সর্বজন শ্রদ্ধেয় কবি সৈয়দ আবদুস সাদিককে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্মরণ

রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪ ৩:০৬ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
সর্বজন শ্রদ্ধেয় কবি সৈয়দ আবদুস সাদিককে হারিয়ে হাহাকার চলছে কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। প্রিয় কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন গ্রুপ সোস্যাল মিডিয়ায় নানা মন্তব্য লিখেছেন তার সতীর্থজনরা।
কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাস লিখেছেন, কবির প্রস্থানে কুষ্টিয়ার সাহিত্যের সৌন্দর্য ও তৃষ্ণা এবং শূন্যতার শুরু হয়ে গেলো!
কবির শোক সংবাদটা লিখতে হবে! ভাবতেই পারিনি!!
শূন্য হয়ে গেলো কুমারখালীর সাহিত্যের সৌন্দর্য, শুরু হয়ে গেলো আমাদের সাহিত্যের ভ্যালন্যারেবেলেটি!
আমাদের অনেকের প্রিয়জন বিশিষ্ট কবি সৈয়দ আবদুস সাদিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা সিএমএইচ-এ আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টার সময় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মরহুমের নামাজে জানাজা শেষে তাঁকে আগামীকাল বাদ ফজর ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে!
সাংবাদিক হাবীব চৌহান লিখেছেন, কবি সাদিক কুমারখালীর সাহিত্য জগতটাকে মাতিয়ে রাখতেন। তাঁর রচনা সামগ্রী নিয়ে অহংকার করা যেতো।আমাদেরও কবি সাদিক আছে। এসো সাহিত্য আসর করি। আড্ডা করি, আলোচনা করি। কিন্তু এখন আর্জেন্টিনা দলে ম্যাসি না থাকলে সমর্থকদে মানসিক অবস্থা যা হয়, এখন আমরাও তেমনি হয়ে গেলাম। আমার তো প্রতিদিন ভোরে হাঁটতে গিয়ে দেখতে হবে শূণ্য বাড়ি --
সাবেক সচিব ও কবি কাজী আখতার হোসেন লিখেছেন, বিশিষ্ট কবি সৈয়দ আবদুস সাদিক(৮২) আজ সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সি এম এইচএ ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। চাকরি উপলক্ষে কবি ঢাকা ও খুলনায় দীর্ঘদিন বসবাস করলেও শেষের বছরগুলোতে কুমারখালীতেই বাস করছিলেন।বাড়ির নাম দিয়েছিলেন ' তবুও বসবাস '। তিনি জাতীয় কবিতা পরিষদের এক সময়ে কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। কবিতায় পুরোপুরিভাবে এরকম নিবেদিত মানুষ আমি কমই দেখেছি। কুমারখালীতে তিনি সাহিত্য অঙ্গনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।কয়েক খন্ডে তার নির্বাচিত কবিতা সমগ্র সহ বহু সংখ্যক প্রকাশিত বই রয়েছে।
কবিকে আমি প্রথম দেখি ১৯৬৫ সনে যখন আমি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ।তার সঙ্গে আমার আত্মীয়তারও সম্পর্ক ছিল। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ আমলে কুমারখালীর সিংহ পুরুষ বলে খ্যাত মরহুম কাজী গোলাম রসুল রতি মিয়ার দৌহিত্র।
কয়েকদিন আগে তিনি অসুস্থ হয়ে প্রথমে কুমারখালী ও কুষ্টিয়াতে ভর্তি হন হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং আজ সন্ধ্যায় ইন্তেকাল করেছেন। কুমারখালীর কবি ও সংস্কৃতি কর্মী লিটন আব্বাসের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। জেনেছি আগামীকাল ভোরে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
দোয়া করি মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে জান্নাত নসিব করুন। উনার জীবন ও কবি কৃতিত্বের উপর পরে লেখার ইচ্ছে রইল।
কবি ও গবেষক মীর মুর্ত্তজা আলী বাবু লিখেছেন, সাদিক ভাইও চলে গেলেন। আমাদের অগ্রজ কবি, তরুণ বেলায় 'রুবাইয়াত ই সাদিক' পড়ে যাঁকে চিনেছিলাম, বড় বেলায় বড় ভাই ও পরামর্শক হিসেবে যাঁর সঙ্গ পেয়েছি, স্নেহ ও ভালোবাসায় যিনি আমাদের আগলে রাখতেন সেই কবি ও সংগঠক সৈয়দ আব্দুস সাদিক আজ না ফেরার দেশে চলে গেলেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
'তবুও বসবাস' এ ভাবির হাতের চা ছিলো সাদিক ভাইয়ের বাসায় গেলে বাড়তি পাওয়া। সাদিক ভাইয়ের সঙ্গে আমার সখ্যতা ছিলো নানা ভাবে। তিনি ছিলেন আমার মেজ ভাই এডভোকেট মীর আরশেদ আলীর বন্ধু, তাঁর ছোট বোন রাখি আমার মিসেসের ছোট বেলার বান্ধবী আর সর্বোপরি তিনি তো বন্ধুর মতোই বড়ভাই।
সাদিক ভাইয়ের মৃত্যুতে আমি প্রিয় স্বজন হারানোর শোকে মুহ্যমান। মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতবাসী করুন এবং তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারকে এ শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি প্রদান করুন। আমিন
কথা সাহিত্যিক রকিবুল হাসান লিখেছেন, খুবই বেদনার। খুবই কষ্টের। অমন আপন করে ক’জন কাছে ডাকতে পারেন! অমন করে ক’জন নিজের এলাকার মানুষের সঙ্গে মিশে থাকতে পারেন! অনেক আগে বলেছিলাম, কবি সৈয়দ আবদুস সাদিক যখন মারা যাবেন, তখন তাঁর নাম কুমারখালীতে রবীন্দ্রনাথ লালন মীর মশাররফের সঙ্গে উচ্চারিত হবে।বেঁচে থাকতে আমরা অনেকেই অনেকের মূল্য বুঝি না, বা দিই না। কুমারখালীর কবি-সাহিত্যিকেরা কবি সৈয়দ আবদুস সাদিককে যেভাবে মধ্যমণি করে রেখেছিলেন, সেটাই বা ক’জন কবির ভাগ্যে নিজের এলাকায় জোটে। এদিক থেকে তিনি সৌভাগ্যবান ছিলেন, মানতেই হবে। কুমারখালী কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছে। তবে, এখন কবি সৈয়দ আবদুস সাদিক আমাদের ইতিহাস, তাঁর সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে পরম ভালোবাসায়, পরম শ্রদ্ধায়।
কবি ও ছড়াকার মুজিব আলম লিখেছেন, আমরা তাঁর কাছে অনেক ঋণে আবদ্ধ আছি, স্নেহ, ভালোবাসার ঋণ। বন্ধুসুলভ সাহিত্য বিষয়ক সঙ্গ , কবিতা কিষয়ক নির্মোহ আলোচনা, পরামর্শ , উৎসাহ, কবি সৈয়দ আবদুস সাদিক কুমারখালীতে কবি ও কবিতার চাষ করে গেছেন। তার হাত ধরে অনেক কবি তাদের কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের সাহস ও সুযোগ পেয়েছে, পেয়েছে কবি পরিচয়। অনেক আলোচনা আছে, যার সব কিছু লিখে প্রকাশ করা যায়না, শেস বয়সে এসে তার শিশুসুলভ সারল্য এমনকি তার হঠাৎ রেগে যাওয়া, মান-অভিমান এসব কিছুরই আমরা প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। তার আত্মার শান্তি কামনা। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা।
কবি গুলশান চৌধুরী লিখেছেন, অনেক কথা মনে পড়ছে। আমরা একসাথে বিভিন্ন গ্রুপে আড্ডা দিতাম। কতো কবিতা তখন লিখতাম উনি ঠিক করে দিতেন। দেখা হলে শেখাতেন।
মানুষ সবসময়ই আনন্দে থাকতে চায়। গত তিন টা বছর উনার সংগে গ্রুপে আমরা অনেকেই নানা মজা করেছি। সময়টা ছিলো দারুণ উৎসব মূখর। আমি কবিতা লিখলেই উৎসাহ দিতেন। আমি আনন্দে আরও লিখতাম।
হঠাৎ কিছুদিন চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন। আমি ও ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। তিনি যে অসুস্থ জানতাম না। জানলে একবারের জন্য হলেও পাশে যেয়ে বসতাম।
মানুষের নিজের সংসার জীবনের বাইরেও একটা জীবন থাকে। সেই জীবনে মানুষ একটু আনন্দ, একটু হাসি খুশি, একটু বিনোদন চায়। সেখানে চাওয়া পাওয়ার তেমন কিছু থাকে না। একটু মন ভালো করা কথা হলেই যথেষ্ট। আবার একসময় তা. হারিয়ে ও যায়। কবি সাদিক গত কয়েকটা বছর আমাদের সাথে বেশ আনন্দ করছেন। কিছুদিন কোনো খোঁজ নিতে পারি নাই। এমনই হয় সবাইকেই এভাবে কাউকে না জানিয়ে চলে যেতে হয়। খুব খারাপ লাগছে। আল্লাহ সুবহানা তায়ালা উনাকে মাফ করে দিন। রহম করুন । আমিন।
সাংবাদিক কে এম আর শাহীন লিখেছেন, কবি সৈয়দ আব্দুস সাদিক (আমার ফুফাতো ভাই) একজন বিনয়ী মানুষ, একজন বিশ্বাসযোগ্য মানুষ, একজন আপাদমস্তক ভদ্রলোক, একটা জ্ঞানের গুদাম, সদা প্রাণবন্ত হাস্যোজ্জ্বল মুখ, একটা নিরহংকারী নাম।
এই নির্লোভ মানুষটি গতকাল ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
আজ ভোরে আজিমপুর কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
তাঁর একমাত্র জামাতা বিমান বাহিনী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের জন্য সকলের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং যদি কাহারও নিকট ঋণ থাকে তাহলে- আমার মাধ্যমে জানানোর জন্য অনুরোধ করেছেন।
আমি অনুরোধ করছি যদি কেউ সাদিক ভাইয়ের কাছে টাকা পয়সা পেয়ে থাকেন তাহলে আমাকে জানাবেন প্লিজ।
ভাইয়ের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া চাইছি।
সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম লিখেছেন, জীবন মানেই তুঁতফল/ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শক্তিমান কবি সৈয়দ আবদুস সাদিকের কবিতার একটি পঙতি!
তুঁতফলের তেমন কদর না থাকলেও এটির পাতায় তৈরি হয় রেশমি সুতা! কবি সাদিক তেমনি তুঁতফলের মতোই চলে গেলেন অনন্তকালের দেশে! রেখে গেছেন তার অনবদ্য সৃষ্টি কবিতা নামের রেশমি সুতা!
আসলেই জীবন মানেই তুঁতফল! ওপারে ভালো থাকবেন কবি আবদুস সাদিক!
লিখিয়ে বিধান সি. রায় লিখেছেন, অত্যন্ত বেদনার সংবাদ, কুষ্টিয়া হাসপাতালে যখন ছিলেন তখনও যোগাযোগ হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁর সঙ্গে, তাঁর পরিবারের সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি। সঙ্গী ছিল দুই কবি শেক আকতার ও আবু সাঈদ। ভাবিনি আর দেখা হবে না।
মো. আসাদ লিখেছেন, কবির বিদেহী আত্মার পরম শান্তি কামনা করছি। গত ১৬ ই আগস্ট ২০২৪ কুমারখালীতে এক কবিতার আড্ডায় শেষ দেখা হয়েছিল। ভুলতে পারবো না।
কবি নিবেদীতা সরকার লিখেছেন, এই দুঃসংবাদটি মেনে নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি।
মো. মানিক লিখেছেন, আল্লাহ সুবহানা তায়ালা তাকে জান্নাতের উচ্চতম মাকাম দান করুন। আমিন
২৩৮ বার পড়া হয়েছে