জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিকল্প পদ্ধতির সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ২:১৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দুটি বিকল্প পদ্ধতির খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
মঙ্গলবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশন এই সুপারিশ ও ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ–২০২৫’-এর দুটি খসড়া জমা দেয়।
প্রথম খসড়ায় বলা হয়েছে, আগামী সংসদের সংবিধান সংস্কার পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ না করলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রণীত সংবিধান সংশোধনের খসড়া বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাস বলে গণ্য হবে।
দ্বিতীয় খসড়ায় পরিষদকে একই সময়ের মধ্যে জাতীয় সনদ অনুযায়ী সংস্কার সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কমিশনের মতে, কোন খসড়াটি গৃহীত হবে—সে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
দুটি খসড়াতেই প্রস্তাব করা হয়েছে, আদেশের ওপর একটি গণভোট হবে, যেখানে জনগণ ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটে মতামত দেবেন। গণভোট নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিনও হতে পারে। সরকার গণভোটের সময় ও পদ্ধতি নির্ধারণ করবে।
আদেশটি অনুমোদিত হলে আগামী সংসদ দ্বৈত ভূমিকা পালন করবে—একদিকে সরকার গঠন ও আইন প্রণয়ন, অন্যদিকে সংবিধান সংস্কারের দায়িত্বে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’।
সংবিধান সংস্কারের ৪৮ প্রস্তাবের মধ্যে অন্যতম হলো—পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। বিএনপি ও তাদের মিত্রজোটগুলো এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, অন্যদিকে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি এর পক্ষে।
কমিশন সুপারিশ করেছে, সংবিধান সংস্কার সম্পন্নের ৪৫ দিনের মধ্যে নিম্নকক্ষের ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ কমিশনের প্রস্তাবকে “জাতীয় ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা” বলে মন্তব্য করেছেন। জামায়াত মনে করে, গণভোট অবশ্যই নির্বাচনের আগেই হতে হবে।
অন্যদিকে এনসিপি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও দলটির নেতারা আদেশ জারি ও গণভোটের প্রস্তাবকে “ইতিবাচক পদক্ষেপ” বলেছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (ভিন্নমত) কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, গণভোটে জনগণের অনুমোদনই হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, “যদি গণভোটে আদেশ অনুমোদিত হয়, তাহলে জুলাই সনদে উল্লিখিত সংস্কারগুলোই বাস্তবায়িত হবে।”
অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, সংবিধান সংস্কার পরিষদ ‘কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার’-সম্পন্ন হলেও তারা ইচ্ছামতো পরিবর্তন আনতে পারবে না। জুলাই সনদই তাদের সংস্কারের দিকনির্দেশনা দেবে।
তিনি বলেন, “কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার মানে যা খুশি তাই লেখা নয়—সনদে নির্ধারিত কাঠামোর মধ্যেই সংস্কার হবে।”
কমিশন আশা করছে, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এখনো অনস্বাক্ষরিত দল এনসিপিসহ সব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে সই করবে।
সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া, সফর রাজ হোসেনসহ কমিশনের অন্যান্য সদস্য।
১১১ বার পড়া হয়েছে