দৌলতপুরে আধিপত্য বিরোধে হত্যা: আতঙ্কে মন্ডল বংশ, পুরুষশূন্য গ্রাম

বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৫ ৭:০৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের বাগোয়ান কান্দির পাড়া গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে এক হত্যাকাণ্ডের পর চরম অনিরাপত্তা ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে মন্ডল বংশের বাসিন্দারা।
গ্রামটি এখন কার্যত পুরুষশূন্য। কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো জীবন-জীবিকা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
হত্যা: সংঘাতের সূচনা
গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে সর্দার বংশের সারফান সর্দার (৫০) কে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পাশের একটি বাঁশবাগানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। অভিযোগ, এই ঘটনার পর থেকেই প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছে প্রতিপক্ষ। সর্দার, বিশ্বাস ও মুন্সি বংশ একত্র হয়ে মন্ডল বংশের উপর নির্যাতন, লুটপাট ও হামলা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
দাবি: হামলা, লুটপাট ও হয়রানির শিকার মন্ডল পরিবার
হত্যার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে মন্ডল পরিবারের একাধিক বাড়িতে লুটপাট ও হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
৯ সেপ্টেম্বর: সোহেল ও সাদ্দাম মন্ডলের বাড়িতে লুটপাট, গরু নিয়ে যাওয়া।
১৭ সেপ্টেম্বর: মিলন মন্ডলের মায়ের কাছ থেকে মরিচ কেড়ে নেওয়া, হাপি মন্ডলের বিক্রির টাকা ছিনতাই।
১৮ সেপ্টেম্বর: কামাল মন্ডলের জমির ঘাস কেটে নেওয়া ও মারধর।
২৫ সেপ্টেম্বর: রমজান মন্ডলের পান ভেঙে নেওয়া।
১ অক্টোবর: জানু, সামাজুল ও আকরাম মন্ডলের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট।
২ অক্টোবর: মকলেস মন্ডলের দোকান জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া।
৩ অক্টোবর: হাবু মন্ডলের বরজে ভাঙচুর, ধানখেত থেকে সেচের স্যালো মেশিন চুরি।
এছাড়া আরও অনেক হামলা ও হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আক্রান্ত পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা বাড়ি ছাড়া অবস্থায় রয়েছেন। কেউ গ্রামে ফিরলেই প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছেন।
সংকটে শিক্ষার্থী ও নারী-শিশু
স্থানীয়দের দাবি, হামলার ভয়ে এলাকার নারী ও শিশুরাও এখন ঘরবন্দি। ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষিজমিতে কাজ করা তো দূরের কথা, কেউ ঘর থেকে বের হতেও পারছেন না।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
মন্ডল পরিবারের অভিযোগ, তারা বারবার থানায় জানালেও পুলিশ কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দৌলতপুর থানার সাবেক পুলিশ ইন্সপেক্টর শামীম মুসা বলেন, “ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকলে সোহেলের বাড়িতে হামলা বা এমন হত্যাকাণ্ড ঘটতো না।”
সেনা হস্তক্ষেপের দাবি
চরম অনিরাপত্তার মুখে পড়া মন্ডল বংশের সদস্যরা দৌলতপুর সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তারা দ্রুত তদন্ত, সেনা টহল ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, প্রশাসনের ব্যর্থতায় তাঁরা ন্যায্য নিরাপত্তা পাচ্ছেন না।
পুলিশের অবস্থান
এই বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলায়মান শেখ বলেন, “এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। হত্যার পর পুলিশ দীর্ঘদিন ঘটনাস্থলে অবস্থান করেছে এবং এখনো রাতভর টহল দিচ্ছে। আমাদের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ আসেনি। তারপরও যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।”
১১৯ বার পড়া হয়েছে