তেজগাঁও সড়কের ৭০ শতাংশ দখলে ট্রাক-বাস: চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী

রবিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৫ ৪:১৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ঢাকার তেজগাঁও ও আশপাশের এলাকাগুলো কার্যত ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও বাসচালকদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই সমস্ত যানবাহন এভাবে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে সড়কের প্রায় ৭০ শতাংশ অংশ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এতে দিনরাত লেগে থাকছে তীব্র যানজট। স্কুল-কলেজ, অফিস কিংবা হাসপাতাল—সবখানেই পৌঁছাতে সাধারণ মানুষকে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় থেকে শুরু করে বিজয় সরণির ফ্লাইওভার সিগন্যাল পর্যন্ত এবং কারওয়ান বাজার থেকে তেজগাঁও রেলস্টেশন পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে সারি সারি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও বাস পার্ক করা। এসেনসিয়াল ড্রাগস, হলি ক্রস কলেজ, বিজি প্রেসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সামনে ফুটপাতেও রাখা হচ্ছে এসব যানবাহন। ফলে পথচারীদের হেঁটে চলারও উপায় নেই।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব যানবাহনের পেছনে সক্রিয় রয়েছে বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়ন ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা। চালকরা প্রকাশ্যেই বলছেন, পার্কিংয়ের জন্য তারা ভাড়া দেন ইউনিয়নের লোকদের। এভাবে প্রতিটি গাড়ি থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ৪০ টাকা করে তোলা হচ্ছে।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তেজগাঁওয়ে পাঁচ একর জমিতে একটি বহুতল ট্রাক পার্কিং নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমার পর সমাধান হলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগেই থেমে যায়। সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম এই পার্কিংয়ের ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তা আর এগোয়নি। বর্তমানে তিনি কারাগারে থাকায় উদ্যোগটি ঝুলে আছে।
শুধু তেজগাঁও নয়, মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে এফডিসি মোড় হয়ে গুলশান লিঙ্ক রোড পর্যন্ত এলাকাগুলোর সড়কেও চলছে একই চিত্র। মহাখালী টার্মিনালের বাসগুলো প্রধান সড়কেই পার্ক করা হচ্ছে। পাশাপাশি রিকশার গ্যারেজও গড়ে উঠেছে অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোতে। রিকশার মালিকদের কাছ থেকেও নেওয়া হচ্ছে পার্কিং ফি। এ কারণে শহীদ তাজউদ্দীন সরণি থেকে হাতিরঝিল পর্যন্ত যানজট নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রিকশার গ্যারেজ পরিচালনাকারী ইসমত আলী বলেন, “৪০ টাকা করে রিকশা রাখার টাকা নিই। কিছু ভাইদের দিই, বাকিটা রাখি।” তবে ‘ভাই’ বলতে কারা বোঝানো হচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি মুখ খুলেননি।
অন্যদিকে, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন জানান, “বারবার বলা হলেও কোনো সরকারই আমাদের জন্য নির্ধারিত টার্মিনাল তৈরি করেনি। আমরা তো রাস্তায় গাড়ি রাখতে চাই না। কিন্তু জায়গা না থাকায় বাধ্য হচ্ছি।”
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, “একটি মেগাসিটি সচল রাখতে যাত্রী ও মালবাহী উভয় যানবাহনের জন্য আলাদা পার্কিং জোন থাকা আবশ্যক। শহরের ভেতরে এভাবে ট্রাকস্ট্যান্ড রাখলে তা শহরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়। ট্রাকের জন্য শহরের সীমান্তবর্তী এলাকায় টার্মিনাল করতে হবে।”
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, “আমরা দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই পরিস্থিতির সমাধানে কী করা যায়, তা খতিয়ে দেখব।”
তেজগাঁওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যদি দীর্ঘদিন ধরে এমন যানজট, দখল আর বিশৃঙ্খলা চলতে থাকে, তাহলে শুধু রাজধানীর চলাচল ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে না, অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই দ্রুত টার্মিনাল নির্মাণ এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণই হতে পারে সমস্যার স্থায়ী সমাধান।
১০৬ বার পড়া হয়েছে