বাজেট কাটছাঁট বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ফ্রান্স, অচল প্যারিস

শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৮:৩৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
জাতীয় বাজেটে কল্যাণমূলক খাতসহ বিভিন্ন খাতে বড় ধরনের কাটছাঁটের প্রতিবাদে ফ্রান্সজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে গণবিক্ষোভ।
রাজধানী প্যারিসসহ লিয়ন, নানতেসসহ বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নেমে এসেছেন লাখ লাখ মানুষ। আন্দোলনের জেরে অচল হয়ে পড়েছে পরিবহন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা।
বৃহস্পতিবার ট্রেড ইউনিয়ন ও বামপন্থি দলগুলোর ডাকে আয়োজিত এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন অন্তত ১০ লাখ মানুষ বলে দাবি আয়োজকদের। তবে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, এই সংখ্যা ৫ লাখের মতো। বিক্ষোভ সামাল দিতে সারাদেশে মোতায়েন করা হয়েছে ৮০ হাজার পুলিশ সদস্য।
পুলিশি সহিংসতা ও ব্যাপক আটক
বিক্ষোভ চলাকালে প্যারিস, লিয়ন ও নানতেসে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধস্তি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় পুলিশ টিয়ার গ্যাস, লাঠি ও শিল্ড ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। ইতোমধ্যে অন্তত ৩০০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পরিবহন ও শিক্ষা খাতে অচলাবস্থা
বিক্ষোভের প্রভাব পড়েছে পরিবহন ব্যবস্থায়। রাজধানীমুখী অধিকাংশ মেট্রো রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া সড়কপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন বিক্ষোভকারীরা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও একই চিত্র—বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। আশ্চর্যজনকভাবে, দেশের ৯৮ শতাংশ ওষুধের দোকানও বন্ধ রয়েছে।
বাজেট কাটছাঁটের মূল প্রেক্ষাপট
চলতি সেপ্টেম্বরের শুরুতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁকোইস বায়রো বাজেট পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ থেকে প্রায় ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ছাঁটাই করেন। এই পদক্ষেপের ফলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি এবং ৯ সেপ্টেম্বর আস্থা ভোটে পরাজিত হন। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন সেবাস্টিয়ান লেকর্নিউ, যিনি ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন, তবে এখনো নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেননি।
অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পুরনো বাজেটের কাটছাঁট বহাল থাকায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে। বিরোধী দলগুলো সরকারের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
জনগণের ক্ষোভ ও রাজনৈতিক বার্তা
৩৬ বছর বয়সী আইটি পেশাজীবী সিরিয়েল বলেন, “আমি ম্যাক্রোঁর অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতির বিরোধিতা করি। বায়রোর বাজেট আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করবে। আমি চাই, সরকার গণপরিষেবা ও সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বাড়াক এবং ধনীদের ওপর করের হার বৃদ্ধি করুক।”
জেনারেল কনফেডারেশন অব লেবার-এর নেত্রী সোফি বিনেট বলেন, “এই লড়াই এখন থামার নয়। সামনের দিনগুলোতে আমাদের আন্দোলন আরও তীব্র হবে।”
সরকারের অনড় অবস্থান
বিরোধিতার মুখেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নমনীয়তা দেখা যাচ্ছে না। বিদায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেশিলিও বিবিসিকে বলেন, “বাজেটে পরিবর্তন আনার কোনো পরিকল্পনা নেই। বিক্ষোভকারীদের উচিত ঘরে ফিরে যাওয়া, না হলে গ্রেপ্তারের সংখ্যা আরও বাড়বে।”
এদিকে বামপন্থি জোট 'ফ্রান্স আনবৌওড' (এলএফআই)-এর পক্ষ থেকে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, “যদি সরকার কঠোর অবস্থানে থাকে, তার পরিণতি ভয়াবহ হবে।”
১১২ বার পড়া হয়েছে