স্মৃতি লিখন: কবি আবদুস সাদিকের আড্ডার চেয়ার
রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪ ৩:১৭ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
সবই পড়ে আছে যথারীতি। নিয়মে, অনিয়মে যেমন চলেছে আমাদের সময়, সমাজ, আত্মীয় পরিজন, বন্ধু-বান্ধবসঙ্গ, আড্ডা; সকল সংকীর্তি চলমান।
এই চেয়ারটায় নিয়মিত বসতেন, এরচে ভালো গদিওলা চেয়ার থাকলেও কেউ কোনদিন শত চেষ্টা করেও সেখানে বসাতে পারত না। এটাই তাঁর পচ্ছন্দের জায়গা ছিল। এসেই বসে লাইটার বক্সে হাত এবং সেটা জ্বালিয়ে শলাজায় আগুন ধরিয়ে ধোঁয়া উড়ানোর সাথে সাহিত্য, সংসার, বিবিধ জীবনচরিত, ইতিহাস- ঐতিহ্য- সংস্কৃতি এবং চলমান জীবন ব্যবস্থার গলদঘর্ম অবস্থা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ, পরিস্থিতি, রাজনীতি, অর্থনীতি সহ বিবিধ বিষয়ের আলোচনা, তর্ক, বিতর্ক, আড্ডা চলতো নিত্যই। হতাশা, নৈরাশ্যের কবিতাগুলোর ওপর জোর আলোকপাত করতেন, শক্তপোক্ত ভাব ও ভাষার জোরালো উচ্চারণ ছিল তার নৈমিত্তিক কবিতায়। গাণিতিক সূত্রাবলীর সমস্যা, সংকট নিয়ে হাজারো আক্ষেপ ছিল তাঁর। তবুও আশাহত না হয়ে আমরা কোনদিন ঐক্যমতে, কখনো অনৈক্যের চোরাবালি থেকে না উঠেই আলোচনার সমাপ্তি টেনে চলে যেতেন "তবুও বসবাস'য়ে।
টারবো কম্পিউটার প্রতিষ্ঠানের এই চেয়ারে বসে ১৪ অক্টোবর বিকেলে অসুস্থ হওয়ার দুদিন আগে এসে বসে টেবিলের তাক থেকে একটি বই টান মেরে তুলে বলেছিলেন, কী করেছো বইয়ের, ময়লা, ধুলোপড়া। একটা বাক্স থেকে ব্যাগ বের করে মুছতে শুরু করলেন। তারপর পড়তে শুরু করলেন ' রুবাইয়াতে দুলারী' গ্রন্থ থেকে কয়েকটি রুবাই। পাঠ শেষে বললেন, দামী বই যত্ন করে রেখো, আর সময় পেলে পড়ো---কাজে দেবে। পরদিন বইটি টেবিলে দেখে ক্যাশ ড্রয়ারে রেখে দিলাম হঠাৎ করেই। মাঝেমধ্যে এদিক-ওদিক তাকিয়ে টেবিলের তাকে নজর দিতেন, তাঁর বই কোথায় আছে। সূক্ষ্ম চোখে টেনে বের করতেন কখনো তাঁর কবিতা সমগ্র, কিংবা অন্য কোন কবিতার বই। বের করে দু'চারটি কবিতা পাঠ করে আবার যত্নে রেখে দিতে বলতেন। তাঁর কবিতা সমগ্র দ্বিতীয় খণ্ডের ফ্ল্যাপ আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেন, যা ২০২১ সালে প্রকাশিত। সমগ্রের তৃতীয় খণ্ডও বের হয়েছে, চতুর্থ খণ্ডও বের হতো বেঁচে থাকলে! এই মহতি মানুষের উপদেশ, পরামর্শ এবং জ্ঞানগর্ভ বিদ্যার কতটুকু ধারণ করেছি জানি না।
শুধুই আক্ষেপ শেষ দেখা, শেষ কথা এবং তাঁর সাথে কখনো তর্কাতর্কির সাথে খারাপ আচরণ করেছি, যা রীতিমতো নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। ক্ষমা চাইতেও পারলাম না। এমন কীর্তিবান, বিদ্যান, প্রজ্ঞাময়ী প্রতিভবান মানুষ কুষ্টিয়ার সাহিত্যে বিরল। তাঁর কাজ মনে রাখবে মানুষ। তিনি কতো মানুষের কাছে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, যা তাঁর প্রয়াণে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি শুধু কুষ্টিয়া নন, খুলনা, যশোর, ঢাকার অনেক কবিদের অভিভাবক ছিলেন।
মহান রবের কাছে প্রার্থনা তাই, সৈয়দ আবদুস সাদিক মুকুল ভাইকে যেনো জান্নাতবাসী করেন। আমীন।
৩০৮ বার পড়া হয়েছে