সর্বশেষ

জাতীয়

ভয়াবহ তাপপ্রবাহে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত; আগামী দিন আরও খারাপ হতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

রবিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৫ ৪:২৮ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
বাংলাদেশে গরম আর গরমই যেন নতুন বাস্তবতা। গেল বছরের এপ্রিল-মে মাসে ৩৫ দিনের ভয়াবহ তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ওই সময় ৭৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। এর ফলে শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন শহর ও অঞ্চল সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষি, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে।

বিশ্বব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, গরমের কারণে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের প্রায় ২৫ কোটি কর্মদিবস হারিয়েছে মানুষ, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা—দেশের জিডিপির ০.৪ শতাংশ।

আবহাওয়াবিদ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্লোবাল ও স্থানীয়—দুই কারণেই বাড়ছে তাপমাত্রা। জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি মানুষের অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বৃক্ষ নিধন, জলাশয় ভরাট, অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট—এই পাঁচ মহানগরের অন্তত ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ তীব্র গরমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই রয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষ। বিশেষভাবে শিশুরা ও প্রবীণরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।

আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ক্লাইমেট সেন্ট্রালের তথ্য বলছে, জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫৭ মিলিয়ন মানুষ অর্থাৎ জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশ কমপক্ষে ৩০ দিন ধরে অতিমাত্রায় গরমের মধ্যে ছিলেন। এর মধ্যে ৩০ মিলিয়ন মানুষ অতিরিক্ত ৩০ দিন তাপপ্রবাহ সহ্য করেছেন শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।

দেশের গড় তাপমাত্রা গত ৬ দশকে ০.৭ থেকে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে। ধারাটি অব্যাহত থাকলে আগামী তিন দশকে এটি ১.৪ ডিগ্রি ছাড়াতে পারে।


নগর থেকে গ্রাম—কোথাও রেহাই নেই
শুধু ঢাকা নয়, বিভাগীয় শহরগুলোতেও বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ গরমের দিন।

চট্টগ্রাম: বছরে ৫৯ দিন জলবায়ুর কারণে অতিরিক্ত গরম
ঢাকা: ৫২ দিন
রংপুর: ৩৭ দিনের মধ্যে ২৪ দিন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে

 

শিল্প, কৃষি ও শ্রমঘন পেশায় এসব অঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছেন। পানির সংকট, বিদ্যুৎচাপ, ফসলের ক্ষতি এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি—সব মিলিয়ে চরম চাপ অনুভব করছে সাধারণ মানুষ।

সারা বিশ্বেই দেখা দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ চিত্র। ইউরোপে নজিরবিহীন দাবানল, কানাডায় রেকর্ড অগ্নিকাণ্ড, যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ বন্যা এবং শীতপ্রধান দেশগুলোতেও বিরল তাপপ্রবাহ—সবই এই সংকটের প্রমাণ।

ক্লাইমেট সেন্ট্রালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. ক্রিস্টিনা ডাহল বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ভবিষ্যতের হুমকি নয়, এখনকার বাস্তবতা। কার্বন নিঃসরণ কমাতে দেরি করলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।”


কী করণীয় এখন?
পরিবেশবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ ও নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যত হবে আরও ভয়ঙ্কর।
প্রস্তাবিত সমাধানগুলো হচ্ছে:

নগরায়ণে সবুজায়ন বৃদ্ধি ও ছাদবাগান
জলাধার সংরক্ষণ ও জলাশয় নির্মাণ
নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার
জলবায়ু সহনশীল ভবন নির্মাণ
বিদ্যুৎচালিত গণপরিবহন বাড়ানো
তাপপ্রবাহকে রাষ্ট্রীয় দুর্যোগ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া
সময়ভিত্তিক তাপপ্রবাহ পূর্বাভাস ও পরিকল্পনা

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আজ জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি প্রত্যক্ষ করছে। সচেতনতা, আন্তরিকতা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমেই কেবল এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব। এখনই সময়—শুধু ভবিষ্যতের কথা না ভেবে, বর্তমানকে রক্ষা করা।

১০৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন