গাজা অভিমুখে ১১ জাহাজের নতুন নৌবহর, রয়েছেন শহিদুল আলমও

শুক্রবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৫ ৩:১৯ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
গাজার অবরুদ্ধ উপত্যকার দিকে আরও একটি নৌবহর যাত্রা করেছে। মানবিক সহায়তা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দাবিতে ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’ (এফএফসি) এর উদ্যোগে ১১টি জাহাজ নিয়ে গঠিত এই বহর ইতোমধ্যেই পূর্ব ভূমধ্যসাগরের ক্রিট দ্বীপ উপকূলে পৌঁছেছে।
এতে রয়েছেন অন্তত ১০০ জন অধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও চিকিৎসক।
এফএফসির বিবৃতিতে জানানো হয়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ‘কনসায়েন্স’ নামের একটি বড় জাহাজ ৮টি ছোট নৌকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। পরে এতে ইতালি ও ফ্রান্সের পতাকাবাহী আরও দুটি জাহাজ যোগ দেয়। সব মিলিয়ে ১১টি জাহাজ নিয়ে গঠিত বহরটি বর্তমানে গাজা উপত্যকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে এই বহরে রয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ও দৃক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম। তিনি ‘কনসায়েন্স’ জাহাজেই অবস্থান করছেন। আজ (শুক্রবার) এক ভিডিও বার্তায় শহিদুল আলম জানান, “আমাদের জাহাজটি সবচেয়ে বড়। আমাদের সঙ্গে আরও আটটি ছোট নৌকা আছে। আমরা ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনি টাইম জোনে প্রবেশ করেছি, তবে গন্তব্য এখনো কিছুটা দূরে।”
ইসরায়েলি বাধার আশঙ্কা
এই বহরের খবর এমন সময় এলো যখন গাজার দিকে যাওয়া আরেকটি মানবিক নৌবহর, ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-র ৪৪টি জাহাজই ইসরায়েলি বাহিনী জব্দ করেছে। এতে ৫০০-এর বেশি যাত্রী ছিলেন, যারা ৪৪টি দেশের নাগরিক। তাদের মধ্যে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ছিলেন।
ইতোমধ্যেই গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার সর্বশেষ জাহাজ ‘ম্যারিনেট’-এর নিয়ন্ত্রণও নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। আগের মিশনগুলোতেও ইসরায়েল জাহাজ জব্দ, ত্রাণ বাজেয়াপ্ত এবং অধিকারকর্মীদের আটক করেছে।
গাজার মানবিক সংকট
প্রায় ২৪ লাখ মানুষের বসবাস গাজা উপত্যকায়। গত ১৮ বছর ধরে ইসরায়েল অঞ্চলটির ওপর অবরোধ জারি রেখেছে। চলতি বছরের মার্চে সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়ার পর গাজায় খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, অঞ্চলটিতে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৬ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। ধ্বংস হয়ে গেছে গাজার হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ প্রায় পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা। বিদেশি সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের প্রবেশেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।
ফ্লোটিলার বার্তা: ‘বিশ্ব বিবেক জাগো’
‘কনসায়েন্স’ জাহাজে থাকা ফ্লোটিলার স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হুয়াইদা আরাফ বলেন, “এই জাহাজ শুধু অবরোধের বিরুদ্ধে নয়, বরং বিশ্ব বিবেকের জাগরণের প্রতীক।”
ইতালির চিকিৎসক রিকার্ডো কোররাদিনি বলেন, “সাংবাদিক ও চিকিৎসক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সত্য বলা ও জীবন বাঁচানো। এই মিশন বিশ্বকে সেই আহ্বান জানাচ্ছে।”
২০০৮ সাল থেকে এফএফসি গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে একাধিক নৌমিশন চালিয়েছে। এবারের মিশনে ২৫টি দেশের সাংবাদিক ও চিকিৎসক অংশ নিয়েছেন।
১১৯ বার পড়া হয়েছে