সৌদি আরবে গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় নতুন কঠোর নির্দেশনা জারি

বৃহস্পতিবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২৫ ৫:২৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
সৌদি আরবের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় গৃহস্থালি কাজে নিয়োজিত কর্মীদের জন্য নতুন নিয়মাবলী ঘোষণা করেছে, যা গৃহকর্মীদের অধিকারে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে।
নতুন বিধান অনুযায়ী, গৃহকর্মীদের কাছ থেকে নিয়োগ, পেশা পরিবর্তন, সেবা হস্তান্তর বা ওয়ার্ক পারমিটের নামে কোনও ধরনের অর্থ আদায় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কর্মীর পাসপোর্ট বা আকামা জব্দ করলেও কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের সর্বোচ্চ ২০ হাজার সৌদি রিয়াল (প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা) জরিমানা এবং তিন বছর পর্যন্ত নতুন কর্মী নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। অপরাধ পুনরাবৃত্তি হলে জরিমানা দ্বিগুণ বা স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যেতে পারে।
মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ‘গাইড টু দ্য রাইটস অ্যান্ড অবলিগেশনস অব ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স’-এ বলা হয়েছে, নতুন নিয়মগুলি গৃহকর্মীদের সম্মানজনক জীবন ও স্থিতিশীল কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবে। গৃহকর্মী বলতে এমন কর্মীদের বোঝানো হয়েছে যারা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজ যেমন গৃহপরিচারক, ব্যক্তিগত চালক, শিশুশিক্ষক, নার্স, মালী বা নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন।
নতুন নির্দেশনায় গৃহকর্মীরা স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী নিয়মিত বেতন পাবেন। কর্মীদের প্রতিদিন অন্তত আট ঘণ্টা বিশ্রাম ও সপ্তাহে একদিন ছুটি নিশ্চিত করা হয়েছে। দুই বছর পর এক মাসের ছুটি এবং চার বছর পর এক মাসের সমপরিমাণ বোনাস পাওয়ার অধিকার থাকবে। এছাড়া বছরে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের অসুস্থতাজনিত ছুটিও দেওয়া হবে।
গৃহকর্মীদের পাসপোর্ট বা আকামা নিয়োগকর্তারা জব্দ করতে পারবেন না এবং প্রতি দুই বছর পর দেশে ফেরার বিমান টিকিট সরবরাহ করাও নিয়োগদাতার দায়িত্ব। পাশাপাশি, গৃহকর্মীদের কিছু দায়িত্বও নির্ধারণ করা হয়েছে, যেমন নিয়োগকর্তার সম্পদ ও গোপনীয়তা রক্ষা এবং ইসলামী মূল্যবোধ ও সামাজিক শিষ্টাচার মেনে চলা। এসব নিয়ম ভঙ্গ করলে গৃহকর্মীদের বিরুদ্ধে দুই হাজার রিয়াল পর্যন্ত জরিমানা, স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বা উভয় শাস্তি আরোপ করা যেতে পারে।
সৌদিতে বর্তমানে ইয়েমেন, মিশর, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ গৃহকর্মী কর্মরত রয়েছেন। শুধু পাকিস্তান থেকে ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ ৫০ হাজার কর্মী দেশটিতে নিবন্ধিত হয়েছে।
গত কয়েক বছরে মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সমাজ গৃহকর্মীদের অধিকারের জন্য সৌদি সরকারের কাছে নানা দাবি জানিয়ে আসছিল। ২০২১ সালে কিছু সংশোধনী আনা হলেও নতুন এই গাইড গৃহকর্মীদের অধিকারের ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
১০৫ বার পড়া হয়েছে