বিএনপি'র ২৩৭ আসনে প্রার্থী মনোনয়নে নতুন ধারা, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নতুনত্ব
মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫ ৮:০৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপি ২৩৭টি আসনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে গতানুগতিক নিয়ম ভেঙে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। 
দলটি এবার হেভিওয়েট বা প্রতিষ্ঠিত অনেককেই বাদ দিয়ে নতুন মুখদের এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঘোষিত এই তালিকায় নেই দলের স্থায়ী কমিটি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার নাম। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও বেগম সেলিমা রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী সোহেল এবং সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবীর তালিকার বাইরে রয়েছেন।
এছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আমিনুর রশীদ ইয়াসিন এবং ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপনের নামও বাদ পড়েছে প্রাথমিক তালিকা থেকে।
সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার নামও সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় দেখা যায়নি। একইভাবে ঢাকা-১০ আসনে বিগত সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম ও নেতা রবিউল ইসলাম রবিও এই তালিকায় নেই।
দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা যায়, এই নতুন নীতি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বিএনপি চাইছে স্থানীয় নেতৃত্বকে সক্রিয় ও সম্প্রসারিত করতে। দলটি মনে করছে, নতুন প্রার্থীদের নেতৃত্ব জনগণের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে এবং স্থানীয় সমাধানমুখী কার্যক্রমে জোর দিতে সক্ষম হবে।
একই সময়ে, মনোনয়ন সংক্রান্ত সহিংসতা এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে এরই মধ্যে চারজন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন এমন নেতৃবৃন্দ যারা মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় বৈরিতা সৃষ্টি করেছিলেন বা দলের শৃঙ্খলা অমান্য করেছিলেন।
বহিষ্কৃতরা হলেন, সেচ্ছাসেবক দলের সীতাকুণ্ড উপজেলা সভাপতি আলাউদ্দিন মনি, সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বাবর, সীতাকুণ্ড পৌরসভার আহ্বায়ক মামুন এবং যুবদলের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মমিন উদ্দিন মিন্টু।
মনোনয়ন ষোষণার রাতেই অর্থাৎ সোমবার (৩ নভেম্বর) গভীর রাতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় সবাইকে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার সন্ধ্যার পর দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিরোধের জেরে এই নেতারা সীতাকুণ্ডের কদমরসুল, ভাটিয়ারী বাজার ও জলিল গেট এলাকায় সহিংসতা, হানাহানি এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। এসব ঘটনার কারণে তাদের দল থেকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দলীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ দলের শৃঙ্খলা ও অনুশাসনে আগের চেয়ে আরও কঠোর মনোভাব প্রদর্শন করছে। একই সঙ্গে নতুন প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া দলের স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক মনোভাবকে তুলে ধরছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলটির এই পদক্ষেপকে একটি আশার আলো হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, নতুন নেতৃত্ব ও কঠোর শৃঙ্খলা রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপিকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে।
দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনী মাঠে প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে এবং স্থানীয় পর্যায়ে সমর্থকরা নতুন প্রার্থীদের প্রতি ইতিবাচক সাড়া জানাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে এই নতুন নীতি বিএনপির জন্য কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশের ভোটবাজারে এখন যে দলগুলোর নাম প্রথমে আসে, তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নানা পরিবর্তন ঘটেছে। দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ভবিষ্যতে দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও নীতিগত অবস্থান কেমন হবে, তা নিয়েও আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দলটি যে অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং অসাধ্য সাধনে যে ভূমিকা নিয়েছে, তা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে জনগণের মধ্যে উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও সংগঠন শক্ত করার প্রচেষ্টা কতটা কার্যকর হবে, সেটাও ভোটের আগে আলোচনার বিষয় হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১১৭ বার পড়া হয়েছে