ঝিনাইদহ পৌরসভায় ২০ কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ

বৃহস্পতিবার , ১৬ অক্টোবর, ২০২৫ ৬:১৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ঝিনাইদহ পৌরসভার ২০ কোটি টাকার সড়ক ও ড্রেনেজ নির্মাণ প্রকল্পে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এই প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ঠিকাদার এসএম শহিদুল ইসলাম।
অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, এলজিইডির আওতায় বাস্তবায়নাধীন আরইউটিডিপি (RUTDP) প্রকল্পে ৫ অক্টোবর একটি ২০ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করে ঝিনাইদহ পৌরসভা। এতে ১৯টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তবে অভিযোগ অনুযায়ী, ইজিবি (e-GP) পদ্ধতিতে টেন্ডার আহ্বান করা হলেও প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন তার পছন্দের ঠিকাদারকে গোপনে কাজ দিয়েছেন, যা সরকারি ক্রয় নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
অভিযোগকারীর দাবি, প্রকল্পে রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের নামে অতিরিক্ত ব্যয়ের হিসাব দেখানো হয়েছে। ৭১৪৫ মিটার রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ কাজের জন্য ১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকার স্টিমেট করা হলেও, রাস্তার পুরোনো নির্মাণসামগ্রী (স্যালভেজ) থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকার উপকরণ পুনরায় ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের প্রকৃত ব্যয় ২৪ থেকে ২৫ কোটি টাকা হওয়ার কথা থাকলেও তা গোপন করা হয়েছে।
বিশেষ করে, প্রিন্সিপাল করিমুদ্দিন সড়কে ‘ভুয়া বিলিংয়ের’ মাধ্যমে ২৭টি খুঁটি অপসারণের নামে প্রায় ১৬ লাখ টাকা এবং ১২৭০ মিটার পুরাতন রাস্তা সংস্কারে ৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। এ ছাড়াও, মাত্র ১২৭০ মিটার ড্রেন নির্মাণে ৪-৫ কোটি টাকার ব্যয় দেখানো হয়েছে, যদিও সেসব স্থানে পুরাতন ড্রেন আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, নবগঙ্গা নদী পর্যন্ত ১৩০০ মিটার ড্রেন নির্মাণের নামে পুরোনো ড্রেন সংস্কার করেই সম্পূর্ণ নতুন কাজের বিল দেখানো হয়েছে। এতে সরকারের বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
দুদকে অভিযোগ দায়েরের পর বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা। তদন্ত শুরু হলে প্রকল্পে আরও অনিয়মের চিত্র বেরিয়ে আসবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
এ প্রসঙ্গে ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন বলেন, “সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী করা হয়েছে। কিছু ঠিকাদার অতিরিক্ত সুবিধা না পেয়ে মিথ্যা অভিযোগ করছে।”
অন্যদিকে, পৌরসভার প্রশাসক রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, “বিষয়টি পিডি অফিস তদন্ত করে দেখবে। আমি নিশ্চিত না, প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন এই ঘটনায় জড়িত কিনা।”
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, অভিযুক্ত প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন দীর্ঘ এক যুগ ধরে একই পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে, এই দীর্ঘসময় কর্মস্থলে থাকার সুযোগে তিনি নিয়মিত অনিয়ম করে আসছেন। বদলির আদেশ পেলেও নানা আইনি জটিলতা তৈরি করে তিনি তার পদে বহাল থাকেন।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে—এমনটাই প্রত্যাশা সচেতন মহলের।
১০৯ বার পড়া হয়েছে