সর্বশেষ

ফেবু লিখন

ঘুরে বেড়ানোর গল্প : গ্রান্ড ক্যানিয়ন এবং আরো অনেক

আহসান নবাব
আহসান নবাব

মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫ ৪:৪২ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
গ্রান্ড ক্যানিয়ন,আমেরিকা বা পৃথিবীর এক অবাক ভুতাত্বিক বিস্ময়। ২০১৪ সালে প্রথম যখন আমেরিকা আসি তখন থেকেই এটা দেখার তীব্র ইচ্ছে ছিল। এবার যখন ৪র্থ বারে আমেরিকা এলাম তখন ছেলে চমক-ই বললো, আব্বু চলো যাই গ্রান্ড ক্যানিয়নে।

শরীর-মন দুটোই ঝংকার দিয়ে উঠলো। প্ল্যান মোতাবেক আমরা( চমক,বহ্নি, নাতনি দুটো) লসএন্জেলস থেকে নেভাদার বিখ্যাত মোহাবে মরুভূমির মাঝ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে প্রথমে গেলাম লাসভেগাসে। ওখানে টেক্সাস থেকে আকাশ পথে উড়ে এলো মেয়ে চারু। সেখানে রাত যাপন করে সকাল সকাল মুল গন্তব্যে রওনা দিবো এটা ঠিক ছিলো।

 

জুয়া,ম্যাজিক,সার্কাস,যৌনতা,পপ সংগীতের শহর নামে খ্যাত রাতের লাসভেগাস শহরটি হেঁটে হেঁটে ভালো করে দেখে নিলাম। উচ্ছল আবেদনময়ী লাসভেগাসকে বলা হয় "নাইট টাউন"। রাতেই জেগে ওঠে এই শহর। পৃথিবীর আলো ঝলমল শহর বলতেই সেটা লাসভেগাস। কতশত,লক্ষ-কোটি যুবকের মনের গহীনে লালিত হয়ে থাকে এই শহরের নাম..। সকালে আবার বের হয়ে সকালের লাসভেগাস কে দেখলাম। এবারে শহরটি রোদের আলোয় পরিপূর্ণ " কাম এন্ড কোয়াইট"।

সকাল সকাল শুরু হলো যাত্রা।

 

নেভাদা স্টেট পার হতেই এক সময় স্টিলের প্লাকার্ডের লেখা বোর্ডে স্বাগত জানালো অ্যারিজোনা স্টেট। আবার শুরু হলো বিশাল মরুপ্রান্তর আর ছোট বড় অজস্র অজস্র পাহাড়ের দিগন্ত। দুপুর পৌনে তিনটায় পৌঁছুলাম দীর্ঘ কাঙ্ক্ষিত গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের গেটে। এখানে ৩৫ ডলার প্রবেশ ফি দিয়ে ঢুকতে হয়। আমেরিকায় ফেডারেল শাটডাউন চলছে বলে এন্ট্রি ফি লাগলো না।ঢোকার পথেই ওরা একটা বড়সড় ট্যুর প্লানের লিফলেট দিয়ে দিল। দেখলাম সবুজ পাইনের বনের মধ্যে মুক্ত,পোষা নয় এমন দুই /তিন জাতের প্রচুর হরিণ খুব কাছ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একটু পরেই সেই মহাবিস্ময় --গ্রান্ড ক্যানিয়ন। কি বিচিত্র তার ধরণ তার প্রকাশ লিখে বলার নয়! অ্যারিজোয়ানা রাজ্যের উত্তর -পশ্চিম দিকে কলোরাডো নদীর পাশ ঘেঁসে ২৭৮ মাইল লম্বা আর ১৮ মাইল চওড়া নানা বিচিত্র বর্ণের শিলায় গঠিত এই গিরিখাত। গিরিখাতটি এক মাইলেরও বেশি গভীর। দুই মিলিয়ন বছরের বেশি সময় ধরে এটি তার ভুতাত্বিক ইতিহাস বহন করে চলেছে।

ইতিহাস মতে,চার হাজার বছর ধরে এখানে নানা উপজাতির মানুষ বসবাস করে গেছে। তাই এটি পরিচিত পূর্ব পুরুষের বসতভিটা হিসেবে। ৫ থেকে ৬ মিলিয়ন বছর আগে কলোরাডো নদীর উচ্চমাত্রার ভুমিক্ষয়,নদীটির সন্নিহিত মালভুমিতে ঘটে যাওয়া প্রচন্ডতর টেকনিক্যাল শক্তির প্রভাব,আগ্নেয়গিরি আর সাথে আগ্নেয়গিরির ছাই সাথে প্রচন্ড ভূমিধ্বস এই বিচিত্র বর্ণচ্ছটার শিলার গিরিখাত গঠন করেছে। ১৭০০-র বেশি বৃক্ষ প্রজাতি আর ১০০-র বেশি পাখি এবং অজস্র প্রজাতির জীব-বৈচিত্র্য সম্ভারে সাজানো এই বিস্ময় গিরিখাত। পৃথিবীর সপ্তম প্রাকৃতিক আইকনিক এই বিস্ময় দেখা যেমন পর্যটকদের কাছে তেমন পৃথিবীর সকল জিওলজিস্টদের কাছে সৌভাগ্যের বিষয়। গ্রান্ড ক্যানিয়ন দেখার অনেক গুলো প্রাইম স্পট আছে। 

মেথার পয়েন্ট, হোপি পয়েন্ট, ইয়াভাপাই পয়েন্ট, ডেজার্ট ভিউ ওয়াচ টাওয়ার ইত্যাদি। মানুষ সাধারণত : চার/ পাঁচ মাইলের মধ্যে এগুলোই দেখে। আমার সাধ মেটে না,আমি ৮০/৮৫ মাইলের লম্বা পথ ধরে এই অবাক বিস্ময় দেখি। একসময় এটি দেখা শেষে রাতে থাকতে চলি ইউটাহ রাজ্যের কানাব শহরে। রাতটি অমাবশ্যার কাছাকাছি। গাড়ি হঠাৎ করে এক বিজন এলাকার মাঠে নেমে পড়ে। গাড়ির সব আলো নিভে যায় । আমি শংকা নিয়ে চমকের কাছে জানতে চাই, কি হলো? চমক সবাইকে গাড়ি থেকে নেমে এসে আকাশের দিকে তাকাতে বলে। আমরা তাকিয়ে দেখি -পুরো আকাশ জুড়ে লক্ষ কোটি তারা! তারায় ছেয়ে আছে পুরো আকাশ মন্ডলী। আর স্পস্ট মিল্কিওয়ে।

এতো তারাভরা আকাশ আমি জীবনে দেখিনি। এখানে নাকি আশেপাশের মানুষ ঘটা করে তারা দেখতে আসে। আমাদের বর্ণমালা আর চমক একটা উল্কাপিণ্ড খসে পড়তেও দেখলো। আমরা পরদিন যাই আরেক বিস্ময় -আপার অ্যান্টিলপ ক্যানিয়ন দেখতে। আধা মাইল উচ্চতা ও দেড় মাইল লম্বা অ্যান্টিলোপ ক্যানিয়ন হলো একটি বিখ্যাত স্লট ক্যানিয়ন যেটি অ্যারিজোনার পেজ শহরের কাছে নাভাহো জাতির জমিতে অবস্থিত। এটি এখানকার পালিশ করা লাল পাথরের দেয়াল এবং উপর থেকে আসা আলোর বিচিত্র রশ্মির জন্য পরিচিত। ক্যানিয়নের ভিতরে সরু সরু আঁকা বাঁকা পথে আলোর বিচিত্র খেলা মানুষকে ভিন্ন গ্রহের মায়াবী জগতে নিয়ে যায়।এখানে যেতে হলে পর্যটকদের অবশ্যই একজন অনুমোদিত নাভাহো গাইড নিতে হয়। এখান থেকেই আমরা চলে যাই পেজ শহরের কাছেই কলোরাডো নদী যেখানে ভূপৃষ্ঠ থেকে হাজার ফুট নীচে ঘোড়ার খুরের আকৃতি নিয়ে আছে সেই হর্সসু বেন্টে। এসবই কলোরাডো নদীর সেই ভয়ংকর ভুমিক্ষয় আর প্রচন্ড টেকনিক্যাল শক্তির ইফেক্ট।

এবার আবার লাসভেগাস হয়ে আমাদের ফেরার পালা। চমক একটা পথ বেছে নেয়,যে পথে পড়ে ভ্যালি অফ ফায়ার স্টেট পার্ক। সেখানে পৌঁছাতেই অপার বিস্ময়ে দেখি শত শত আগুনে পাহাড়। প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বছর আগে জুরাসিক যুগে বালির টিলা থেকে এগুলি গঠিত হয়েছিল। খনিজ পদার্থ, চাপ, এবং ক্ষয়, বিশেষ করে অতিরিক্ত পানির প্রভাবে,লাখ লাখ বছর ধরে এই ভূখণ্ডটিতে স্বতন্ত্র রঙ ও আকৃতির এসব পাহাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা দশ/ বারো মাইলের আঁকা বাঁকা ট্রেইলে গাড়ি চালানোর সময় এখানে বিচরণ করতে দেখলাম বড় বড় শিঙের বুনো পাহাড়ি ছাগলের।

 

লাসভেগাস হয়ে লসএন্জেলস এয়ারপোর্ট। চারু-কে টেক্সাস গামী বিমানে তুলে দিয়ে আমরা গভীর রাতে বাসায় ফিরি...। ১৫০০ শত মাইলের এই জার্নির পথে পথে আমরা কত কত সুন্দর ছোট ছোট শহর,গ্রাম,জনপদ পেড়িয়ে গেছি সেগুলি যেমন বিচিত্র, তেমনি অদ্ভুত সুন্দরও....

লেখক : গদ্যশিল্পী।

(লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে)

২২০ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
ফেবু লিখন নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন