সর্বশেষ

জাতীয়

প্রিয় কবি সৈয়দ আবদুস সাদিককে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে স্মৃতিচারণ

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪ ১০:০৮ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
কবি সৈয়দ আবদুস সাদিককে নিয়ে খুলনা বিভাগসহ সারাদেশের কবি ও লেখিয়েরা স্মৃতিচারণ অব্যাহত রেখেছেন। প্রিয় কবিকে হারিয়ে সবাই নানাভাবে শোক প্রকাশসহ স্মৃতিচারণ করছেন। তাঁকে হারানোর ক্ষতি যেন কোনোভাবেই পূরণীয় নয়, এমনই সবাই মন্তব্য করছেন।

নীল কমল লিখেছেন, কবিতার প্রতি কবি সৈয়দ আবদুস সাদিকের ছিলো অসম্ভব টান। ফেসবুকে কবিতা পোস্ট করার পরে যদি দীর্ঘক্ষণ না দেখতাম তবে নিজেই ফোন দিয়ে বলতেন, " কবিতা পোস্ট করেছি, পড়ে মন্তব্য করেন। আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকি।" এতো বড় মাপের একজন কবি আমার মতো তুচ্ছ মানুষের মন্তব্যের আশায় থাকতেন। একথা মনে করে আমার বুকটা ভরে যায়। যদি বলতাম অফিসের, সংসারের কাজের ভীড়ে আপনার পোস্ট দেয়া কবিতা পড়া হয়নি। বলতেন," কবিদের এতো কাজ করতে হয় না যে তারা সময়ের অভাবে কবিতা পড়তে পারবে না। কোন কোন মন্তব্য দেখে বলতেন, "খুব সুন্দর লিখেছেন। এটা দিয়েই একটা কবিতা লিখে ফেলেন।" এভাবে যে কতো কবিতা আমাকে দিয়ে লিখিয়েছেন। কবিতায় কোন ভুল হলে সরাসরি বলতেন না। উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। বলতেন "কবির লেখায় কোন ভুল হয় না। মাঝে মাঝে যেটা দরকার সেটা হচ্ছে নেতিবাচক কথা এড়িয়ে চলা।" ঘন্টার পর ঘন্টা কবিতা নিয়ে আলোচনা করতেন। সেখানে তার এতোটুকুও কার্পণ্য ছিলো না।

নাসিমা খান লিখেছেন, সাদিক ভাইয়ের স্নেহ ধন্য আমি। খুলনার আমিই মনে হয় একমাত্র ব্যক্তি যাকে নিজের বই দেবার জন্য তার বাসায় এসেছিলেন। ঘন্টার পর ঘন্টা উনার কবিতা পড়তাম আমি মোবাইলে আর উনি উনার টাকা পুড়িয়ে আমার পাঠ শুনতেন। আমার নতুন লেখা হলেই শুনতে চাইতেন। উনার চোখের অপারেশন তেমন সাকসেসফুল হয়নি তখন । তাই আমাকে উনার কবিতা পড়তে বলতেন। কবি ও লেখক প্রফেসর রাকিবুল হাসান আর উনার বাড়ি কাছাকাছি এবং সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ একদিন কথায় কথায় জানতে পারি। সাদিক ভাইয়ের জনপ্রিয়তা বিজ্ঞজনের কাছে অনেক উঁচুতে রয়েছে। রাকিবুল স্যার একদিন বললেন উনার পরম শ্রদ্ধাভাজন তিনি। সাদিক ভাই-ই একদিন আবু বক্কার স্যারের সাথে আমার পরিচয় করে দিলেন। তারপর আবু বক্কার স্যারের সাথে প্রায় আড্ডা দিতাম খুলনা কেসিসি মার্কেটের সামনে চায়ের দোকানে। সাথে পিঁয়াজু যা আবু বক্কার স্যারের খাওয়া একদম নিষেধ ছিল। শেষের দিকে কুমারখালিতে তখন সাদিক ভাই বেশি থাকতেন। যখনই খুলনাতে আসতেন সাদিক ভাই ফোন দিতেন। বলতেন ইয়াং লেডি, চলে এসো পিঁয়াজু খাব। আমি আবু বক্কার স্যার আর সাদিক ভাই ফাঁকা রাস্তার পাশে ফুটপাতের বেঞ্চে বসে পিঁয়াজু খেতাম। চুরি করে খেতেন দুই বৃদ্ধ। আবু বক্কার স্যার তখন রিকশায় ঠিক করে উঠতে পারতেন না। অনেক খাবার নিষিদ্ধ ছিল কিন্তু এই দুইজন মানুষ আমার সাথে পিঁয়াজু খেতেন। চিনি চা খেতেন। আর আমার নতুন কবিতা শুনতে চাইতেন। আমি সত্যিই দুজন মানুষের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমার মতো সামান্য একজন মানুষ উনাদের দুজনের কাছে খুব পছন্দের ছিলাম।

 

কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাস লিখেছেন, ১৪ অক্টোবর সকালপর শেষভাগের আড্ডার ছবি। কবি এইদিনই বিকাল চারটে/সাড়ে চারটার দিকে বুকে ব্যথা নিয়ে কুমারখালী হসপিটালে ভর্তি হয়ে ফোন করে বলেছিলেন, লিটন আমি হসপিটালে অসুস্থ।

এই ছবির আদৎ দেখে মনে হচ্ছে বহুব্যথা তার বুকের থেকেও অন্তরে অধিক। এটাই শেষ ছবি; সিদ্দিক, তোমার মতো আমারি অধিক স্মৃতি, কবির ভেতর, বাহির, গোপন, প্রকাশ্য, তাঁর সমগ্র জীবনের বয়ানই বলতে গেলে শুনেছি। পুরোটা বলতে গেলে বৃহৎ খণ্ড হয়ে যাবে। তর্কাতর্কি, দ্বিমত পোষণের আচরণে কবি কখনও কখনও কষ্ট পেতেন, ঘুরেফিরে আবার আসতেন, এইসব নৈমিত্তিক ছিল। তাঁর প্রতি মন্দ আচরণের বিষয়গুলো গত দুইদুন ধরে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে।

কখনই ভাবিনি এই অসুস্থতায় তাঁর প্রস্থান হবে। এরকম অসুস্থ বহুবার হয়েছেন, ২/১দিন হসপিটাল করে আবার বাড়ি ফিরেছে; আমাদের কাছেই সামিয়ানা হয়ে ফিরেছেন । কিন্তু এবার আর হসপিটাল থেকে তবুও ব হলো না। কোনদিন ফিরবেন না।


সাবেক সচিব ও কবি কাজী আখতার হোসেন লিখেছেন, যখন তিনি ঢাকায় থাকতেন প্রায়ই আমার তখনকার খিলগাঁওয়ের বাসায় আসতেন। সে সময় তিনি আলাউদ্দিন ভাইয়ের উপরে একটি গ্রন্থ লিখছিলেন। একদিন আমাকে বললেন, যেদিন তিনি গ্রাজুয়েট হলেন উনার পিতা উনাকে ডেকে নিয়ে বললেন : তোমাকে গ্রাজুয়েট বানিয়েছি এখন পৃথিবীর পথে তোমাকে ছেড়ে দিলাম। তোমার পৃথিবী তুমি বেছে নাও।


কবি সোহেল আমিন বাবু লিখেছেন, মানুষ মরণশীল মানতে হবে কবি। এখন শুধু দোয়া করতে হবে তাঁর জন্যে। আল্লাহ কবিকে বেহেস্তবাসী করুন। আমিন।


জয় সিনহা লিখেছেন, সত্যিই তার লেখার মধ্যে আলাদা একটা গুন ছিল। আর আসবে না ফিরে। ওপারের এখন বাসিন্দা। ভালো থাকবেন এই কামনা।

 

রুমি হাসান লিখেছেন, এগুলো স্মৃতি এখন। অনেক স্মৃতি আছে কবির সাথে। আমার দেখা তিনি শিশুসুলভ আচরণ করতেন। এটাই হয়তো কবিদের স্বভাব। তিনি দীর্ঘ হায়াত পেয়েছেন এবং মৃত্যুর আগ মূহুর্ত সময় পর্যন্ত কাজে যুক্ত থাকতেন। আমি তাঁর কর্মজীবনের ও সাথী হিসেবে সাথে ছিলেন তাদের কাছে অনুরোধ করছি সবাই এই কবিকে অন্তর থেকে ক্ষমা করবেন- ইনশাল্লাহ। আল্লাহ মেহেরবানি করে তাঁর সমস্ত প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত ত্রুটি ক্ষমা করুন। আমিন। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সকল সদস্যকে ধৈর্য্য ধারণ করার তৌফিক দান করুন।

 

কবি সিদ্দিক প্রামানিক লিখেছেন, সাদিক মামার সাথে একযুগেরও অধিককাল মিশেছি, আড্ডা দিয়েছি-সকাল, সন্ধ্যায়-নিয়ম করে। ঝড়-বৃষ্টির তোয়াক্কা করি নাই। স্মৃতিকথা যদি লিখি-একটা বাইবেল হয়ে যেতে পারে। সাদিক মামার সমস্যা-সংকট, কাব্যভাবনা, রাজনৈতিক দর্শন থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত- এমন কোন বিষয় নাই, যা আমার অজানা। এর চেয়ে বড় কথা-তাঁর কবিতাসমগ্র তিনখন্ডতেই কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন-আমার প্রতি-এটা অনেক বড় পাওয়া।

১২২ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন