সর্বশেষ

প্রবাস

মালয়েশিয়ায় কঠোর অভিযান, আতঙ্কে বৈধ প্রবাসীরাও

ডেস্ক রিপোর্ট
ডেস্ক রিপোর্ট

সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৬:২৩ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ।

রাজধানী কুয়ালালামপুর ছাড়াও সেলাঙ্গর, পেনাং, জোহর ও অন্যান্য রাজ্যের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় প্রতিদিনই অভিযান চালানো হচ্ছে।

ইমিগ্রেশন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এসব অভিযানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি, ইন্দোনেশীয়, মিয়ানমার, নেপালি ও পাকিস্তানি নাগরিক আটক হচ্ছেন। অভিযান চালানো হচ্ছে অভিবাসীবহুল এলাকা যেমন চৌকিট, জালান সুলতান আজলান শাহ, গোম্বাক এবং বান্দার বারু অঞ্চলে।

বলা হচ্ছে, অধিকাংশ আটককৃতের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ বা তারা ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করেছেন। এসব অভিবাসীকে ইমিগ্রেশন ডিপোতে পাঠানো হচ্ছে এবং বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারলে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। অভিযানগুলোতে ইমিগ্রেশনের পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও অংশ নিচ্ছেন।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবৈধ অভিবাসন দেশটির আইন-শৃঙ্খলা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই এসব অভিযান চলমান থাকবে। একই সঙ্গে বৈধ প্রক্রিয়ায় কর্মী আনার পথ সহজ করার পরিকল্পনাও করছে সরকার।

তবে এই অভিযানে বৈধ কাগজপত্র থাকা প্রবাসীরাও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। হঠাৎ ধরপাকড়ের শিকার হচ্ছেন অনেকে। ফলে দূতাবাসগুলো নাগরিকদের সবসময় পাসপোর্ট ও বৈধতা-সংক্রান্ত নথিপত্র সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিচ্ছে।

জনশক্তি বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, অবৈধ অভিবাসনের অন্যতম কারণ হচ্ছে অনৈতিক নিয়োগ, অতিরিক্ত রিক্রুটমেন্ট ফি ও মানবপাচার। এতে শ্রমিকরা ঋণের জালে আটকে পড়ছেন এবং নানা ধরনের শোষণের শিকার হচ্ছেন।

মানবাধিকার সংগঠন নর্থ-সাউথ ইনিশিয়েটিভ (NSI) সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরে আসা শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে দেশটিতে অবস্থানরত প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসীর জীবনমান উন্নয়নে ১৮ দফা সুপারিশ দিয়েছে।

সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক আদ্রিয়ান পেরেইরা বলেন, “শ্রমিকদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো অনৈতিক নিয়োগ প্রক্রিয়া, ঋণের চাপ, মানবপাচার ও কর্মক্ষেত্রে শোষণ। এসব বন্ধ করতে হলে গঠনমূলক পদক্ষেপ জরুরি।”

একজন বাংলাদেশি শ্রমিক বলেন, “উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে এখানে এসেছি, অথচ বেতন ঠিকমতো দিচ্ছে না। আবার ভিসা সমস্যায় সবসময় আতঙ্কে থাকি।”
অন্য এক শ্রমিক বলেন, “কাজের জায়গায় বৈষম্য আর হয়রানি নিত্যদিনের সঙ্গী। নিরাপদ পরিবেশ চাই।”

 

NSI-এর ১৮ দফা প্রস্তাব: নিরাপদ অভিবাসনের রূপরেখা
সংগঠনটি যেসব বিষয় প্রস্তাব করেছে, তার মধ্যে রয়েছে:

অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণ প্রক্রিয়া।
আইনি সহায়তা ও দ্রুত বিচার। 
প্রতারক এজেন্ট ও পাচার চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা।
পাসপোর্ট নবায়ন প্রক্রিয়া সহজতর করা।
নারী শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ।
অভিবাসী শিশুদের জন্য শিক্ষা।
শ্রমিকদের হেল্পলাইন চালু।
মৃত্যু ও অসুস্থতার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ ও দ্রুত প্রত্যাবাসন । 
দুর্যোগকালীন জরুরি সুরক্ষা ব্যবস্থা। 


অর্থনীতিবিদ ড. নিয়াজ আসাদুল্লাহ মনে করেন, “বৈধ অভিবাসন শুধু মানবিক দায় নয়, এটি অর্থনৈতিক প্রয়োজনও। মালয়েশিয়া থেকে বৈধভাবে আয় বাড়লে উভয় দেশেরই অর্থনীতি উপকৃত হবে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ও বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সাশ্রয়ী হলে অবৈধ অভিবাসনের প্রবণতা কমবে।”

 

১২১ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
প্রবাস নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন