ইরাকে মর্মান্তিকভাবে খুন গোয়ালন্দের আজাদ খান

শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৩:২৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
জীবিকার তাগিদে তিন মাস আগে দালালের মাধ্যমে ইরাকে পাড়ি জমিয়েছিলেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের আজাদ খান (৪৭)।
কিন্তু প্রবাস জীবনের স্বপ্ন পূরণ না হয়ে বরং মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি বাগদাদ শহরে তার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে তার পরিবার।
নিহত আজাদ খান দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হোসেন মন্ডল পাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইয়াজ উদ্দিনের ছেলে। পরিবারের দাবি, আজাদকে হত্যার পর তার মরদেহ তিন টুকরো করে বস্তাবন্দি করে শহরের একটি ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া হয়।
আজাদের স্ত্রী ময়না বেগম জানান, “আমার স্বামীকে বিদেশ পাঠাতে অনেক ঋণ করেছি। স্থানীয় দালাল বাবুলের মাধ্যমে ইরাকে পাঠাই। কথা ছিল একটি ভালো চাকরি হবে, কিন্তু সেখানে গিয়ে কাজের জায়গা বদলে দেয় বাবুল। এরপর থেকে আমার স্বামী তাকে ফোন করলেও কোনো সাড়া দেয়নি। বাবুল ফোন ধরলে হয়তো আমার স্বামী আজও বেঁচে থাকতেন।”
পরিবার জানায়, ইরাকে পৌঁছানোর তিন মাস পর গত সপ্তাহে আজাদ নিখোঁজ হন। পরে বৃহস্পতিবার রাতে লিটন নামে এক প্রবাসী ফোন করে আজাদের পরিবারকে জানায়, আজাদকে হত্যা করে বস্তায় ভরে ফেলে রাখা হয়েছে। শহরের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দুর্গন্ধ পেয়ে বস্তাটি খোলার পর লাশের খণ্ডিত অংশ দেখতে পায় এবং পুলিশে খবর দেয়।
আজাদের মা নবিরণ বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলে লাশ হয়ে ফিরছে! আমি ওর লাশটা দেশে ফেরত চাই। বিচার চাই এই নৃশংস হত্যার।”
এ ঘটনায় অভিযুক্ত দালাল বাবুল মুঠোফোনে বলেন, “আমি আজাদকে একটি দোকানে কাজের জন্য দিয়েছিলাম। পরে কুমিল্লার সোহাগ নামে একজন তাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। জানা গেছে, আজাদকে এক দোকানের মালিক তার বাসায় নিয়ে গৃহকর্মে লাগায়। আমি সোহাগের মাধ্যমে খবর নিয়েছিলাম, তখন বলা হয়েছিল সে ভালো আছে। এখন শুনছি তাকে হত্যা করা হয়েছে।”
আজাদের শ্যালক জহরুল হক বাপ্পি জানান, “আমরা বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আজাদের মরদেহ বাগদাদের একটি মর্গে রাখা হয়েছে। হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কফিল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আগামী রবিবার তাকে কাজুমিয়া আদালতে তোলা হবে।”
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদুর রহমান বলেন, “বিষয়টি আমরা শুনেছি। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক খোঁজখবর নেওয়া হবে।”
বর্তমানে পরিবার মরদেহ দেশে আনার জন্য সরকারের সহায়তা কামনা করছে। পাশাপাশি দালালচক্র ও হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
১০৫ বার পড়া হয়েছে