স্মৃতি লিখন: কবি আবদুস সাদিক
সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ৩:৫০ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
প্রেম আর দ্রোহ যদি তোমার ভেতর থাকে তাহলে তুমিই খাঁটি মানুষ। এর সাথে তোমার থাকতে হবে প্রবল ইচ্ছা শক্তি, তাহলে তুমিই কবি, লেখক বা শব্দের শ্রষ্ঠা, নির্ভেজাল সাহিত্যিক। সাহিত্যচর্চা বাতিকও বটে! সাহিত্যমনা মানুষ খারাপ হতে পারেনা।
সাহিত্য অমর করে লেখককে। বহু রাজা মহারাজা গত হয়ে গেছে, তাদের কেউ স্মরনে রাখেনি। অথচ দুঃখ কষ্টে জীবন কাটানো লিখিয়েদের আমরা এখনো স্মরণ করি। যুগ যুগ নয়, শতাব্দীর পর শতাব্দী কবি সাহিত্যিকরা বেঁচে থাকে। আমিও একদিন চলে যাব, তোমরা ভুলে যাবে এক সময়। তবে আমার এই কবিতা সমগ্র সামনে এলে আমাকে স্মরণ করতেই হবে। তখনই আমার সার্থকতা"।
কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে চা এর কাপে চুমুক দিলেন সদ্য প্রয়াত কবি সৈয়দ আব্দুস সাদিক। কয়েক বছর আগে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার টেবিলে বসে কথাগুলো বলেছিলেন। তিনি তার কবিতা সংকলন বইটি ইউএনও মহোদয়কে দেওয়ার জন্য গেলে সেখানেই এই দৃশ্যের অবতারণা হয়। চা পানের ফাঁকে অনেক কথা হলেও "আমাকে স্মরণ করতেই হবে" কথাগুলো এখন বাস্তব সত্য। তাই তো! তাকে স্মরণ করছিই আমরা! পালাতে পারছিনা,পারবো না।
অন্য একদিন ইসলামী ব্যাংকে দেখা। ম্যানেজারের রুমে আমি চেয়ার ছেড়ে দিয়ে কবিকে বসতে দিলাম। তিনি বললেন"বুড়োকে আবার এত সম্মান দেখাতে হবে কেন? আজকাল তো এসব উঠেই গেছে।"
আমি বললাম "সম্মান দিলে নাকি সম্মান পাওয়া যায় তাই---"
তিনি শুধু চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে বললেন-" ঋনী করলি তাই না"?
আমি আর কথা বাড়ালাম না। ধন্যবাদ দিয়ে ব্যাংকের কাজ করতে ব্যস্ত হলাম।
এর কিছুদিন পরে কুমারখালী পাবলিক লাইব্রেরীতে কবিতা পাঠের আড্ডায় হাজির হলাম। স্বরচিত লেখা পাঠ চলছে। এর মাঝে চা বিস্কুট হাজির। উপস্থিত লেখকদের সবার সামনে চা বিস্কুট। আমি পেলাম না। কাপ শেষ। শুধু বিস্কুট নিয়ে ইতস্তত নাড়াচাড়া করছি। এমন সময় কবি সৈয়দ আব্দুস সাদিক তার চা এর কাপটি আমাকে দিতে দিতে বললেন-"ব্যাংকের ঋণ শোধ করলাম, কোন কথা নয়। এখন চা বিস্কুক আর কবিতা হবে "।
আমি আর কোন কথা না বলে বিস্কুট ডুবিয়ে দিলাম চায়ের মধ্যে। অনেকের মতই শব্দ করে দিলাম চুমুক। ওদিকে সিদ্দিক প্রামানিক অথবা মেহেদী হাসান লেখা পাঠ করছিল তখন। কবির আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ তার গোনাহ মাফ করে জান্নাতী করুন এটাই কামনা।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
১৯৬ বার পড়া হয়েছে