সর্বশেষ

আন্তর্জাতিক

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি: মানুষের আশা, দ্বন্দ্বের সমাপ্তি ও মানবতার জয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫ ৬:২৯ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মানুষের অপেক্ষা, অবশেষে বহুল কাঙ্ক্ষিত গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভূতপূর্ব মধ্যস্থতায় এই শান্তি পরিকল্পনার ‘প্রথম পর্যায়’ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে দুই পক্ষই।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে ঘোষণা দিয়েছেন, “গর্বের সঙ্গে জানাচ্ছি, ইসরায়েল ও হামাস আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম দরজায় সই করেছে। খুব দ্রুত সব জিম্মি মুক্তি পাবে এবং ইসরায়েল তাদের সেনা নির্ধারিত সীমান্তে ফিরিয়ে নেবে”। মিসর, তুরস্ক, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অংশগ্রহণে কূটনৈতিক আলোচনা ও মধ্যস্থতা অব্যাহত রয়েছে।

চুক্তির আওতায়—

 

২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পাবে এবং ৪৮ জনের মরদেহ ধাপে ধাপে ফেরত পাঠানো হবে।
ইসরায়েলের কারাগারে থাকা বহু ফিলিস্তিনি বন্দিও মুক্তি পাবে, সেনা প্রত্যাহার করা হবে গাজার নির্ধারিত অঞ্চল থেকে।
মানবিক সহায়তার প্রবেশ সহজ হবে।

এই চুক্তিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিশ্বজুড়ে রাষ্ট্রপ্রধানরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন—ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির স্বপ্ন খোদ মানুষের চোখে ফিরেছে।

তবে যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় এখনও রয়ে গেছে। অতীতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত অব্যাহত থাকার অভিজ্ঞতা বিবেচনায় বিশ্লেষকরা সতর্ক, তবে এবারের চুক্তিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সরাসরি সম্পৃক্ততা কিছুটা ভিন্ন আবহ এনেছে। ট্রাম্পের কৌশলগত চাপে ইসরায়েল ও হামাস—উভয় পক্ষই কার্যকর আলোচনায় সম্মত হয়েছে। বিশেষত হামাসকে চুক্তি মানতে ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল, আর আরব-ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকেও চুক্তিতে ব্যাপক সমর্থন এসেছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, দুই বছরে কমপক্ষে ৬৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অর্ধেকের বেশি নারী-শিশু। গাজার ধ্বংসস্তূপ ও সংকট—বদ্ধ জল, খাদ্য, ওষুধ ও বিদ্যুৎহীন দিন-রাত, মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে এবার যুদ্ধবিরতির বার্তা নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন গাজা যুদ্ধের মধ্যে সাহসিক ভূমিকা রাখা ফিলিস্তিনি চিকিৎসক ড. হুসাম ইদ্রিস। গাজার আহত শিশু, নারী ও নির্যাতিত মানবতার পাশে থেকে তাঁর অবদানের জন্য বিশ্বসম্মান পেয়েছেন ড. ইদ্রিস। শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আশা থাকলেও শেষ পর্যন্ত মানবতার বাস্তব প্রতিচ্ছবিই বিশ্বমঞ্চে স্বীকৃতি পেয়েছে।

এদিকে, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের শহিদুল আলম ও ফ্লোটিলার অন্যান্য সদস্যেরা ইসরায়েলের হেফাজতে নিরাপদ আছেন, যদিও তাঁদের মুক্তি ও গাজার জনগণের মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ ও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে.বাংলাদেশের শহিদুল আলীমসহ গাজামুখী সর্বশেষ ফ্লোটিলার ১৫০ জন মানবাধিকারকর্মী এবং সাংবাদিক বর্তমানে ইসরায়েলি বাহিনীর হেফাজতে বন্দী অবস্থায় রয়েছেন। ৮ অক্টোবর ভোরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি নৌবাহিনী ‘কনসায়েন্স’ ও ‘হাজার ম্যাডলিন’সহ ফ্লোটিলার ন’টি নৌযান অবরোধ করে এবং সকল যাত্রীকে গ্রেফতার করে দক্ষিণ ক্‌টজিওত (Ktzi’ot) কারাগারে স্থানান্তর করে।

জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সমাজ এবং বাংলাদেশের উদ্যোগে শহিদুল আলীমসহ আটককৃত ফ্লোটিলা সদস্যদের দ্রুত মুক্তির ও গাজা সহায়তা পৌঁছানোর জন্য দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলছে। বর্তমানে সকলে শারীরিকভাবে নিরাপদ, তবে তাদের মুক্তি ও মানবিক সহায়তার বিষয়টি নির্ভর করছে আইনি, কূটনৈতিক ও গণ-চাপের ওপর।

গাজার মানুষের উচ্ছ্বাস, বিরোধী পক্ষের সতর্ক আশাবাদ, কূটনীতির নানামুখী টানাপোড়েন—সবকিছু মিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি এক নতুন পরিবর্তনের প্রথম ধাপে পৌঁছেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে দুই পক্ষ ও আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতিশ্রুতি ও কার্যক্রমের ওপর। তবে এই অগ্রগতিতে গাজা উপত্যকা নতুন আশার আলো দেখছে—ক্ষুধার্ত শিশু, আতঙ্কগ্রস্ত পরিবার ও বিপর্যস্ত সমাজের জন্য শান্তির সূচনা যেন সত্যিই কার্যকর হয়—এটাই সবার প্রত্যাশা।

১২৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন