কোচ বাড়িয়ে নয়, ট্রেনের ট্রিপ বাড়িয়ে যাত্রী চাপ সামলাবে মেট্রোরেল

বৃহস্পতিবার , ৯ অক্টোবর, ২০২৫ ৮:১৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
যাত্রী চাহিদা বাড়লেও ঢাকা মেট্রোরেলে আপাতত নতুন কোচ যুক্ত হচ্ছে না। বাড়তি খরচ ও প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
বিকল্প হিসেবে ট্রেনের সংখ্যা তথা ট্রিপ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ জানান, নতুন কোচ সংযোজনের বিষয়টি আপাতত স্থগিত রয়েছে। তাঁর ভাষায়, “নতুন করে বিনিয়োগ করা কঠিন। তাই এখন ট্রেনের ট্রিপ বাড়ানোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।” নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত জনবলের প্রশিক্ষণ শেষে আগামী এক-দুই মাসের মধ্যেই ট্রিপ বাড়ানো হবে বলে তিনি জানান।
প্রতিটি ট্রেনে ৬ কোচ, অব্যবহৃত ৭ সেট
বর্তমানে ঢাকায় চলাচলকারী প্রতিটি মেট্রোট্রেনে রয়েছে ছয়টি কোচ—দুই প্রান্তে ট্রেলার কোচ এবং মাঝখানে চারটি মোটর কোচ। এই ধরনের ২৪টি ট্রেন সেট থাকলেও এখন নিয়মিত চলাচল করছে ১৩টি। বিশেষ প্রয়োজনে ৩টি সেট প্রস্তুত রাখা হয়, আর ৭টি সেট একেবারেই অব্যবহৃত রয়েছে।
ডিএমটিসিএলের হিসাবে, একটি ট্রেনে দাঁড়িয়ে ও বসে সর্বোচ্চ ২,৩০০ যাত্রী পরিবহন সম্ভব। অতিরিক্ত দুটি কোচ যুক্ত করা গেলে এই সংখ্যা বাড়িয়ে ৩,৩০০ করা যেত। একইসঙ্গে লোকবল ও জ্বালানি খরচ তেমন বাড়ত না। কিন্তু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মতে, দুটি কোচ যোগ করতে নতুন বিনিয়োগ ও দীর্ঘ সময় প্রয়োজন, যা এখন বাস্তবসম্মত নয়।
স্টেশনে জায়গা থাকলেও সংকেত-দরজার ঘাটতি
যাত্রী চাহিদা মাথায় রেখে শুরুতেই স্টেশনগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল আট কোচ ধারণের উপযোগী করে। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য ১৭০ মিটার হলেও বর্তমানে ছয় কোচের জন্যই দরজা ও সংকেতব্যবস্থা রয়েছে। অতিরিক্ত কোচ চালু করতে হলে ১৭টি স্টেশনেই নতুন করে দরজা ও সংকেত স্থাপন করতে হবে। বিদ্যুৎ সংযোগেও আনা লাগবে পরিবর্তন।
দ্রুত যাত্রী বেড়ে গেছে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চাপ
২০২২ সালের ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর ২০২৩ সালের নভেম্বরে মতিঝিল পর্যন্ত লাইন চালু হলে যাত্রী চাপ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। প্রকল্প সমীক্ষা বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ যাত্রীর চাপ বাড়বে—কিন্তু বাস্তবে সেই চাহিদা নির্ধারিত সময়ের আগেই দেখা দিয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৪ লাখের বেশি যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করেন। ৬ আগস্ট ছিল সর্বোচ্চ, যেদিন যাত্রীসংখ্যা পৌঁছায় ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭৪৬-এ।
ভবিষ্যতের লাইনগুলোতে ৮ কোচেই ট্রেন নির্মাণের সিদ্ধান্ত
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ভবিষ্যতের মেট্রোরেল প্রকল্পগুলো—যেমন লাইন-১, লাইন-৫ ইত্যাদির ট্রেনগুলো আট কোচের উপযোগী করেই তৈরি করা হবে। তবে লাইন-৬–এর উত্তরা থেকে কমলাপুর অংশটি পুরোপুরি চালু হতে এখনও দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: সর্বোচ্চ ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, “বিপুল বিনিয়োগে নির্মিত এই অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। যাত্রী বাড়লে আয় বাড়বে এবং সড়কেও চাপ কমবে।” তাঁর মতে, নতুন কোচ না যোগ করা গেলে ট্রেনের ট্রিপ এবং রাতে চলাচলের সময়সীমা বাড়ানোর দিকেও নজর দেওয়া উচিত।
১২২ বার পড়া হয়েছে