সর্বশেষ

মতামত

আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষর গ্রহণযোগ্য হবে না

মাসুদুল হাসান রনি
মাসুদুল হাসান রনি

বৃহস্পতিবার , ১৬ অক্টোবর, ২০২৫ ৬:৩৬ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে জুলাই সনদ হতে পারে না। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো জুলাই সনদের প্রথম অংশের পটভূমিতে যা উল্লেখ করা হয়েছে,তা এককথায় বাংলাদেশকে অস্বীকার করা।

দীর্ঘ একবছরের ওপর গঠিত কমিশনের সাথে গত আটমাসে এতো আলোচনা করে যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হয়- সেই সনদে বামপন্থীরা স্বাক্ষর করবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও গনতান্ত্রিক রীতিনীতিতে বিশ্বাসী কোন দল এটা করতে পারে না। এক্ষেরে সিপিবি, বাসদ, বাংলাদেশ জাসদ ও বাসদ (মার্ক্সবাদী) এই চার সংগঠনের অবস্থান পরিস্কার এবং সমর্থন করি।

বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো গুরুতর অভিযোগ করেছে, জুলাই সনদে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি। গত আটমাসে এরা বারবার সংশোধনী দিলেও ঐক্যমত কমিশন সেগুলো সনদে সন্নিবেশিত করেনি।

বিভিন্ন দলের নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দেওয়া প্রস্তাবগুলো সনদে যুক্ত করেছে। কিন্ত বামপন্থীদের দেওয়া নোট অব ডিসেন্টগুলোর কারণও যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ হয়নি।এখানেও কমিশন পক্ষপাত করেছে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

জুলাই সনদে সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদে ক্রান্তিকালীন বিধানে ৬ষ্ঠ তফসিলে থাকা স্বাধীনতার ঘোষণা ‘ডিক্লারেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ এবং ৭ম তফসিলে থাকা ‘প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি, তা বাদ দিলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকে না।

সংবিধানের বিদ্যমান চার মূলনীতি—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ এবং ১৫০(২) অনুচ্ছেদের ক্রান্তিকালীন বিধানের তফসিল পরিবর্তনে সম্মতি প্রদান ও আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না।

কি অদ্ভুত!

যেখানে ভিন্নমত প্রকাশ করা কিংবা আদালতে যাওয়া যাবে না -এরকম সনদে কেন বামপন্থীরা বা গনতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসীরা স্বাক্ষর করবে?
সনদে এই ধরনের অনুচ্ছেদ রাখা নাগরিকের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এসব বিষয়ে অঙ্গীকার করা মানে অর্ন্তবর্তী সরকারের সকল কাজকে নিরবে সম্মতি প্রদান করা।

জেনেশুনে এই অপকর্মে যারা স্বাক্ষর করবেন, ইতিহাসের কাঠগড়ায় তাদের একদিন দাঁড়াতে হবে।

চব্বিশের গণভ্যুত্থানের মুল সুর ছিল বৈষম্য বিরোধী সমাজ,রাস্ট্র গড়ে তোলা। পুনরায় ফ্যাসিবাদের উত্থান যেন না হতে পারে। সেই সব কাজ করার জন্য সংস্কার জরুরি ছিল। সেই সংস্কারের মানে এই নয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে উড়িয়ে দেয়া, সংবিধান ছুঁড়ে ফেলা, দেশের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। কিন্ত সংস্কার কমিশন কাজ করতে গিয়ে একেবারে গুবলেট পাকিয়ে ফেলেছে। না হলে তারা কিভাবে জুলাই সনদ হতে 'অভ্যুত্থান–পরবর্তী সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার কথা আগে পাঠানো খসড়া সনদে উল্লেখ থাকলেও চূড়ান্ত সনদে ১০৬ অনুচ্ছেদের কথা বাদ দেয়?

এতে করে সরকারের আইনী ভিত্তি প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। আইনি ভিত্তি ছাড়া এবং আদেশের ব্যাপারে নিশ্চয়তা ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলে সেটা মূল্যহীন হবে।

লেখক : গণমাধ্যম কর্মী।

১৮৬ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন