খাগড়াছড়ি-গুইমারায় থমথমে পরিস্থিতি, প্রশাসনের সতর্ক অবস্থান

মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৩:৪৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
সম্প্রতি খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় পাহাড়ি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের পর পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা ও আতঙ্ক।
সংঘাতের জেরে প্রশাসন জারি করেছে ১৪৪ ধারা, জোরদার করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও নজরদারি। সার্বিক পরিস্থিতি
সড়ক অবরোধ শিথিল, তবে উদ্বেগ কাটেনি
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা অবরোধ শিথিল করা হয়েছে। ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ নামক সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের ফেসবুক পেইজে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
তবে শুরুতে অবরোধ শুধুমাত্র খাগড়াছড়ি জেলায় সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে তা তিন পার্বত্য জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।
সহিংসতায় নিহত ৩, আহত বহু
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ চলাকালে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। ওই দিন দুপুরে পরিস্থিতি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
পরদিন (রোববার) ১৪৪ ধারা জারির মধ্যেই গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় পিকেটিংকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর সঙ্গে পাহাড়িদের সংঘর্ষ হয়, যা পরে স্থানীয় বাঙালিদের সাথেও সংঘাতে রূপ নেয়। ঘটনায় তিনজন পাহাড়ি নিহত হন। আহত হন ১৩ সেনাসদস্য, গুইমারা থানার ওসি ও আরও তিন পুলিশ সদস্য।
নিহতরা হলেন:
থোয়াইচিং মারমা (২৫), পিতা হ্লাচাই মারমা, বটতলা পাড়া, গুইমারা
আখ্র মারমা (২৪), পিতা আপ্রু মারমা, সাইংগুলি পাড়া, গুইমারা
আথুইপ্রু মারমা (২), পিতা থোয়াইহ্লাঅং মারমা, হাফছড়ি গ্রাম, গুইমারা
তাদের মরদেহ খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের মর্গে থাকলেও এখনো ময়নাতদন্ত হয়নি। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স না পাওয়ায় ময়নাতদন্ত বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আরএমও ডা. রিপল বাপ্পি চাকমা।
অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, ব্যবসা-বাণিজ্যে বিপর্যয়
সংঘাতের সময় গুইমারার রামসু বাজারে দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করে। এতে পাহাড়ি ও বাঙালিদের বহু দোকানপাট ও বসতঘর পুড়ে যায়। মোটরসাইকেলেও আগুন দেওয়া হয়। এতে স্থানীয় বাজারে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হয়।
চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি প্রবেশমুখে নয়াবাজার চেকপোস্টে শ খানেক পণ্যবাহী ট্রাক আটকে পড়ে। এ কারণে গো-খাদ্য, পোলট্রি খাদ্য, ফলমূলসহ ওষুধজাত পণ্য সরবরাহে সংকট দেখা দেয়।
ধর্ষণ মামলায় আটক ১, অভিযুক্ত আরও ২
ধর্ষণ মামলার ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোর চয়ন শীলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বর্তমানে সে পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। মামলার অজ্ঞাতনামা দুই আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে অবরোধের ডাক দেয় জুম্ম ছাত্র-জনতা।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, জনগণের জানমাল রক্ষায় ১৪৪ ধারা বহাল রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তা প্রত্যাহার করা হবে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।
রোববার জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, “অপরাধীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। ধর্ষণকারী, নারী নির্যাতনকারী, অস্ত্রধারী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা অসাম্প্রদায়িক হতে চাই। পার্বত্য অঞ্চলে আর কোনো সাম্প্রদায়িক সংঘাত দেখতে চাই না।” সব সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় উপস্থিত ছিলেন সদর জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. খাদেমুল ইসলাম, পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা, উপসচিব খন্দকার মুশফিকুর রহমানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
পরিস্থিতির অবনতিতে সাজেকে আটকে পড়া কয়েক হাজার পর্যটককে নিরাপত্তা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।
১৬১ বার পড়া হয়েছে