সর্বশেষ

সারাদেশ

কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীতে আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষ, গোলাগুলিতে আহত ৯, উত্তেজনা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

বৃহস্পতিবার , ৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১:৪৬ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পদ্মা নদীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় দু'পক্ষের দফা দফায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ভোর রাতে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বেড় কালোয়া জেলেপাড়ার থেকে কালোয়া বাজার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় অন্তত দেড়ঘণ্টাব্যাপী এ গুলাগুলির ঘটনা ঘটে।

এতে উভয় পক্ষ্যের অন্তত ৯ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়াও বেশকিছু বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ দিকে গুলাগুলির ঘটনায় এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। আইন- শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

আহতরা হলেন - বের কালোয়া গ্রামের আনারুলের ছেলে আকরাম হোসেন (৩১), দুলাল শেখের ছেলে রাজিব শেখ (৩২), আলম মণ্ডলের ছেলে আলামিন মণ্ডল (৩৩), বজলু শেখের ছেলে রুহুল আমীন (৫২), কুদ্দুস শেখের ছেলে আশিকুর রহমান (৩২), কেরায় শেখের ছেলে তাজিম শেখ (৫০)। তারা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যান্যরা হলেন একই গ্রামের জেহের শেখের ছেলে কুদ্দুস শেখ (৬৫), মৃত মোশারফের ছেলে দুলাল হোসেন (৪২), মহির শেখের ছেলে খুতে শেখ (৩৫)। তারা বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

স্থানীয়দের ভাষ্য, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে পদ্মায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। তবুও নদীতে অবৈধভাবে মাছ ধরা, বালু উত্তোলন ও জেলেদের কাছ চাঁদা উত্তোলন নিয়ে কয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও ইউপি সদস্য রাশিদুল ইসলাম, তার ভাগ্নে সালমান রহমান বকুল গ্রুপের সঙ্গে ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ও সাবেক ইউপি সদস্য বকুল বিশ্বাস ও জেলেপাড়ার সরদার ইয়ারুল ইসলাম গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গুলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। তবে এ নিয়ে উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলছেন।

বিএনপি নেতা বকুল বিশ্বাস ও জেলে নেতা ইয়ারুল গ্রুপের অভিযোগ, কয়া ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রাশিদুল ইসলাম ও তার ভাগ্নে বকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল খালেকের ছেলে রিপন, শিপন, লিটনসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে অতর্কিত গুলিবর্ষণ করেছে এবং বেশিকিছু বাড়িতে ভাঙচুর লুটপাট চালিয়েছে। তাদের ভাষ্য, পদ্মায় অবৈধভাবে মাছ ধরা, বালু উত্তোলন ও চাঁদাবাজি করার জন্য তারা এমন হামলা চালিয়েছে। এতে এ গ্রুপের ৬জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

আর বিএনপি নেতা রাশিদুল ইসলাম গ্রুপের অভিযোগ, বিএনপি নেতা বকুল বিশ্বাস কয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হাজীর ভাই সোহেল রানা, আওয়ামী লীগের সমর্থক ও জেলেদের নেতা ইয়ারুল ইসলামের সঙ্গে মিলেমিশে পদ্মায় মাছ, বালু লুট ও চাঁদাবাজি করার জন্য গুলি চালিয়েছে। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সকাল ১১টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কালোয়া বাজার, বেড় কালোয়া মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের টহল রয়েছে। কালোবাজারের বিএনপির কার্যালয় এবং জেলেপাড়ার কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে।

এ সময় জেলেপাড়ার সাইদুলের স্ত্রী দৃষ্টি খাতুন বলেন, বিএনপি নেতা বকুল ও সাইদুল মেম্বরের নেতৃত্বে খালেক মেম্বরের ছেলে রিপন, শিপন, লিটনসহ আরো অনেকে ফজরের আযানের পর গুলি করতে করতে এসেছে বাড়িতে ভাঙচুর করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করেছে। থানায় মামলা করব।

মৃত জিয়ারুলের স্ত্রী রিনা খাতুন বলেন, চাঁদার জন্য নদীতে নামতে দিচ্ছেনা রাশিদুল মেম্বররা। চাঁদা না পেয়ে ভোরে বাড়িতে হামলা করে রিপন, লিটন এসে দুটো মোবাইল ফোন ও সোনার চেইন নিয়ে গেছে।

আহত বিএনপির কর্মী কুদ্দুস শেখ বলেন, ফজরের নামাজ পড়তে যাচ্ছিলাম। তখন রাশিদুল ও বকুল আওয়ামীগের লোকজন সাথে করে বৃষ্টির মত গুলি করতে থাকে। দৌড়ে পালালেও আমার ডান হাতে এসে একটি গুলি লাগেছে।

কালোয়ামোড়ে ভাংরী ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন বলেন, ফরিদপুর থেকে রাতে বাড়ি আসছি। আর ভোর বেলায় ওরা হামলা করেছে। আমার হাতে মুখে বুকে ছরড়া গুলি ঢুকে আছে।


তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিপক্ষের আহত রাজিব শেখ বলেন, গুলির শব্দে ভোরে ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে আসতেই দেখি প্রতিপক্ষের ইয়ারুল, সোহেল, রুহুল সহ অনেকেই গুলি করতে করতে এগিয়ে আসছে। তখন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও হাতে পায়ে মুখে গুলি লেগেছে। আমরা তিনজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি।

অভিযোগ অস্বীকার করে ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রাশিদুল ইসলাম বলেন, কিছু দিন আগে আমার ওপর হামলা করেছিল প্রতিপক্ষের লোকজন। নদীতে চাঁদাবাজি ও লুটপাটের জন্য ইয়ারুল তার লোকজন নিয়ে গুলি করেছে। এতে আমার ৩ সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। থানায় মামলা করা হবে।

গুলাগুলির ঘটনা নিশ্চিত করে কুমারখালী থানার ওসি খন্দকার জিয়াউর রহমান বলেন, খবর পেয়ে এসে দেখি হামলাকারীরা কেউ নেই। এতে এখন পর্যন্ত ৬ - ৭ জন গুলিবিদ্ধ হওয়া এবং কিছু বাড়িতে ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। আহতরা বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাধীন। তবে বর্তমান এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের থানায় মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে কি কারণে হামলা বা কারা ঘটিয়েছে এমন ঘটনা - তা জানা যায়নি। এসব নিয়ে কাজ করছে পুলিশ।

১৩৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন