সর্বশেষ

জাতীয়

দেশে মানসম্পন্ন পণ্য আছে কয়টি, মান নিয়ন্ত্রণে পিছিয়ে বিএসটিআই !

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ ৫:৪৪ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
আজ ১৪ অক্টোবর বিশ্ব মান দিবস। পণ্য ও সেবার মান নিশ্চিতে যখন বিশ্বজুড়ে গুরুত্ব বাড়ছে, তখন বাংলাদেশে মান নিয়ন্ত্রণ ও বাধ্যতামূলক মানসনদের আওতায় পণ্যসংখ্যা আশানুরূপ বাড়েনি।

দেশে হাজার হাজার পণ্য উৎপাদন ও বিপণন হলেও বর্তমানে মাত্র ৩১৫টি পণ্য রয়েছে বাধ্যতামূলক মানসনদের আওতায়। মান প্রণয়ন ও তার প্রয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) গত চার দশকে প্রায় সাড়ে চার হাজার পণ্যের জন্য মান নির্ধারণ করলেও বাধ্যতামূলকভাবে মান অনুসরণ করতে হয় মাত্র কয়েকশ পণ্যে।

অপ্রতুল মানসনদ, ঝুঁকিতে ভোক্তা
খাদ্য, ইলেকট্রনিকস, কেমিক্যালসহ নানান পণ্য খাতে মানসনদের প্রয়োজন থাকলেও তা বাধ্যতামূলক করা হয়নি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, হাজারো পণ্যের এই বাজারে মাত্র ৩১৫টি পণ্য বাধ্যতামূলক মানের আওতায় থাকায় নিম্নমানের ও ভেজাল পণ্যে বাজার ভরে উঠছে।

বিএসটিআইর তথ্য অনুযায়ী, বাধ্যতামূলক মানসনদের আওতায় থাকা ৩১৫টি পণ্যের মধ্যে রয়েছে—খাদ্যপণ্য ১১৫টি, কেমিক্যাল ৭৫টি, যন্ত্রপাতি ৪৪টি, পাট ও বস্ত্র ৩১টি এবং ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য ৫০টি।

অন্যদিকে, মোট নির্ধারিত ৪৫০০টি মানের মধ্যে অধিকাংশই স্বেচ্ছামূলক রয়ে গেছে। এসব পণ্যে মানসনদ নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়, ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান মান ছাড়াই পণ্য বাজারজাত করছে।

মান নির্ধারণেও জটিলতা
বিএসটিআই বলছে, আন্তর্জাতিক মান (ISO, Codex) অনুসরণ করেও অনেক দেশীয় পণ্যের জন্য নির্দিষ্ট মান পাওয়া যায় না। ফলে স্থানীয়ভাবে মান প্রণয়ন করতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ হয়।

বিএসটিআইয়ের পরিচালক (সিএম) সাইফুল ইসলাম জানান, “দেশীয় পণ্যের জন্য অনেক সময় আন্তর্জাতিক মান খুঁজে পাওয়া যায় না। যেমন, ঝালমুড়ি কিংবা স্থানীয় কোনো যন্ত্রপাতি। এ ধরনের পণ্যের মান নির্ধারণে আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে সময় লাগে।”

নজরদারির অভাব, দাবি ক্যাবের
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মতে, পণ্যের মানসনদের পাশাপাশি প্রয়োজন সঠিক নজরদারি। ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, “নিম্নমানের পণ্য ও ভেজালের দৌরাত্ম্য মূলত দুর্বল নজরদারির ফাঁকফোকর থেকেই হচ্ছে। মানসনদ থাকলেও সেটা বাস্তবে ঠিকমতো মানা হয় কি না, সেটা দেখার দায় বিএসটিআইয়ের।”

তবে বিএসটিআইর দাবি, বাধ্যতামূলক পণ্যে নিয়মিত কারখানা ও বাজারভিত্তিক তদারকি করা হয়। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ফুড সেফটি প্যারামিটার চালুর উদ্যোগ
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিএসটিআই এখন ‘ফুড সেফটি প্যারামিটার’ চালুর কার্যক্রম শুরু করেছে। এর আওতায় খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রতিটি পর্যায়ে নিরাপত্তার সূচক নির্ধারণ করা হবে।

ফলে কীটনাশক, রাসায়নিক উপাদান, আর্দ্রতা, পিএইচ, তাপমাত্রাসহ বিভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে খাদ্যের গুণমান যাচাই করা যাবে। সাইফুল ইসলাম জানান, “কৃষি, মাছ, দুধসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্যের জন্য নিরাপত্তা প্যারামিটার তৈরি করা হচ্ছে।”

এর আগে প্রসাধনী পণ্যের জন্যও এ ধরনের সেফটি প্যারামিটার চালু করেছে সংস্থাটি।

বিশ্ব মান দিবস: প্রতিপাদ্য ‘সমন্বিত উদ্যোগে টেকসই উন্নত বিশ্ব নির্মাণে–মান’
আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ৫৬তম বিশ্ব মান দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—“সমন্বিত উদ্যোগে টেকসই উন্নত বিশ্ব নির্মাণে–মান”। বাংলাদেশেও দিবসটি উপলক্ষে বিএসটিআই নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু দিবস পালনে থেমে থাকলে চলবে না, মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে হবে। তা না হলে ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করা যাবে না, একইসঙ্গে শিল্প খাতেও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ।

 

১১৩ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন