পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা: সরবরাহ স্বাভাবিক, তবুও দাম বাড়ছে
বৃহস্পতিবার , ৬ নভেম্বর, ২০২৫ ৪:৩৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশের পেঁয়াজের বাজারে হঠাৎ অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মাত্র পাঁচ-ছয় দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। রাজধানীর বাজারগুলোতে বর্তমানে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়।
আমদানিকারকদের দাবি, সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। তাদের ভাষ্য, ভারী বৃষ্টিপাতে সম্প্রতি মুড়িকাটা পেঁয়াজক্ষেতের ক্ষতি হওয়ায় বাজারে চাপ তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন, আমদানির অনুমতি মিললে দুই দিনের মধ্যেই দাম অর্ধেকে নেমে আসবে।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, দেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত মজুত আছে, ফলে এখন আমদানি অনুমতি দিলে কৃষক ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন।
বাজারসংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, এ দামের উর্ধ্বগতি স্বাভাবিক নয়। তাদের অভিযোগ, একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পরিকল্পিতভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে যাতে সরকারকে আমদানির অনুমতি দিতে বাধ্য করা যায়।
ভোক্তাসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোও সরবরাহ সংকটের অজুহাত মানতে নারাজ। তাদের অভিযোগ, কৃষকের ঘরে নয়, পেঁয়াজের বড় অংশ এখন মজুতদারদের নিয়ন্ত্রণে। প্রতিবছরের মতো এবারও একই কৌশলে বাজার অস্থিতিশীল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। তবে এক বছর আগের তুলনায় দাম এখনও ২২ শতাংশ কম। রাজধানীর মালিবাগ, কারওয়ান বাজার ও আগারগাঁওয়ে গতকাল প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১৫–১২০ টাকায়, যেখানে এক সপ্তাহ আগেও দাম ছিল ৮০ টাকার আশপাশে।
বড় পাইকাররা বলছেন, দেশে দৈনিক চাহিদা ছয় থেকে সাত হাজার টন, কিন্তু বাজারে সরবরাহ এখন সেই চাহিদার নিচে। তারা মনে করেন, নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে আরও দেড়-দুই মাস সময় লাগবে, তাই আমদানির বিকল্প নেই।
কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, এখন পেঁয়াজ আমদানি করলে স্থানীয় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ এই মাসেই বাজারে আসবে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ২৫–২৭ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা থাকলেও উৎপাদন হয় ৩৫–৩৭ লাখ টন। সংরক্ষণের সময় ২৫ শতাংশ পচে যাওয়ায় প্রতিবছর ছয়–সাত লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, বেশিরভাগই ভারত থেকে।
বর্তমানে দুই হাজার ৮০০টিরও বেশি আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) আবেদন জমা পড়েছে, কিন্তু অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অনেক ব্যবসায়ী আইপি ছাড়া এলসি খুলে পেঁয়াজ বন্দরে এনে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে জানা গেছে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আইপি বন্ধের অজুহাতে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। নির্বাচনী সময়ের সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজর কিছুটা শিথিল, তাই সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. জামাল উদ্দীন বলেন, এই মুহূর্তে দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এটি নিঃসন্দেহে বাজার কারসাজি।
অন্যদিকে, মাঠের কৃষকরা চাইছেন, সরকার যেন এখনই আমদানির অনুমতি না দেয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. এমদাদ উল্লাহ বলেন, আমাদের লক্ষ্য কৃষক ও ভোক্তা- দুই পক্ষের স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষা করা। দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে।
১২০ বার পড়া হয়েছে