খাবারে প্লাস্টিক! রান্নাঘর থেকে পানিতে, মাইক্রোপ্লাস্টিকে ছেয়ে যাচ্ছে জীবন

বৃহস্পতিবার , ৯ অক্টোবর, ২০২৫ ৭:৫৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি স্তরে অনুপ্রবেশ করছে প্লাস্টিক। রান্নার পাত্র, পানির বোতল, বাজারের প্যাকেট, এমনকি প্রিয় চা-কফির কাপেও মিলছে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা, যাকে বলা হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক।
একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে, এসব মাইক্রোপ্লাস্টিক এখন খাবার, পানি, এমনকি রান্নাঘরের নানা সামগ্রীর মধ্য দিয়েও আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় ও সিয়াটল চিলড্রেনস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের শিশুবিশেষজ্ঞ ডা. শীলা সত্যনারায়ণ বলছেন, "প্লাস্টিক থেকে মুক্ত থাকা কঠিন হলেও এটি অপরিহার্য। ছোট ছোট অভ্যাসে পরিবর্তন এনে ধীরে ধীরে প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো সম্ভব।"
গবেষণা বলছে, প্লাস্টিকে রাখা খাবারে মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকা নিশ্চিত। এমনকি প্লাস্টিকের প্যাকেট খুললেই প্রতি সেন্টিমিটারে ২৫০টির মতো মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। পুরোনো মেলামাইন, সিলিকন বা প্লাস্টিকের পাত্র থেকে আরও বেশি কণা বিচ্ছুরিত হয়।
ফল, শাকসবজি, রুটি, দুধ, মধু, মাছ, মাংস—সবখানেই পাওয়া যাচ্ছে এসব ক্ষুদ্র কণা। আশ্চর্যের বিষয়, লবণ ও ডিমেও মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবেশ দূষণ ও শিল্প এলাকার চাষাবাদে এর প্রভাব বেড়েই চলেছে।
এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০১৮ সালে মানুষের দেহে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশের পরিমাণ ১৯৯০ সালের তুলনায় ৬ গুণ বেশি।
পানির মধ্যেও রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের সরব উপস্থিতি। বোতলজাত পানির প্রতি লিটারে প্রায় ৫৫৩টি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় ১৭৭টি ট্যাপের পানির নমুনার সবগুলোতেই মিলেছে প্লাস্টিক।
চীন, জাপান, ইউরোপ, সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া ফলাফলও ছিল এক রকম। গবেষকেরা বলছেন, উন্নতমানের পানি ফিল্টার ব্যবহার কিছুটা হলেও এ সমস্যা থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।
রান্নাঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন প্লাস্টিকের চপিং বোর্ড, স্পঞ্জ, ব্লেন্ডার, নন-স্টিক পাত্র—সবই মাইক্রোপ্লাস্টিকের উৎস। একটি চপিং বোর্ডে কাটাকুটির সময় প্রতিটি স্লাইসে নির্গত হতে পারে ১০০ থেকে ৩০০টি কণা। নন-স্টিক পাত্রে দাগ বা আঁচড় পড়লে প্রতিবার রান্নায় নির্গত হয় হাজার হাজার প্লাস্টিক কণা।
স্পঞ্জ বা প্লাস্টিকের মাজুনির ক্ষেত্রেও বিপদের শেষ নেই। পুরোনো মাজুনি থেকে প্রতিগ্রামে নির্গত হতে পারে প্রায় ৬৫ লাখ মাইক্রোপ্লাস্টিক।
গরম বা ঠান্ডা, উভয় অবস্থাতেই প্লাস্টিক থেকে মাইক্রোকণা বেরিয়ে আসে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাইক্রোওয়েভে তিন মিনিট গরম করলে প্রতি বর্গসেন্টিমিটারে উৎপন্ন হয় প্রায় ৪২ লাখ ২০ হাজার কণা। গরম চা বা কফি যখন ডিসপোজেবল প্লাস্টিক কাপের ভেতর রাখা হয়, তখন প্লাস্টিক গলেই মিশে যাচ্ছে পানীয়তে।
লবণ, তেল, অ্যাসিডিক উপাদান ও উচ্চ তাপমাত্রা—এই চারটি উপাদান প্লাস্টিক ভাঙার হার আরও বাড়িয়ে দেয়।
কী করণীয়?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিক একেবারে বাদ দেওয়া কঠিন হলেও এর ব্যবহার সীমিত করা সম্ভব। পুরোনো বা ব্যবহারের অযোগ্য প্লাস্টিক সরিয়ে কাচ, স্টেইনলেস স্টিল বা পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করাই সঠিক সিদ্ধান্ত। এছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিবর্তে তাজা খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা।
প্লাস্টিক দূষণ যদি বৈশ্বিকভাবে ৯০ শতাংশ কমানো যায়, তাহলে মানবদেহে মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণের মাত্রাও অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব—মন্তব্য গবেষকদের।
১১৮ বার পড়া হয়েছে