সর্বশেষ

জাতীয়

ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডে বিএনপি হয়ে ফেরার চেষ্টা ফ্যাসিবাদীদের!

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা

বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:৪৪ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
বিদ্যুৎ সেক্টরের মডেল প্রতিষ্ঠান ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড ডেসকোয় আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থানের মাধ্যমে বিএনপি হয়ে ফেরার চেষ্টা করছে তাদের দোসর প্রেতাত্মারা। এরই অংশ হিসেবে বিএনপির সমর্থকের ব্যানার হাতে সাজানো মানববন্ধন করতে গিয়ে ডেসকো হেডঅফিসে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে তারা। এমনকি অফিসের ভেতর ঢুকে একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে ধরে এনে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পিটিয়েছে তারা। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও দুজন।

এদিকে, ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় মামলা হয়েছে তবে কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করতে ডেসকো কর্তৃপক্ষ নিরপেক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ঘটনায় ডেসকো হেড অফিসের অপ্রতুল নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিবর্ণ চিত্রও ফুটে উঠেছে।

বিগত ২০১৮ সালে সার্ভিস রুল লঙ্ঘনসহ গুরুতর বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে টি এম তাওহীদ, মোহাম্মদ আলী এবং মিজানুর রহমানসহ ৮ জনকে চাকুরীচ্যুত করে ডেসকো কর্তৃপক্ষ। তখন এরা সকলে ডেসকো শ্রমিক কর্মচারী লীগের সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন। তারা চাকুরীতে নিজেদের পূর্নবহালের দাবিতে একদল বহিরাগত গুন্ডাপান্ডা সাথে নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর (মঙ্গলবার) ডেসকো হেড অফিসের নীচে মানববন্ধন করতে যায়। এরই এক পর্যায়ে টি এম তাওহীদ, মোহাম্মদ আলী, এস এম আকবরি এবং মিজানুর রহমানের সরাসরি নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ম্যাটেরিয়াল প্ল্যানিং অ্যান্ড স্টোর বিভাগে প্রবেশ করে।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানের কক্ষে প্রবেশ করে উপযুপরি পেটাতে থাকে এবং বলতে থাকে, একে আজ প্রাণেই মেরে ফেলতে হবে। বেধড়ক পিটুনিতে প্রকৌশলী মোস্তাফিজ আধা সজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তাকে তুলে নিয়ে আসায় হয় হেড অফিসের নীচের রাস্তায়। সিসিটিভির ফুটেজ ও ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, সেসময় ১০/১৫ জন সন্ত্রাসী গোলাকার হয়ে প্রকৌশলী মোস্তাফিজকে পায়ের নীচে ফেলে এলোপাথাড়ী কিল-ঘুষি এবং লাথি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারান তিনি। এ সময় তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন ডিজিএম অ্যাডমিন সাজেদুল করিম ও পিওন পারভেজ। ঘটনার সময় হামলাকারীদের কয়েকটা চড়থাপ্পর খেয়ে রিসিপশনের সিকিউরিটি গার্ডরা ছিলো দর্শক। কিছুক্ষণ পর আয়োজিত মানববন্ধনের নামে আওয়ামী পস্থীরা হামলা কান্ড শেষ করে নিরাপদেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

এদিকে, এ ঘটনাটি নবাগত ব্যবস্থাপনা পরিচালক তথা পুরো প্রতিষ্ঠানের ওপরেই হামলা বলে মনে করছেন ডেসকো'র বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

অন্যদিকে, এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে ডেসকোতে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কর্মস্থলে নিরাপদ কর্মপরিবেশের দাবি করেন তারা। এদিকে, ঘটনার সময় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) শামীম আহমেদ দাপ্তরিক কাজে বিভিন্ন ডিভিশন পরিদর্শনরত ছিলেন। তিনি এ ঘটনার তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বলেন, দোষী কাউকে এক চুলও ছাড় দেয়া হবে না। ঘটনা তদন্তে প্রধান প্রকৌশলী রশিদুর রহমানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর যথাযথ এবং কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অন্যদিকে, ডেপুটি ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় ডেসকোর পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশও তদন্ত শুরু করেছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এখানে সর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে। মামলার বাদী ডেপুটি ম্যানেজার রফিকুল নিজেই হামলায় নেতৃত্বদানকারী ডেসকো শ্রমিক কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক টি এম তাওহীদের খালু এবং ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) শরিফুল ইসলামের ভাগ্নে। অভিযোগ উঠেছে এই প্রভাবশালী আত্মীয়দের পরোক্ষ ইন্ধনেই তাওহীদ সরাসরি শীর্ষ নেতৃত্বে থেকে হামলা এবং বিএনপি'র ব্যানার ব্যবহার করে মানববন্ধন পরিকল্পনার এই ধৃষ্টতা দেখিয়েছে।

এছাড়া হামলার ঘটনার নেপথ্যে ম্যাটেরিয়াল প্ল্যানিং অ্যান্ড স্টোর ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজিমুল আরেফিন খান, সহকারী প্রকৌশলী এ কে এম মোজাম্মেল ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলেরসহ কয়েকজন কুচক্রী নেতাকর্মী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে বলেও অভিযোগ। ফলে মামলার ভবিষ্যৎ নিয়েই এখন সন্দিহান হয়ে পড়েছেন সচেতন মহল। এই চক্রটি বিগত কয়েকমাস ডেসকোয় বিভিন্নভাবে চরম অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খল কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।

ডেসকো অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের দেওয়া তথ্যমতে- আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন সময়ে চাকুরীচ্যুতদের মধ্যে ডেসকো শ্রমিক লীগের বিতর্কিত কয়েকজন কর্মচারীর নেতৃত্বে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর ও বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী/দুর্বৃত্ত পরিকল্পিতভাবে বিএনপি'র পক্ষে স্লোগান দিয়ে ন্যক্কারজনক হামলা চালায়। সেখানে একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর উপর নজিরবিহীন সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। যা ডেসকো’র ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করেছে। একই সাথে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র নামে স্লোগান দিয়ে এমন ন্যক্কারজনক কাজ করে দলের ভাবমূর্তিও চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।

যা সারাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের পরিকল্পিত কর্মসূচিরই অংশ। ডেসকো অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে উক্ত ঘটনা সঠিক তদন্তপূর্বক এমন ঘৃণ্য হামলার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনানুগ কঠিন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানানো হয়েছে।

যুগ্মসচিব ও ডেসকো'র নবনিযুক্ত নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) মো: তোফাজ্জল হোসেন হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিষ্ঠান ও কর্মরত কর্মীদের ওপর হামলাকারীদের কোন ছাড় নয় উল্লেখ করে বলেন, এদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে।

অন্যদিকে, ডেসকো গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান চীফ ইঞ্জিনিয়ার রশিদুর রহমানের সাথে কথা বলতে তার মুঠোফোন নম্বরে বারবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

২১০ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(1)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন