ধর্মগুরু চৈতন্যানন্দের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে যৌন হয়রানির প্রমাণ

বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০২৫ ৬:২০ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
ভারতের স্বঘোষিত ধর্মগুরু স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে আগ্রা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
দিল্লির শারদা ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্টের একাধিক ছাত্রী তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনেন। তদন্তে উঠে এসেছে, হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো একাধিক আপত্তিকর বার্তায় চৈতন্যানন্দ সরাসরি ছাত্রীদের হয়রানি করেছেন এবং বিদেশি ব্যক্তিদের সঙ্গে ‘সাক্ষাৎকারের’ প্রস্তাবও দিয়েছেন।
পশ্চিম দিল্লির সাউথওয়েস্ট অঞ্চলে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটির মূল দায়িত্বে ছিলেন স্বামী চৈতন্যানন্দ। অভিযোগ ওঠার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান এবং প্রায় দুই মাস ধরে বৃন্দাবন, মথুরা ও আগ্রার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছিলেন। গত রোববার ভোররাতে আগ্রার তাজগঞ্জ এলাকার একটি হোটেল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চ্যাটে উঠেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য
তদন্তে স্বামী চৈতন্যানন্দের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থেকে এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে, যা তাঁর কর্মকাণ্ডকে আরও স্পষ্ট করেছে। এক চ্যাটে দেখা যায়, তিনি দুবাইয়ের এক ‘শেখ’-এর সঙ্গে এক ছাত্রীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ওই ছাত্রীকে তিনি জিজ্ঞেস করেন, তার কোনো জুনিয়র বা সহপাঠী সঙ্গী হতে আগ্রহী কি না।
আরেক চ্যাটে চৈতন্যানন্দ বারবার ছাত্রীদের ‘বেবি’, ‘বেবি ডটার ডল’ ইত্যাদি নামে সম্বোধন করেন। এক বার্তায় তিনি লেখেন, “শুভ সন্ধ্যা আমার সবচেয়ে প্রিয় বেবি ডটার ডল।” জবাবে ছাত্রীটি ভদ্রভাবে লেখেন, “এখানে তো দুপুর স্যার, শুভ দুপুর। আপনি কিছু খেয়েছেন স্যার?”
একটি চ্যাটে তিনি রসিকতার ছলে ‘ডিসকো ডান্স’ করার প্রস্তাব দেন এবং প্রশ্ন করেন, “তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাবে না?” এসব বার্তা যৌন হয়রানির বিষয়টি স্পষ্ট করে তোলে।
ধর্মীয় মুখোশের আড়ালে অপরাধ
স্বামী চৈতন্যানন্দের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১৭ জন ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন। এফআইআরে বলা হয়েছে, তিনি গভীর রাতে ছাত্রীদের নিজের কক্ষে যেতে বাধ্য করতেন এবং অশালীন বার্তা পাঠাতেন।
পুলিশ তাঁর কাছ থেকে একটি আইপ্যাড, তিনটি মোবাইল ফোন, দুটি ভিন্ন নামের পাসপোর্ট এবং জাল পরিচয়পত্র উদ্ধার করেছে। এসব ডিভাইসের একটির মাধ্যমে তিনি ইনস্টিটিউটের সিসিটিভি এবং হোস্টেল এলাকাও নজরদারিতে রাখতেন।
এছাড়া, তাঁর কাছ থেকে জাতিসংঘ ও ব্রিকস-এর ‘বিশেষ দূত’ হিসেবে ভুয়া ভিজিটিং কার্ড উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, অভিযোগ ওঠার পর তিনি ভুয়া নথি ব্যবহার করে ৫০ লাখ টাকারও বেশি অর্থ তোলেন এবং বর্তমানে তাঁর প্রায় ৮ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
সহযোগীদের বিরুদ্ধে তদন্ত
স্বামী চৈতন্যানন্দ বর্তমানে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। তাঁকে ইনস্টিটিউটের তিন নারী সহকর্মীর মুখোমুখি করা হবে, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে— তাঁরা ছাত্রীদের হুমকি দিতেন এবং অপরাধমূলক বার্তা মুছে ফেলার কাজে সহায়তা করতেন।
১১৯ বার পড়া হয়েছে