চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বাড়ানো নিয়ে ব্যবসায়ীদের আপত্তি
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫ ২:৫৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিবছরই হাজার কোটি টাকার মুনাফা করলেও এবার এক লাফে ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা।
তাঁদের অভিযোগ, বিদেশি অপারেটরদের সুবিধা দিতেই এই বাড়তি মাশুল আরোপ করা হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বন্দরের রাজস্ব উদ্বৃত্ত ছিল ২ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। কর পরিশোধের পর নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। অথচ ১৫ অক্টোবর থেকে বর্ধিত হারে মাশুল আদায় শুরু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ, যা আগামী বছরগুলোতে বন্দরের আয় আরও বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিদেশি অপারেটরদের প্রবেশ
সরকার ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরদের হাতে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। লালদিয়া ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দ্রুতই বিদেশি কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। পরবর্তী ধাপে বে টার্মিনালের দুটি অংশও বিদেশি অপারেটরদের দেওয়া হতে পারে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই পরিবর্তনের আগে থেকেই বন্দরের মুনাফা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। তাই হঠাৎ ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ানো অযৌক্তিক।
পোর্ট ইউজার্স ফোরামের আহ্বায়ক আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “বন্দরের মাশুল ডলারে নির্ধারিত। ডলারের দাম বাড়ায় মাশুল এমনিতেই ৪২ শতাংশ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশি অপারেটরদের সুবিধার জন্য অতিরিক্ত ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি যৌক্তিক নয়।”
২০২২ সালের শুরুতে প্রতি ডলার ছিল ৮৬ টাকা, বর্তমানে তা ১২২ টাকায় পৌঁছেছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের যুক্তি
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ৪০ বছরে মাত্র একবার—২০০৭ সালে—সীমিত পরিসরে ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছিল। এ সময়ে যন্ত্রপাতি, জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বহু গুণ বেড়েছে। বন্দরের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩৩ হাজার ৩২১ কোটি টাকার অর্থ প্রয়োজন, যা নিজস্ব আয় থেকেই যোগান দিতে হবে।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “ট্যারিফ বাড়ানোর আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে এবং বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। ৪০ বছর পরও যদি ট্যারিফ না বাড়ানো যায়, তাহলে উন্নয়ন থমকে যাবে।”
বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, নতুন ট্যারিফে প্রতি কনটেইনারে গড়ে ৩ হাজার ৮০০ টাকা বাড়লেও পণ্যের দামে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ১২ পয়সা প্রভাব পড়বে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ট্যারিফ সমন্বয় করা প্রয়োজন হতে পারে, তবে একলাফে ৪১ শতাংশ বাড়ানো যুক্তিসঙ্গত নয়। ধাপে ধাপে তিন বছরে বাস্তবায়ন করলে ব্যবসায়িক চাপ কম হতো।”
তিনি আরও বলেন, বাড়তি মাশুলের ফলে আমদানি ব্যয় বাড়বে, যা ভোক্তার ওপর পড়বে, আর রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যেতে পারে।
বর্তমানে দেশের মোট আমদানি–রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশই হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। গত এক দশকে বন্দর রাজস্ব আয় করেছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং নিট মুনাফা ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি।
১২৫ বার পড়া হয়েছে