সর্বশেষ

মতামত

বাংলাদেশের বাজার-স্যালমন মাছের নতুন উন্মাদনা

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:২৫ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
পৃথিবীর শীতল নদী ও সমুদ্র থেকে উঠে আসা স্যালমন মাছ প্রকৃতির এক বিস্ময়—প্রতিটি পর্যায়ে এদের জীবন যেন সংগ্রাম ও পুনর্জন্মের গল্প।

মিঠাপানির নদীতে জন্ম, সমুদ্রের বিশালতায় বেড়ে ওঠা, তারপর একদিন হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নিজের জন্মভূমিতে ফিরে এসে নতুন জীবনকে জন্ম দেয়া—and মৃত্যুর পরে মৃত্যুর দেহ সন্তান ও নদীর অন্যান্য প্রাণীকে আবার পুষ্টি যোগায়। সুস্বাদু স্বাদ, অসামান্য পুষ্টিগুণ এবং বৈশ্বিক বাজারে দ্রুত চাহিদা বাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী এই মাছ স্বীকৃতি ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, যার প্রতিচ্ছবি এখন বাংলাদেশের আধুনিক বাজারেও।

স্যালমন মাছের অনন্য জীবনচক্র: জন্ম, সংগ্রাম, এবং আত্মদান
স্যালমন মাছের জীবন শুরু হয় উত্তর গোলার্ধের শীতল নদীতে। ডিম পাড়ার পরে ডিম থেকে ‘অ্যালভিন’ জন্মায়, যা প্রথমে নদীতেই বেড়ে ওঠে। এরপর ‘ফ্রাই’ ও ‘স্মোল্ট’ রূপে স্যামন উৎস নদী ছেড়ে সমুদ্রের বিশাল জগতে প্রবেশ করে এবং সেখানে কয়েক বছর ধরে তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিণতি ঘটে। পরিণত স্যামন আবার নিজের জন্মনদীতে ফেলে আসে, প্রায় হাজার কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে, নানা বাধা-সংগ্রাম পেরিয়ে। প্রজননের পর বহু মা-বাবা মাছ ক্লান্ত হয়ে নদীর তীরে মৃত্যু বরণ করে, যার মৃতদেহ থেকে পানিতে পুষ্টি ছড়ায় এবং সেটি তাদের সন্তান ও নদীর অন্যান্য প্রাণীর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এভাবেই এক প্রজন্মের মৃত্যু নতুন প্রজন্মকে, নদীর বাস্তুসংস্থাকে পুষ্ট করে।

কোথায় সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়?
সালমন মাছের বিপুল উৎপাদন উত্তর আমেরিকার আলাস্কা ও কানাডার নদী–সমুদ্র, ইউরোপের নরওয়ে, স্কটল্যান্ড, আইসল্যান্ড, রাশিয়ার কিছু অংশ এবং এশিয়ার জাপান অঞ্চলে দৃশ্যমান। বর্তমানে নরওয়ে ব্যবস্যায়িকভাবে সবচেয়ে বেশি স্যালমন রপ্তানি করে বিশ্বব্যাপী এবং কানাডা, রাশিয়া, আইসল্যান্ডও আন্তর্জাতিক বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জাপানেও সালমনের চাহিদা অনেক বেশি—বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্যালমন আমদানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত।

মাছটির পুষ্টিগুণ: কেন এত জনপ্রিয়?
স্যালমন মাছ উচ্চমানের প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ডি, বি১২, সেলেনিয়াম এবং পটাসিয়ামের বড় উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম মাছের মাংসে থাকে ২২-২৫ গ্রাম প্রোটিন ও ২.৩ গ্রাম ওমেগা-৩। হৃদযন্ত্রের রোগ প্রতিরোধ, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক, প্রদাহ কমাতে ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। ভিটামিন ও মিনারেলসমূহ শিশুর বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের বাজারে স্যালমন জনপ্রিয়তা ও আমদানি
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সচেতন, আধুনিক ও উচ্চ আয়ভিত্তিক ক্রেতা শ্রেণীতে স্যামন মাছের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে। নরওয়ে তথা অস্ট্রেলিয়া থেকে ফ্রোজেন স্যামন আমদানি করে রাজধানীসহ বড় শহরের অনলাইন সুপারশপে ও সামাজিক প্ল্যাটফর্মে প্রি-অর্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের সুপারশপ ও ফিশ স্টোরে, এমনকি বিশেষ রেস্টুরেন্টেও স্যামন এখন সহজলভ্য।

দাম: নরওয়ে ও অস্ট্রেলিয়ার বাজার
নরওয়েতে ২০২৫ সালে স্যামন মাছের পাইকারি দর প্রতি কেজি ৭-৯ ডলার, অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৫০-১০০০ টাকা; মার্কেটে/রিটেইলিংয়ে কিছুটা বেশি হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি কেজি সালমনের রিটেইল দাম ২৮-৩৫ AUD প্রায় ২০০০-২৫০০ টাকা। বাংলাদেশে আমদানিকৃত মাছের খুচরা মূল্য সাধারণত ২০০০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত দেখা যায়। পরিবহন, কর, ডেলিভারি চার্জ যোগ হলে দাম বাড়ে।

সার-সংক্ষেপ
স্যালমন মাছের জীবনচক্র নিজস্ব সূচনা ও অন্তে ওতপ্রোতভাবে নদী ও পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত—মৃত্যুর পর নিজের সন্তান ও নদীর জীববৈচিত্র্যকে পুষ্টি যোগায়।
নরওয়ে ও অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে আমদানি হয়ে সম্প্রতি আধুনিক বাজারে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। উচ্চমানের প্রোটিন, ওমেগা-৩, ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর এই মাছ স্বাস্থ্য-প্রীতির প্রতীক।
বাংলাদেশের নতুন ক্রেতা ধারা, আধুনিক স্বাস্থ্য সচেতন সমাজে এই মাছের চাহিদা ও নগরজীবনে রূপান্তরিত জনপ্রিয়তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট 

১৩৩ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন