ফিকি-এনবিআর বৈঠক: ভ্যাট ও দ্বৈত কর সমস্যার সমাধান দাবি

বৃহস্পতিবার , ৯ অক্টোবর, ২০২৫ ৭:২৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশে ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে কর ও ভ্যাট সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতার সহজ সমাধান চেয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)।
বুধবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কার্যালয়ে আয়োজিত ‘মিট দ্য বিজনেস’ শীর্ষক এক বৈঠকে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে ফিকির নির্বাহী পরিচালক নূরুল কবির অনলাইন ও অফলাইনে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক ভ্যাট, দ্বৈত কর, পণ্য খালাসে বিলম্ব ও অর্জিত মুনাফা বিদেশে পাঠানোর সময় কর সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করেন।
সংগঠনের পরিচালক ও এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব উর রহমান বলেন, "বিদেশি কোম্পানিগুলোকে ডিভিডেন্ড ও রয়্যালটি পেমেন্টসহ বিভিন্ন খাতে বৈধভাবে অর্থ পাঠাতে হয়। এ প্রক্রিয়ায় ভ্যাট, উৎসে কর এবং করবহির্ভূত ব্যয়ের বিষয়টি আরও স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত করা প্রয়োজন।"
তিনি আরও বলেন, দ্বৈত করের সমস্যায় অনেক কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পারে।
দারাজ-এর একজন প্রতিনিধি অভিযোগ করেন, ই-কমার্স খাতে পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়, যেখানে একই পণ্য অফলাইনে বিক্রি করলে ভ্যাট মাত্র ৭.৫ শতাংশ। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, মোবাইল ফোন অনলাইনে বিক্রি করলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়, অথচ অফলাইনে তা ৭.৫ শতাংশ। এ ধরণের বৈষম্য দূর করে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ গড়ে তোলার দাবি জানান তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত অন্য ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বন্দরে পণ্য খালাসে অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব ও অতিরিক্ত যাচাই-বাছাইয়ের কারণে তারা ব্যবসায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, "আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দু-এক দিনের মধ্যেই পণ্য খালাস নিশ্চিত করা। অ্যাসেসমেন্ট কমিটি পণ্যের আগেই গঠন করা গেলে সময় বাঁচবে।"
তিনি বলেন, “আমদানি পণ্যের ভ্যালুয়েশন নিয়ে অহেতুক জটিলতা থাকা অনুচিত। আইন অনুযায়ী যথাযথ শুল্ক আদায় করতে হবে, তবে বাড়তি নির্ধারণ করা যাবে না। কর ফাঁকি রোধে ব্যবস্থা নেব, কিন্তু হয়রানি চলবে না।”
তিনি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনৈতিক আচরণে অভিযোগ পেলে অনলাইনে জানানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ব্যবসায়ীদের সম্মান দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। ব্যবসা বাড়লে রাজস্বও বাড়বে।”
তিনি আরও বলেন, “এনবিআরে দায়িত্ব নির্ধারণে সমস্যা আছে—একজন আরেকজনের কাছে দায়িত্ব ঠেলে দেন। এতে কাজের গতি কমে যায়। দরকষাকষি ও আমলাতান্ত্রিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”
অন্যদিকে, মঙ্গলবার এক আলাদা অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দেশের ব্যয় ও আয় সমন্বয়ে বড় গ্যাপ রয়েছে। রাজস্ব আদায় না বাড়াতে পারলে অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাকসেশন) অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে কর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, "ভিন্নমত থাকতে পারে, তবে দূরত্ব ভুলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নতুন উদ্যমে কর প্রশাসনকে এগিয়ে যেতে হবে।"
বিদেশি বিনিয়োগ টিকিয়ে রাখতে ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে কর কাঠামোর জটিলতা ও বৈষম্য দূর করা এখন সময়ের দাবি। এনবিআরের আশ্বাস বাস্তবায়ন হলে ব্যবসায়ীরা সত্যিকারের সহায়তা পাবেন—এটাই প্রত্যাশা।
১২৯ বার পড়া হয়েছে