সর্বশেষ

মতামত

কুষ্টিয়ার গর্ব বিআরবি কেবলস ৪৮ বছরে: নতুন অধ্যায়ে পদার্পণ

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

বৃহস্পতিবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২৫ ৬:১১ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নের ইতিহাসে এক অনন্য নাম—বিআরবি কেবলস লিমিটেড। ১৯৭৮ সালে কুষ্টিয়া থেকে সূচিত এই স্বপ্নযাত্রা আজ পৌঁছেছে ৪৮তম বছরে।

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে গুণমান, উদ্ভাবন ও দায়বদ্ধতার প্রতীক হয়ে থাকা বিআরবি এখন কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি বাংলাদেশের শিল্পনগর কুষ্টিয়ার গর্ব ও আধুনিক অগ্রযাত্রার প্রতীক।
বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়ন ও অর্থনীতির ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নাম—আলহাজ্ব মোঃ মজিবর রহমান, বিআরবি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব, কঠোর পরিশ্রম ও অবিচল দেশপ্রেমের ফলাফল আজকের বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, যা ১৯৭৮ সালের ২৩ অক্টোবর প্রতিষ্ঠার পর ৪৮ বছরে পদার্পণ করেছে।

কুষ্টিয়ার বিসিক শিল্পনগরীতে ছোট্ট এক কারখানা থেকে যাত্রা শুরু করে আজ বিআরবি কেবলস দেশ-বিদেশে গুণমান ও আস্থার প্রতীক। বৈদ্যুতিক তার, ফাইবার অপটিক, টেলিকম ও মেরিন কেবল উৎপাদনে বাংলাদেশের রপ্তানি তালিকায় এটি অন্যতম শীর্ষ নাম।

প্রতিষ্ঠাতার অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা
আলহাজ্ব মজিবর রহমান জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের বোয়ালদহ গ্রামে । ১৯৫৯ সালে হার্ডওয়্যার ব্যবসার মাধ্যমে বাণিজ্যজগতে প্রবেশ করেন তিনি। স্বাধীনতার পর অর্থনৈতিক মন্দার সময়েও নতুন শিল্প স্থাপনের সাহস দেখিয়ে ১৯৭৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড—যা আজ বাংলাদেশের শিল্পায়নের ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক।
তাঁর মেধা ও অধ্যবসায়ে ১৯৮০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় বাণিজ্যিক উৎপাদন, যা অল্প সময়েই সারাদেশে সাড়া ফেলে। মজিবর রহমানের এই উদ্যোগ কুষ্টিয়ার শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিকে নতুন প্রাণ দিয়েছে—যে জেলায় মোহিনী মিল ও কুষ্টিয়া টেক্সটাইল বন্ধ হয়ে শ্রমবাজার ভেঙে পড়েছিল।

বিআরবি কেবলস আজ বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান
আজ বিআরবি গ্রুপের আওতায় রয়েছে তিনটি বৃহৎ উৎপাদন ইউনিট—বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ, বিআরবি এনার্জি লিমিটেড এবং এমআরএস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে জাপান, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও ভারতের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
প্রতিষ্ঠানের কারখানায় কর্মরত প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক ও কর্মকর্তা প্রতিদিন তৈরি করছেন বিদ্যুতের সুরক্ষিত নেটওয়ার্কের উপকরণ। বিআরবির পণ্য এখন ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (BPDB), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (REB), রেলওয়ে, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং টেলিকম অবকাঠামোতে।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠা হিসেবে এটি বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ৫০ কেবল নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ৩৩তম স্থানে রয়েছে—যা বাংলাদেশের জন্য এক গর্বের অর্জন।

অর্থনীতি ও সমাজে অবদান
বিআরবি কেবলস শুধু ব্যবসার ক্ষেত্রেই সফল নয়; এটি কুষ্টিয়ার সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনমান উন্নয়নের উদাহরণ হয়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের জীবনযাত্রার ভিত্তি।
শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ক্রীড়া ও সংস্কৃতির বিকাশেও আলহাজ্ব মজিবর রহমানের অবদান সমানভাবে উল্লেখযোগ্য। কুষ্টিয়ার নানা স্থানে তাঁর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত স্কুল, কলেজ এবং মসজিদ স্থানীয় উন্নয়নের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।
তিনি বহুবার রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন—এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার (২০১৯), জাতীয় রপ্তানি ট্রফি (স্বর্ণ), এবং শের-ই-বাংলা শিল্প একাডেমি স্বর্ণপদক।

ভবিষ্যতের দিগন্তে
বিআরবি এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি, স্মার্ট কেবল প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণে নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিচ্ছে। ইতিমধ্যে সংস্থাটি Superbrands Bangladesh 2025–26 সম্মাননা লাভ করেছে, যা বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নে এর অগ্রণী ভূমিকার স্বীকৃতি।
কুষ্টিয়ার বিসিক শিল্পনগরী থেকে শুরু হওয়া এক মানুষের স্বপ্ন আজ পৌঁছেছে বিশ্বমঞ্চে। ৪৮ বছরের এই যাত্রা প্রমাণ করেছে—সত্যিকার নেতৃত্ব, গুণমান ও পরিশ্রমের সমন্বয়েই জাতি পায় শিল্পায়নের আলো।

কুষ্টিয়ার বিআরবি
কুষ্টিয়ার অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রভাব আজ আর শুধু স্থানীয় নয়, জাতীয়। হাজারো পরিবার এখন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জীবন ও সংগ্রাম জড়িত করে দেখছে তাদের ভবিষ্যৎ। ৪৮ বছরের এই আলোকিত যাত্রা প্রমাণ করে—যদি দূরদর্শিতা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রম মিলে যায়, তবে জেলা থেকেও বিশ্ববাজার জয় করা সম্ভব।


লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

১২৩ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন