মিয়ানমারের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি বাংলাদেশ?
বৃহস্পতিবার , ৬ নভেম্বর, ২০২৫ ৬:০৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
মিয়ানমারে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন ঘিরে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়লেও বাংলাদেশ এখনো নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
মিয়ানমার-বাংলাদেশ দুই প্রতিবেশী দেশ দীর্ঘ ইতিহাস ও যৌথ সীমানার কারণে একে-অপরের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গা সংকট, সীমান্ত আক্রমণ ও মিয়ানমারে সংঘর্ষের প্রভাব। এসব কারণে মিয়ানমারের রাজনৈতিক যেকোনো আহ্বানে সাড়া দেয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য বিশেষ বিবেচনাধীন।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের জান্তা সরকার এই প্রথম নির্বাচন দিতে যাচ্ছে। দুই ধাপে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের প্রথম পর্ব আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। আর দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন হবে ২০২৬ সালের ১১ জানুয়ারি।
নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কমিশন জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানাবে। এর মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকারকেও মনিটর হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় দেশটির সরকারি সূত্র।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি মিয়ানমার বাংলাদেশকে একটি চিঠি দিয়ে আসন্ন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে।
জানা গেছে, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার। পর্যবেক্ষক উপস্থিতি নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নির্বাচনের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করাই জান্তা সরকারের মূল লক্ষ্য বলে ধারণা করছে কূটনৈতিক মহল।
তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়নি। সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় এই মুহূর্তে ঢাকা নীরবতা বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করেছে।
তবে বাংলাদেশ সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমানে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন বিবেচনায় পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়টি সহজ সিদ্ধান্ত নয়। ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা সংকটের পর থেকে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক জটিল হয়ে ওঠে।
এর পর সীমান্তে বারবার গোলাগুলি ও মর্টার হামলার ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। ২০২৫ সালের মে মাসে ঢাকা মিয়ানমারে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেয়- যা সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রকাশ্য ইঙ্গিত।
অন্যদিকে, মিয়ানমারের চলমান সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে আসন্ন নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক মহল ‘বিতর্কিত প্রক্রিয়া’ হিসেবে দেখছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ান (ASEAN) জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপ ও সহিংসতা বন্ধ করা জরুরি।
তবে আসিয়ান এককভাবে কোনো মনিটরিং টিম পাঠাবে না। সদস্য দেশগুলো চাইলে পৃথকভাবে পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারবে।
বাংলাদেশ সরকারের এক নীতিনির্ধারক সূত্রের ভাষায়, আমন্ত্রণ সরাসরি গ্রহণ নাও হতে পারে। নিরাপত্তা, নৈতিক অবস্থান, এবং কূটনৈতিক বাস্তবতা- সব দিক বিবেচনা করতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, রোহিঙ্গা ইস্যু ও সীমান্ত উত্তেজনা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা সম্ভবত সংযত অবস্থান নেবে। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো হলে সেটি আঞ্চলিকভাবে রাজনৈতিক বার্তা বহন করতে পারে, যা বাংলাদেশ হয়তো এ মুহূর্তে দিতে চায় না।
তবে কূটনৈতিক মহলের ধারণা, যদি মিয়ানমার আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পাঠায়, ঢাকা সেটি 'বিবেচনাধীন প্রস্তাব' হিসেবে রেখে সম্ভাব্য শর্ত ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করবে।
১২২ বার পড়া হয়েছে