নওগাঁয় বাণিজ্যিকভাবে মিঠা পানের চাষ, রপ্তানি বন্ধে হতাশ চাষীরা

রবিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৫ ৫:৪৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
নওগাঁয় বাণিজ্যিকভাবে মিঠা জাতের সুস্বাদু পানের চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হলেও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে রপ্তানি বন্ধ থাকায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষীরা।
উৎপাদন ভালো হলেও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশ তারা।
বাংলার সংস্কৃতি, আতিথেয়তা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অবিচ্ছেদ্য অংশ পানের চাহিদা দেশে এখনও ব্যাপক। ধর্মীয় উৎসব থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে পান ব্যবহৃত হয়। একইসঙ্গে এটি একটি অর্থকরী ফসল হিসেবেও বিবেচিত।
নওগাঁ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ধান চাষের পাশাপাশি এখন পান চাষেও আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। উঁচু ও ছায়াযুক্ত বেলে-দোঁআশ জমি পানের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় এবং একবার রোপন করলেই দীর্ঘ সময় ফলন পাওয়া যাওয়ায় চাষ বাড়ছে। খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় লাভজনক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এ চাষ।
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল গ্রামের কৃষক সাদ্দাম হোসেন জানান, তিনি নওগাঁ সদরের শালুকা গ্রামে ৫ বিঘা জমি ৬ বছরের জন্য বন্ধক নিয়ে পান চাষ করছেন। জমি বন্ধকসহ মাচা তৈরি, চারা রোপণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজে খরচ হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ টাকা। রোপনের ৬ মাস পর থেকে পান সংগ্রহ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার টাকার পান বিক্রি করছেন।
তবে সাদ্দাম হোসেন বলেন, "বর্তমানে বাজারে পানের দাম অনেক কম। প্রতি বিড়া (৫০টি পানের পাতা) ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে এক বছর আগে একই বিড়া বিক্রি হতো ২০০ টাকায়। সাপ্তাহিক খরচ, যেমন সার, সেচ, কীটনাশক ও শ্রমিক মজুরি বিবেচনায় বর্তমানে লাভের পরিমাণ খুবই কম।"
একই ধরনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন পান চাষী বাদল হোসেন। তিনি জানান, "আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন ভালো হয়েছে, কিন্তু দাম না থাকায় উৎপাদন খরচ ওঠানোই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি বন্ধ থাকায় বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ তৈরি হয়েছে, ফলে কমেছে দাম। রপ্তানি আবার চালু হলে কৃষকরা ভালো দাম পাবেন।"
পানচাষী লিটন আহমেদ জানান, তিনি মূলত মিঠা জাতের পান চাষ করেন। পানে রোগবালাই কম হওয়ায় এটি অন্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভজনক। তিনি বলেন, "শক্ত পাতার পানের চাহিদা বেশি থাকে, যা রাজশাহী ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করি।"
এদিকে পান বরজে কাজ করেন এমন শ্রমিক আকাশ আহমেদ জানান, "প্রতিদিন পান সংগ্রহ, মাচা মেরামত ও সেচসহ বিভিন্ন কাজে ৮-১০ জন শ্রমিক লাগে। একজন শ্রমিক প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয় করেন। তবে এ কাজ সবাই পারেন না, রাজশাহীর মোহনপুরের শ্রমিকরা এতে বেশি দক্ষ।"
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মোঃ খলিলুর রহমান জানান, "জেলায় বর্তমানে প্রায় ৪৩ হেক্টর জমিতে মিঠা ও সাচি জাতের পান চাষ হচ্ছে। এতে বছরে প্রায় ৫২৬ টন পান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সদর, মান্দা, বদলগাছী ও সাপাহার উপজেলায় পানচাষ বেশি হয়।"
তিনি আরও বলেন, “পানে রোগ-বালাই কম থাকায় চাষের খরচও কম। স্বল্প সময়ে লাভবান হওয়া সম্ভব হওয়ায় কৃষকদের বাড়ির পাশে স্বল্প জমিতে পান চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে।”
চাষীরা আশা করছেন, দ্রুত রপ্তানি বাজার খুলে গেলে আবারও পান চাষ লাভজনক হয়ে উঠবে এবং তারা অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
১১৪ বার পড়া হয়েছে