সকলি গরল ভেল

সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৯:১০ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ড. ইউনুস এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে কাছাকাছি বা পথে। সরকারি তহবিলের ৭০০ কোটি অর্থ খরচ করে এই সফর হচ্ছে, এ খবর জানা যাচ্ছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে।
সেই সফরে তিনি সঙ্গী বানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীর, তারেক রহমান সাহেবের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা, জামায়াতের জনাব তাহের সাহেব, এনসিপির জনাব আখতার। প্রাথমিকভাবে এই চারজন মোটাদাগে ছিলেন ড. ইউনুসের সফরসঙ্গী।
পরে আরও কয়জন যোগ হয়েছেন ড. ইউনুসের সাথে, তাদের মধ্যে ড. তাসনিম জারা অন্যতম।
বিএনপির মাঝে এই যোগদান পর্ব নিয়ে দলে ভিন্নমত থাকলেও হাইকম্যান্ডের আদেশে মির্জা সাহেব নিউইয়র্কে যাচ্ছেন—এটিও জানা গেছে।
এই যে বহর সাজালেন ড. ইউনুস, তার পেছনে উদ্দেশ্য কী বা কী কারণে প্রফেসর সাহেব এই দলবল নিয়ে নিউইয়র্কে গেলেন (আজ রাতে যাবেন বলে জানা গেছে), তার পেছনে উদ্দেশ্য কী সেটি খতিয়ে দেখাই আজকের এই লেখার উদ্দেশ্য।
ড. ইউনুস যে আমাদের দেশের রাজনীতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য— অর্থাৎ ধর ধর মার মার কাট কাট রাজনীতি—বিশ্ববাসীর সামনে পরিষ্কার করে দিতে চাইছেন, সেটি বেশ স্পষ্ট। যিনি বলতে পারেন— “এই বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, যেখানে টাকা দিয়ে ভোট কেনা যায়।” কথাটি তিনি কোনো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন। তার কাছে দেশের বা জনগণের প্রতি মহত্ত্ববোধ কতখানি, সেটি নিয়ে প্রশ্ন পূর্বের।
নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতকে মুখোমুখি দাঁড় করাবার পেছনে যে দেশের জনগণের প্রতি ড. ইউনুসের হীনমন্যতার পরিচয় প্রকাশ পাবে বা এবার নিউইয়র্কে বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ পাবে—এটি নিশ্চিত করেই বলা সঙ্গত। ড. ইউনুস কি দেশের মানুষকে এতটাই ছোট করার জন্য নতুন এই রাজনৈতিক চালটি খেললেন? হতে পারে এমনটিই। আর নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের প্রচণ্ড আক্রমণ থেকে পিঠ বাঁচাতে এমন নতুন চেষ্টা ড. ইউনুসের?
এ দুটি বিষয় আপাতত দৃষ্টিগোচর হলেও, ড. ইউনুস যে নিউইয়র্ক মিডিয়া ও বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম ও উপস্থিতিকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিতে চাইবেন যে, বাংলাদেশে সকল মোটাদাগের রাজনৈতিক দল তাকে সমর্থন দিচ্ছে বা তার সাথে আছে—এটি পরিষ্কার।
এটি হতে পারে ড. ইউনুসের এক বড় অর্জন। অন্তত তিনি যে সে চেষ্টা করছেন, সেটি বলা সহজ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচণ্ড বিরোধিতার মুখে ড. ইউনুসের সেই মনোবাসনা কতদূর কাজ করে—সেটি দেখার বিষয় অবশ্যই।
এতো গেল আপাতত চাক্ষুষ দেখা বা অনুভবের বিষয়। এ ছাড়াও আরও একাধিক বিষয় রয়েছে বলেই আন্দাজ করছেন যারা জানেন তারা।
ড. তাসনিম জারাকে শেষ মুহূর্তে ড. ইউনুস সাহেবের সফরসঙ্গী করার বিষয়ে চোখ কুঁচকে গেছে অনেকের।
সকলেই মোটামুটি আন্দাজ করেন বা জানেন এই ড. জারা বাংলাদেশে ডিপ স্টেটের মূল এজেন্ট। জারা গত তিন দিন আগেও বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে একটি পাকিস্তানি অনুষ্ঠানে “জয় বাংলা” বলায় তাড়া খেয়েছেন।
তারপরেই তড়িঘড়ি করে নিউইয়র্কে গমন করেছেন। তার দল এনসিপি অবশ্য এ বিষয়ে জানিয়েছে, জারার মার্কিন ভিসা হাতে থাকায় তাকে নিউইয়র্কে পাঠানো হয়েছে।
এনসিপির নেতাদের কি মার্কিন ভিসা হাতে নেই? এই অপ্রাসঙ্গিক ভিসার অজুহাত মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
বিশ্বাসযোগ্য হলো ড. জারার ডিপ স্টেট কানেকশন। যারা জানেন তারা ভালোভাবেই জানেন—মার্কিন প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষের কাছে এই তো মাসখানেক আগে নিরাপত্তা প্রধান খলিলুর রহমান আমেরিকা গিয়ে কোনো মতে ড. ইউনুস সরকারের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সম্মতি নিয়ে এসেছেন।
এই বিষয়টি আমরা বারবার শুনছি ড. ইউনুস ও তার পরিষদের মুখে।
এবার বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি সবাই মিলে এক স্টেজে উঠবে এবং ড. জারা কি ডিপ স্টেট বা মার্কিন নীতিনির্ধারকদের বোঝাতে সক্ষম হবেন যে, এই রাজনৈতিক ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য ড. ইউনুসই আসল লোক? সব দলই তো ড. ইউনুসের সাথে আছে।
ড. জারা কি মার্কিনিদের বোঝাতে সক্ষম হবেন যে, ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন নয়, দরকার গণভোট—যার মাধ্যমে ড. ইউনুসের বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকার দীর্ঘ পথ প্রশস্ত হবে? ড. ইউনুস আরও দীর্ঘ সময় মার্কিনিদের সেবা করে যাবেন।
ডিপ স্টেট এজেন্ট ড. জারা ড. ইউনুসের সফরসঙ্গী হওয়ার পেছনে এই একটাই কারণ থাকতে পারে।
ড. জারার মিশনের উদ্দেশ্যের বিষয়ে (উপরে বর্ণিত) আমরা জানি যে গণভোট, পিআর, বা নির্বাচন পেছানো বিষয়ে ড. ইউনুসের কিংস পার্টি ও জামায়াত প্রায়শই একমত।
কাজেই ড. জারা সে পথেই মার্কিন বসদের বোঝাতে সমর্থ হবেন।
বাকি রইল বিএনপি। বিএনপিকে নিয়ে ড. ইউনুস ও তার থিংক ট্যাঙ্ক যে অনেক সক্রিয়, সেটি সকলেই বোঝেন। পূর্বেই কোনো এক লেখায় আমি লিখেছি— বিএনপির কোনো অবস্থাতেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে রাজি হওয়া উচিত হয়নি।
একই সাথে লন্ডন সামিটে ড. ইউনুসের সাথে তারেক রহমানের যোগদানের বিষয়টিও গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা এখনো তারেক রহমান “ওয়ান টু ওয়ান” সভার জন্য উপযুক্ত নন, বিশেষত দেশের বিষয়ে। আর যেখানে ড. ইউনুস এক অতিশয় ধূর্ত ব্যক্তি বলেই ইতিমধ্যেই পরিচিত।
কাজেই এবার নিউইয়র্ক থেকে ফিরে এলেই বোঝা যাবে, ড. ইউনুস কি নতুন তত্ত্ব দেশবাসীর সামনে হাজির করেন।
একটি কথা বলে রাখি এখানেই— ড. ইউনুস হয়তোবা ডিপ স্টেটের সমর্থনে যদি নির্বাচন বিষয়ে নতুন কোনো কথা বলেন, তবে সেটি অবশ্যই বিএনপির গলাধঃকরণ করতে হবে। আর দেশবাসীর কাছে এ কারণে বিএনপি ভিলেনে পরিণত হবে।
লেখক: রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট
২৪৫ বার পড়া হয়েছে