সর্বশেষ

ফেবু লিখন

জীবন চলার পথে: টুকরো টুকরো স্মৃতির পসরা

ড. মুনিরুছ সালেহীন
ড. মুনিরুছ সালেহীন

মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৪:৩৩ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
একজন শিক্ষকের বিদায় উপলক্ষ্যে ছাত্র- সহকর্মীদের ' ক্রন্দন, চোখের জল' দেখে অভিভূত হয়ে উপজেলার প্রধান নির্বাহী কর্মকতা বলেছিলেন, "এ দৃশ্য আমি কোনোদিনই ভুলে যেতে পারবো না।"

অনেক বছর পর, আরেক দৃশ্যে, একজন বর্ষীয়ান প্রধান শিক্ষক টেবিলে রাখা চায়ের কাপ তুলে নিলে অন্য একজন তরুণ নির্বাহী কর্মকতা তাঁকে বলেন,"আপনি চায়ের কাপে হাত দিলেন কেন? চা কি আপনার জন্য আনা হয়েছে? আপনাকে কি চা নিতে বলা হয়েছে?"

জীবনের কড়ি ও কোমলের এই অভিজ্ঞতা যাঁর কাছে শুনে হর্ষ-বিষাদে ভাসি, তিনি আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রিয় স্যার আবদুল গফফার হাওলাদার। প্রথম ঘটনার শিক্ষক তিনি নিজে, আর অপরটি তিনি শুনেছেন ভুক্তভোগীর মুখে। সে ঘটনা শোনার পর তাঁর মনে হয়,"আমিই যেন ঐ প্রবীণ প্রধান শিক্ষক।" তিনি জানান, "তীব্র অপমানবোধে ক্ষতবিক্ষত হতে থাকি।ঘুম আসে না। সারারাত আমি ঘুমোতে পারি না।"

আমার শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে নিরানন্দ সময় ছিল আমার কলেজ জীবন। বিজ্ঞানের পড়ালেখা আমার ভালো না লাগা, কয়েকজন শিক্ষকের ভীতিজাগানিয়া মুখসহ বিবিধ কারণ ছিল সেই নিরানন্দ, ভয়ার্ত সময়ের পেছনে। সে জীবনটাকে যদি মরুভূমি ভাবি, তাহলে সেখানে যে কয়টি মরুদ্যান ছিল তার অন্যতম ছিলেন আমাদের রসায়নের শিক্ষক গফফার স্যার।

বিজ্ঞানের শিক্ষক হয়েও গফরগাঁও কলেজে তাঁর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব আর সাহিত্য- সংস্কৃতির বোধ নিয়ে জনপ্রিয় একজন শিক্ষক ছিলেন তিনি। সে সময়ে গফরগাঁও কলেজের অধিকাংশ শিক্ষকদের ছাত্ররা যতটা না ভালোবাসতো, তার চেয়ে বেশি বোধহয় করতো ভয়। যে কয়েকজন শিক্ষক একই সঙ্গে ছাত্রদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন হাওলাদার স্যার ছিলেন তাঁদের অন্যতম।

২০২০ সালে, তিয়াত্তর বছর বয়সে, স্যার যখন ফেসবুকে লেখালেখি শুরু করেন তখন থেকেই আমি তাঁর লেখার আগ্রহী ও মনোযোগী পাঠক। সেই লেখাগুলোর সংকলন গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে "জীবন চলার পথে" শিরোনামে।

বইটি প্রকাশের সময় স্যার একদিন টেলিফোন করে বললেন,"প্রকাশক তোমার কাছে পান্ডুলিপি পাঠাবে। সম্ভব হলে বইটি সম্পর্কে দু'য়েক কলম লিখে দিয়ো।" স্যারের লেখা বই বিষয়ে কিছু লিখে দেয়ার সুযোগকে আমার অমূল্য এক প্রিভিলেজ ও সম্মান বলে মনে হয়েছে। আমি এক কথাতেই রাজি হয়েছি।

আজ স্যারের পাঠানো বই পেয়েছি। বেশ কিছু কপি। নিজের লেখা বই পাওয়ার আনন্দ নিয়ে আবার উল্টেপাল্টে, কোনো লেখা আবার পড়ে দেখলাম। বেশ সুন্দর হয়েছে বইটি। কভার, কাগজ, ছাপা, বাঁধাই - সবই সুন্দর। যশস্বী শিক্ষক আবদুল গফফার হাওলাদারের এটিই প্রথম বই। অভিনন্দন, শ্রদ্ধেয় স্যার। প্রায় আশি বছর বয়সে এ আপনার এক অনন্য অর্জন।

বইয়ের ভূমিকায় যা লিখেছি তার খানিকটা এখানে তুলে দিচ্ছি:

 

"'জীবন চলার পথে' প্রিয় শিক্ষক মো. আবদুল গফফার হাওলাদারের দীর্ঘ জীবনের টুকরো টুকরো স্মৃতির পসরা। নানা রঙের টুকরো টুকরো মোজাইক দিয়ে এই গ্রন্থে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেছেন তার মূলে আছে মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন একজন লেখকের অন্তর্গত উপলব্ধির সহজাত, অকৃত্রিম প্রকাশ। ভাবে তা 'নিতান্তই সহজ সরল', কিন্তু কত সহজেই না তা পাঠকের উপলব্ধিকে ছুঁয়ে যায়। তাঁর লেখায় 'নাহি তত্ত্ব, নাহি উপদেশ', কিন্তু তারপরও তা পাঠকের চেতনায় কড়া নাড়ে। সহজ কথা সহজভাবে বলার ঈর্ষণীয় গদ্যশৈলী আছে স্যারের লেখায়। তাই এগুলো কল্পনার রঙে রঞ্জিত গল্প না হলেও তাঁর লেখা পাঠককে এগিয়ে নিয়ে যায় ভাটির টানে অনায়াসে এগিয়ে চলা নৌকার মতো। পাঠক সেই চলার পথে শোনে সময়ের তরঙ্গধ্বনি, শোনে হারানো দিনের কথা, কখনো বা দেখে সমাজচিত্র।

"সহজ, সরল নিরাভরণ উপস্থাপনার পেছনে আমরা দেখি একজন সৎ, খোদাভীরু বর্ষীয়ান মানুষকে, যার ব্যক্তিত্বের প্রভায় দীপ্ত হয় সত্য, সুন্দর ও মঙ্গলের চিরন্তন আহ্বান। সে আহ্বান উচ্চকিত নয়, সেখানে নেই আমিত্বের জয়গান। মনোযোগী পাঠক তাঁর লেখায় আবিষ্কার করবেন অন্ত:সলিলা ফল্গুধারার মতো প্রবাহিত মনুষ্যত্বের জয়গান, পরিচিত হবেন একজন সফল শিক্ষকের দুর্লভ বিনয়ের সাথে। তাই তাঁর 'জীবন চলার পথে' আসলে 'সত্যই সুন্দর, সুন্দরই সত্য' হয়ে ওঠার অনিন্দ্যসুন্দর গল্পগুচ্ছের এক চমৎকার সম্ভার!"

স্যারের জন্য শুভকামনা। সুস্থ, সম্মানিত জীবন নিয়ে শতায়ু হোন আপনি।

বইটি রকমারি.কম এও পাওয়া যাবে। বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানাই এই বইটি পাঠের।

লেখক: সাবেক সিনিয়র সচিব, কবি ও প্রাবন্ধিক।

(লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে)

১৩২ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
ফেবু লিখন নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন