সর্বশেষ

মতামত

মামদানী ও সোরাইয়ার বিজয়: দক্ষিণপন্থার বিরুদ্ধে ইতিবাচক প্রতীকী প্রতিরোধ

মাসুদুল হাসান রনি
মাসুদুল হাসান রনি

বৃহস্পতিবার , ৬ নভেম্বর, ২০২৫ ৮:০০ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
জোহরান কোয়ামে মামদানী আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হলেন। অন্যদিকে মাত্র দু'দিন আগে অনুষ্ঠিত কানাডার মন্ট্রিয়েল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সোরাইয়া মারিসেল মার্টিনেজ ফেরাদে। দু'জনের একটি জায়গায় মিল রয়েছে। এরা দু'জনেই অভিবাসী।

আমেরিকার নিউইয়র্কের ও কানাডার মন্ট্রিয়েলের ইতিহাসে এই প্রথম দু'জন অভিবাসী মেয়রের চেয়ার অলংকৃত করছেন। দুই শহরের দুই মেয়র কেউ আমেরিকা ও কানাডায় জন্মগ্রহণ করেননি। মামদানীর জন্ম উগান্ডার ক্যাম্পবেলায় এবং সোরায়ার জন্ম চিলির সান্তিয়াগো।

বৃহৎ দু'টি দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরের সিটি মেয়র পদে অভিবাসীদের নির্বাচিত হওয়া অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমা বিশ্বে অভিবাসী বিরোধী অতি ডান দক্ষিণপন্থী বা ফার রাইটদের ব্যাপক উত্থানে আতংক ছড়িয়েছে। উপরন্ত দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন অবৈধ অভিবাসী বহিস্কার ও অভিবাসী ঠেকাও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।

একই অবস্থা কানাডায়। কুইবেকে বিষয়টি আরো কঠিন হয়ে উঠেছে, ভাষা ও সংস্কৃতিরক্ষার নামে প্রভিন্সিয়াল গর্ভনমেন্টের নানান রকম বিধিনিষেধ আরোপ এবং কট্টর কুইবেকোয়াদের অভিবাসী বিরোধী আন্দোলনের কারণে খড়গ নেমে এসেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি মামদানীর বিরোধিতা করেছেন। রিপাবলিকানরা তো ছিলই। একই সাথে মার্কিন জায়ান্ট বিজনেস হাউজ, বিলিওনিয়াররা মামদানীকে ঠেকাতে চেয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মার্কিন গনমাধ্যম, এক্স, সোশ্যাল মিডিয়ায় হেইট স্পিচ, জঘন্য সব আক্রমন করেও শেষ রক্ষা হয়নি। মামদানীর বিজয় নিয়ে আগামী ক'দিন মার্কিন গণমাধ্যমসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। অনেকেই বলবেন, নিউইয়র্কের স্বল্প আয়ের মানুষের বিজয়, বড়লোকের দম্ভ গুড়িয়ে শ্রমজীবী মানুষের বিজয় কিংবা বুর্জোয়া ঘাঁটিতে সোশ্যালিস্ট বা কমিউনিস্টের বিজয়।

সবই ঠিক আছে। আমার পর্যবেক্ষণ অন্য জায়গায়। ইউরোপ-আমেরিকা-কানাডাসহ পশ্চিমাবিশ্বে যখন চরম অভিবাসী বিরোধী গ্রুপগুলো সক্রিয় এবং বিশাল বিশাল ডেমোনেস্ট্রেশন করছে, হেইট স্পীচ ও ধর্মীয় ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, সেখানে একজন জোহরান কোয়ামে মামদানী, একজন সোরাইয়া মারিসেল মার্টিনেজের বিজয় - নিছক বিজয় নয়। এ বিজয় অভিবাসীদের ওপর ঘৃণা - বিদ্বেষের বিষবাস্প ছড়ানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।

এই বিজয় বারাক ওবামার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার ঐতিহাসিক বিজয়ের সাথে অনেকটাই তুলনা করা যায়। ওবামার নির্বাচনের সময় ক্যাপিটালিস্ট আমেরিকার ব্যবসায়ীদের বৃহৎ অংশ বিরোধিতা করেছিল। বর্ণবাদীরা হেইট স্পিচ ও জঘন্য কুৎসা রটিয়েও তাকে থামাতে পারেনি। মামদানীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

যাহোক, মামদানী নিউইয়র্ক শহরের ইতিহাসে ১৮৯২ সালের পর সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র, প্রথম মুসলিম মেয়র এবং আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া প্রথম ব্যক্তি, যিনি এই পদে আসীন হলেন। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এবং আমেরিকার ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টদের সদস্য হিসেবে তিনি ২০২১ সাল থেকে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির দায়িত্ব পালন করছেন।

অন্যদিকে, সোরাইয়া মারিসেল মার্টিনেজ ফেরাদে একজন চিলি-কানাডিয়ান রাজনীতিবিদ। লিবারেল পার্টির সদস্য হিসেবে তিনি পূর্বে ২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত হোচেলাগার সংসদ সদস্য এবং ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ফেডারেল ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সোরাইয়া মার্টিনেজ ফেরাদের জন্ম ২৮ আগস্ট, ১৯৭২ সালে চিলির সান্তিয়াগোতে। ১৯৮০ সালে অগাস্টো পিনোশেটের সামরিক একনায়কতন্ত্র থেকে পালিয়ে তাঁর পরিবার কানাডায় চলে আসেন। তখন তাঁর বয়স ৮ বছর। তাঁর পরিবার রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে মন্ট্রিয়লে এসেছিল। সোরাইয়া মন্ট্রিয়লের দ্বিতীয় নারী মেয়র এবং প্রথম ল্যাটিনো বংশোদ্ভূত মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। কমিউনিটি সংগঠনে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে ফেডারেল মন্ত্রিসভার সদস্য এবং অবশেষে কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরের মেয়র হওয়া তাঁর জন্য এক বিশাল সাফল্য। তাঁর বিজয় বহুসাংস্কৃতিক সমাজের জন্য এক বিরাট অনুপ্রেরণা। অভিবাসী হেইটারদের গালে চপেটাঘাত পড়েছে।

মামদানী ও সোরাইয়ার বিজয়ই অভিবাসীদের সংগ্রাম এবং সফলভাবে সমাজে একীভূত হওয়ার সক্ষমতাকে তুলে ধরেছে । ফার রাইটদের উত্থানের সময়ে তাদের বিজয় বিশ্বজুড়ে অভিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয় যে, কঠোর পরিশ্রম এবং প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে তারাও নতুন দেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেতৃত্ব দিতে পারে।

অতি ডানপন্থীরা দেশে দেশে অভিবাসীদের বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে, তখন মামদানী এবং সোরাইয়ার মতো নেতারা প্রমাণ করেছেন যে, অভিবাসীরাও সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের বিজয় অভিবাসী বিরোধী বক্তব্যের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী এবং ইতিবাচক প্রতীকী প্রতিরোধ।


লেখক : গণমাধ্যম কর্মী। 

১১৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন