সর্বশেষ

ফেবু লিখন

আত্মমর্যাদাবোধ ও আত্মপ্রত্যয়: রাওয়া ক্লাবের বইমেলার অলিখিত অধ্যায়

রেজাউল করিম
রেজাউল করিম

বৃহস্পতিবার , ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ ৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
রাওয়া ক্লাবের বইমেলা উপলক্ষে সভাকক্ষে যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালককে প্রধান অতিথি করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়, তখন ক্লাবের কোন এক সিনিয়র সদস্য ব্রিগেডিয়ার (অব.) XXX সাহেব নিঃশ্বাস ফেলে বলেছিলেন, "আমরা যখন নিজেদেরই নিজেরা মূল্যায়ন করতে শিখলাম না, তখন অন্যরা আমাদের কীভাবে মূল্য দেবে?"

আমাদের নিজস্ব সম্পদকে চিনি না কেন?
সত্যিই তো, রাওয়া ক্লাব থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরেই বসবাস করছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল নুরুদ্দীন। শুধু সামরিক কৃতিত্বই নয়, দেশের ইতিহাস-সংস্কৃতি-রাজনীতি নিয়ে তার গভীর পাণ্ডিত্য অনেক একাডেমিক গবেষককেও লজ্জা দিতে পারে।
তার চেয়েও বিস্ময়কর বিষয় হলো, আমাদের মধ্যেই আছেন:
· মেজর জেনারেল Rezaqul Haider রেজাকুল হায়দার - যিনি আন্তর্জাতিক সামরিক মহলে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন
· মেজর জেনারেল Fazle Elahi Akbar ফজলে এলাহী আকবর - যার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং যিনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সম্পন্ন।
· লেঃ জেনারেল এটিএম জহির - যিনি সামরিক কৌশল নিয়ে বিশ্বমানের গবেষক
. মেজর জেনারেল সহুল আফজাল - যিনি সেনাবাহিনীর অত্যন্ত নামকরা সামরিক ব‍্যক্তিত্ব যাদের কথা শুনতে এখনও অনেক অফিসার আগ্রহী।
. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আজমী Amaan Azmi—যার একাডেমিক শিক্ষা ও জ্ঞানের গভীরতা সম্পর্কে অনেকেরই যথেষ্ট ধারণা আছে।
· লেঃ জেনারেল মতিউর - যিনি সেনাবাহিনীতে যার যথেষ্ট সুনাম ও পরিচিতি রয়েছে ।
. লেঃ Abu Rushd A R M Shahidul Islam যিনি সামরিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং তাঁর লেখা অনেকগুলো বই ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। এবং এছারাও এদের মতো এদের চেয়ে আরো বেশি অভিজ্ঞ ও বয়সেভারী জেনারেলগন আছে যারা এখনও জীবন্ত কিংবদন্তি ।
এঁদের প্রত্যেকের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং গবেষণা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারকেও হার মানাতে পারে।

একজন ক্ষুদে মেজরের আত্মবিশ্লেষণ
আপনি যথার্থই বলেছেন স‍্যার, জেনারেল, ব্রিগেডিয়ার, কর্নেল সাহেবরা তো অনেক উপরের বিষয়—আমার মতো একজন সামান‍্য মেজরেরও যে পড়াশোনা, গবেষণা ও দক্ষতা আছে - তা অনেক ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের চেয়ে কম নয়। সামরিক বাহিনীতে চাকরি করার সময় আমরা যে discipline, dedication এবং critical thinking শিখি - তা যে কোনো একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের জন্য মূল্যবান সম্পদ।
আমার নিজের যতগুলো ডিগ্রি, আর্টিকেল ও গবেষণাধর্মী লেখা প্রথমসারির জার্নাল, ম্যাগাজিন ও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তা বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্টের হেড/প্রফেসর আছেন তাদরেও নেই। আমি বাংলাদেশের প্রথম সারির ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্টটাইম শিক্ষকতা করি এবং দেশের বাইরেও দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্ট ফ‍্যাকাল্টি হিসেবে লেকচার দেই কিন্তু তাতে কি আমি তো আপানদের কাছে শুধুই ‘মেজর’—— আর তিনি তো প্রফেসর ।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের সমাজে এক ধরনের মানসিকতা গড়ে উঠেছে যে "সিভিল" মানেই "বেশি শিক্ষিত" বা "বেশি মর্যাদাশীল"। আমরা নিজেরাই ভুলে যাই যে:
· সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বিশ্বমানের শিক্ষা দেওয়া হয়
· সামরিক কর্মকর্তাদের গবেষণা ও প্রকাশনা অনেক ক্ষেত্রে একাডেমিক মানের
· আমাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান দেশ গঠনের অমূল্য সম্পদ

 

আমি মনে করি, আত্মসম্মানবোধই জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু আফসোস, যখন আমরা নিজেরাই নিজেদের সামর্থ্য ও যোগ্যতা সম্পর্কে সন্দিহান, যখন আমরা নিজেদের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের যথাযথ সম্মান দিতে পারি না - তখন অন্যরা আমাদের কীভাবে সম্মান দেবে?


রাওয়া ক্লাবের বইমেলায় যদি আমাদেরই জেনারেলরা প্রধান অতিথি হতেন, তাহলে:
১. তরুণ প্রজন্ম আমাদের গৌরবময় ইতিহাস ও জ্ঞানভাণ্ডার সম্পর্কে জানতে পারত
২. সামরিক-বেসামরিক সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হত
৩. আমরা আত্মসম্মানবোধের সাথে বলতে পারতাম - "হ্যাঁ, আমরা শুধু যুদ্ধই জানি না, জ্ঞানচর্চাও জানি"
পরিশেষে বলতে চাই, আত্মশক্তির awakening প্রয়োজন।
বাংলা একাডেমির সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেটা কখনই আমাদের নিজেদের যোগ্য ব্যক্তিত্বদের অবমূল্যায়নের মাধ্যমে নয়।

 

আসুন আমরা:
· নিজেদের ability নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হই
· আমাদের জেনারেল, কর্নেল, মেজরদের achievement কে স্বীকৃতি দিই
· সামরিক-বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রের যোগ্য মানুষদের যথাযথ সম্মান দিই
কারণ, "যে জাতি নিজেরাই নিজেদের মর্যাদা দেয় না, অন্যরাও তাদের মর্যাদা দেয় না।"
রাওয়া ক্লাবের মতো প্রতিষ্ঠানই পারে এই আত্মমর্যাদাবোধের পুনর্জাগরণ ঘটাতে।প্রতিটি বইমেলা হোক আমাদেরই কোনো জেনারেলের presiding-এ - যিনি represent করবেন আমাদের collective wisdom এবং intellectual heritage কে।

 

লেখক: লেখক : গবেষক ও বিশ্লেষক। 
(লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে)

১৭২ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
ফেবু লিখন নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন