জুলাই সনদ বাস্তবায়নে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রস্তুত, হস্তান্তর মঙ্গলবার
সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ ৫:৫৪ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে প্রস্তুত করা চূড়ান্ত সুপারিশপত্র অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে এই সুপারিশ আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে যমুনা ভবনে কমিশনের সমাপনী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ, সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
সমাপনী বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের গঠন থেকে শুরু করে সুপারিশ চূড়ান্ত করা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ার দলিল, ভিডিও, অডিও, ছবি ও চিঠিপত্র সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “এগুলো আমাদের জাতীয় ইতিহাসের মূল্যবান সম্পদ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন জানে, কোন প্রেক্ষাপটে কীভাবে এই সিদ্ধান্তগুলো এসেছে, সে জন্য সব তথ্য সংরক্ষণ ও উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “কমিশনের সব বৈঠকের নথি, ছবি, টেলিভিশন আলোচনার ভিডিও—সবকিছু শ্রেণিবদ্ধভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। এগুলো ভবিষ্যতের গবেষণা ও রাজনৈতিক আলাপের জন্য চিরস্থায়ী দলিল হিসেবে কাজ করবে।”
বৈঠকে কমিশনের সদস্যরা জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।
কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি রচনায় কাজ করেছে। রাজনৈতিক দল, আইনজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের মতামতের ভিত্তিতেই জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি মূল দায়িত্বের একটি ছিল কাঠামোগত সংস্কার। সেই সংস্কারের রূপরেখা তৈরি করাই ছিল আমাদের দায়িত্ব। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কারের আগ্রহ স্পষ্ট ছিল, যা আমাদের কাজে সহায়ক হয়েছে।”
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “গণঅভ্যুত্থানে এত প্রাণ বিসর্জনের পর জনগণ এখন প্রকৃত পরিবর্তন দেখতে চায়। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সরকারের সাহসী ও আন্তরিক পদক্ষেপ দরকার।”
কমিশন সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক মন্তব্য করেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য ও আন্তরিকতা কমিশনের আলোচনাতেও প্রতিফলিত হয়েছে, যা একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।”
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ আশা প্রকাশ করেন, “ভবিষ্যতেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই ধরনের সৌহার্দ্য বজায় থাকবে।”
দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “জুলাই সনদের পাশাপাশি দুদক সংস্কারেও সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার জানান, “শহীদ পরিবারের সদস্যরা সংস্কার নিশ্চিত না হলে তাদের প্রিয়জনদের ত্যাগ বৃথা মনে করবেন বলে জানিয়েছেন। তাই এই বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ৩১ অক্টোবর। তবে কমিশনের সদস্যরা জানিয়েছেন, সরকারের প্রয়োজন হলে তাঁরা নাগরিক হিসেবে ভবিষ্যতেও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
১২৮ বার পড়া হয়েছে