জলবায়ু তহবিলের অর্ধেকের বেশি বরাদ্দ দুর্নীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত : টিআইবি
মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫ ৭:৪৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নের জাতীয় তহবিলের অর্ধেকেরও বেশি অংশ দুর্নীতিতে নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। 
সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটি) থেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর ৫৪ শতাংশ বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে। প্রাক্কলিত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৪৮.৪ মিলিয়ন ডলার বা ২,১১০ কোটি টাকার বেশি।
আজ রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিসিসিটি থেকে মোট ৪৫৮.৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ অনুমোদিত হয়েছে। এর অর্ধেকের বেশি বরাদ্দ দুর্নীতিগ্রস্ত। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব, যোগসাজশ ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে প্রকল্প অনুমোদনের প্রবণতা স্পষ্ট হলেও তহবিল ব্যবস্থাপক কর্মকর্তারা অনিয়ম রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
টিআইবি জানায়, প্রতিবছর জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রয়োজন ১২,৫০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তহবিল মিলিয়ে বরাদ্দ এসেছে বছরে মাত্র ৮৬.২ মিলিয়ন ডলার, যা প্রয়োজনের ০.৭ শতাংশেরও কম।
জাতীয় তহবিল থেকে বরাদ্দ প্রতিবছর গড়ে ৮.২ শতাংশ হারে কমেছে, বিপরীতে আন্তর্জাতিক তহবিলের বরাদ্দ বেড়েছে ৪৩.৮ শতাংশ হারে। তবু বরাদ্দের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় তহবিলের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যর্থতা সাধারণ ঘটনা। ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। গড়ে ৬৪৮ দিনের প্রকল্প শেষ হতে লেগেছে ১,৫১৫ দিন, অর্থাৎ ১৩৩ শতাংশ সময় বৃদ্ধি। কিছু চার বছর মেয়াদি প্রকল্প শেষ হতে লেগেছে ১৪ বছর পর্যন্ত। আন্তর্জাতিক তহবিলের প্রকল্পেও একই চিত্র দেখা গেছে—৫১টি প্রকল্পের মধ্যে ২১টির মেয়াদ গড়ে ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশ প্রতিবছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা পেয়েছি মাত্র ১.২ বিলিয়ন ডলার—যা একেবারেই নগণ্য।”
তিনি আরও বলেন, “জাতীয় তহবিলের ৫৪ শতাংশই দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই অর্থ লুট করেছে। জবাবদিহিতা, সুশাসন ও দক্ষতার অভাবের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এর পরিবর্তন চাই।”
ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, জলবায়ু অর্থায়নে প্রকৃত উপকারভোগীদের অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে টেকসই উন্নয়ন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
১০৭ বার পড়া হয়েছে