চট্টগ্রামে সিসা দূষণ প্রতিরোধে র্যালি ও মানববন্ধন
শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ৬:৪০ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
“বাংলাদেশে কোনও মাত্রাই নিরাপদ নয়, সিসা দূষণ বন্ধে কাজ করার এখনই সময়” — এই প্রতিপাদ্য নিয়ে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে জনসচেতনতামূলক র্যালি, মানববন্ধন ও আলোচনা সভা।
ইয়ুথনেট গ্লোবাল ও পিওর আর্থ বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে এবং ইউনিসেফের সহায়তায় আয়োজিত এ কর্মসূচি শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ১০টায় জামালখান প্রেসক্লাব চত্বর থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জামালখান মোড়ে মানববন্ধনের মাধ্যমে শেষ হয়।
অনুষ্ঠানে ইয়ুথনেট গ্লোবালের স্বেচ্ছাসেবী, পিওর আর্থ ও ইউনিসেফের প্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সদস্য, পরিবেশ অধিকারকর্মী, গণমাধ্যমকর্মীসহ প্রায় ৩০ জন অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীরা “সিসা দূষণ বন্ধ হলে, বাড়বে শিশু বুদ্ধি-বলে” শ্লোগান লিখিত ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন।
আয়োজকদের মতে, কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল— সিসা দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আইন বাস্তবায়ন জোরদার করা এবং সিসা দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে আহ্বান জানানো। এসময় উপস্থিতদের মধ্যে সচেতনতামূলক লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ করা হয়।
জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর উদ্যোগে প্রতি বছর অক্টোবর মাসে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় “আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ”। এবছরের ইংরেজি প্রতিপাদ্য ছিল— “No Safe Level: Act Now to End Lead Exposure”।
গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে সিসা দূষিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ। দেশে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু, অর্থাৎ মোট শিশু জনসংখ্যার ৬০ শতাংশেরও বেশি, রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা বহন করছে। এর ফলে শিশুদের বুদ্ধিবিকাশে প্রতিবন্ধকতা, আচরণগত সমস্যা, মনোযোগের ঘাটতি ও পরবর্তীতে অপরাধ প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সিসা বিষক্রিয়ায় হৃদরোগ, গর্ভপাত এবং মৃত সন্তান প্রসবের ঝুঁকি বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী, শুধুমাত্র বুদ্ধিমত্তা হ্রাস ও হৃদরোগজনিত মৃত্যুজনিত কারণে বাংলাদেশের বার্ষিক অর্থনৈতিক ক্ষতি দাঁড়ায় প্রায় ২৮,৬৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের জিডিপির ৬ থেকে ৯ শতাংশ ঘাটতি সৃষ্টি করে।
দৈনন্দিন ব্যবহারের অনেক পণ্যে যেমন দেয়ালের রং, অ্যালুমিনিয়াম ও সিরামিকের বাসন, মসলা, শিশুদের খেলনা, প্রসাধনী এমনকি মাছের খাদ্যেও সিসা পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া অনিরাপদভাবে সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি রিসাইক্লিংয়ের ফলে মাটি, পানি ও বায়ু মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যাটারি অনিরাপদভাবে পুনর্ব্যবহার করা হয়।
পিওর আর্থ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিতালী দাশ বলেন, “আমাদের মাটি, পানি ও বায়ু সিসা দ্বারা দূষিত হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সক্ষমতা উন্নয়ন, পণ্যে সিসার মান নির্ধারণ, অবৈধ ব্যাটারি রিসাইক্লিং বন্ধ ও কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি।”
ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, “সিসা দূষণ শিশুদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হলেও এটি সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। প্রতিটি শিশুরই নিরাপদ ও দূষণমুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠার অধিকার আছে। যুবসমাজের নেতৃত্বে আমরা সচেতনতা বৃদ্ধি ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারি।”
ইয়ুথনেট চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক পপি আক্তার দীর্ঘমেয়াদি ও বাস্তবসম্মত উদ্যোগের মাধ্যমে সিসা দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
কর্মসূচির প্রধান অতিথি কামাল উদ্দিন সি এস বি বলেন, “সিসা দূষণ একটি নীরব ঘাতক। এ থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।”
১১৯ বার পড়া হয়েছে