জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস
সড়কে শৃঙ্খলার বেহাল দশা, এক বছরে মৃত্যু বেড়েছে ২০ শতাংশ

বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫ ৬:০৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
আজ বুধবার পালিত হচ্ছে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। ‘মানসম্মত হেলমেট ও নিরাপদ গতি, কমবে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি’ প্রতিপাদ্যে পালিত হচ্ছে দিনটি।
কিন্তু সড়কের বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।
দেশে সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলার অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। লাগামহীনভাবে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ অবৈধ যানবাহন দাপিয়ে বেড়ালেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ ও কমিটি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এক দশকে ৬৭ হাজার ৮৯০টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৭২৬ জন। গড়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন ২৭ জন। শুধু ২০২৪ সালেই সড়কে প্রাণ গেছে ৮ হাজার ৫৪৩ জনের, যা আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে, সরকারি সংস্থা বিআরটিএর হিসাব মতে, ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ৫ হাজার ২৪ জন; ২০২৪ সালে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৮০ জনে।
রোড সেফটি নেটওয়ার্ক জানায়, দেশে বর্তমানে সড়কে সক্রিয় রয়েছে ৫ লাখের বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন। শুধু ঢাকায় চলছে ১০ হাজারেরও বেশি এমন গাড়ি। সংস্থাটির দাবি, এই যানবাহনগুলোর বেশিরভাগই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
বিআরটিএ জানায়, ২০১০ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ৬৫ লাখের বেশি গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেশি।
গত সেপ্টেম্বরে দেশজুড়ে ১৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৩৮৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৬৫ লাখ টাকারও বেশি জরিমানা ও ১৩ জনকে কারাদণ্ড দেন। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এ পদক্ষেপগুলো সমস্যার গভীরতা মোকাবেলায় যথেষ্ট নয়।
বিভিন্ন হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে ৪৮-৫০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে। ঢাকায় মহল্লাভিত্তিক রাস্তায় চললেও এখন তা প্রধান সড়কগুলোতেও উঠে এসেছে। ট্রাফিক পুলিশের নজরদারি শূন্য এলাকায় এসব যান চলাচল বেড়েছে।
সরকার ও আদালতের একাধিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এসব রিকশা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। বরং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্প্রতি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে, যা নতুন করে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
এক জরিপে দেখা গেছে, গণপরিবহনে ৮৩ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে হয়রানির শিকার হন। পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি, অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের হাতে স্টিয়ারিং এবং লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চলাচল পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, "যাদের দায়িত্ব সড়ককে নিরাপদ রাখা, তারা কার্যকরভাবে সেই দায়িত্ব পালন করছেন না। মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগও হচ্ছে না।"
রোড সেফটি নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক পাহাড়ি ভট্টাচার্য বলেন, "স্বাধীনতার পর ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশে টেকসই পরিবহন কৌশল বাস্তবায়িত হয়নি। জবাবদিহিহীনতা ও দুর্বল অবকাঠামোই দুর্ঘটনার মূল কারণ।"
১০৬ বার পড়া হয়েছে