঠিকাদার প্রকৌশলী মো. আল আমিন সময় সংবাদকে বলেন, সোলার ফেন্সিংয়ের গতিপথ লোকালয় থেকে শুরু করে সীমান্তবর্তী গভীর অরণ্যে। এ কাজ করতে গিয়ে কয়েকবার হাতির আক্রমণে আমার সোলার ফেন্সিংয়ের নানা উপকরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর যেহেতু হাতি অধ্যুষিত ঘন জঙ্গলের পাহাড়ি এলাকা, তাই এখানে বছরের বেশির ভাগ সময় হাতির বিচরণ থাকে। যখন হাতির বিচরণ থাকে, তখন শ্রমিকদের নিয়ে ওই এলাকায় যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই প্রকল্পটি শেষ হতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে চলতি জুন মাসের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশা করি।’
ঝিনাইগাতীর ১১ কিলোমিটার যে সোলার ফেন্সিংটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে; সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ প্রকল্পের সব দুর্বলতা দূর করে হাতির আক্রমণ ঠেকানো যাবে -- এমনটাই বললেন ময়মনিসংহ বন বিভাগের বালিজুড়ি রেঞ্জের বন কর্মকর্তা সুমন মিয়া।
প্রকৌশলী মো. আল আমিন আরও বলেন, ‘ওই সোলার ফেন্সিংয়ের ১০ মিটার দূরে দূরে ১০ ফুট উচ্চতার লোহার খুঁটিতে তার বাঁধা রয়েছে। এতে ব্যাটারির মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ড পর পর বিদ্যুতের ঝটকা লাগে। ওই তার হাতির শরীরে লাগলে তারা সেখান থেকে ফিরে যায়। তবে এতে হাতির কোনো ক্ষতি হয় না।’
আট কিলোমিটার বায়ো-সোলার ফেন্সিংয়ের প্রতি ১০ মিটার পরপর ১০ ফুট উচ্চতার একটি করে খুঁটি রয়েছে। প্রত্যেক খুঁটিতে মোটা তারের চারটি সারিসহ তিনটি সুইচ রুম থাকবে। যার নির্মাণ ব্যয় হবে ৭৫ লাখ টাকার মতো।
১০৮ বার পড়া হয়েছে