সর্বশেষ

জাতীয়

তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে দেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে প্রভাব ভয়াবহ: বিশ্বব্যাংক

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৯:১২ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি ও বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক।

সংস্থাটির নতুন এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই তাপ-সংশ্লিষ্ট অসুস্থতার কারণে দেশে প্রায় আড়াই কোটি কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩৩ কোটি থেকে ১৭৮ কোটি মার্কিন ডলার—বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৫ হাজার ৯৬০ কোটি থেকে ২১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। এ ক্ষতির পরিমাণ দেশের মোট জিডিপির ০.৩% থেকে ০.৪%।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘An Unsustainable Life: The Impact of Heat on Health and the Economy of Bangladesh’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৮০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ‘অনুভূত’ তাপমাত্রা বেড়েছে ৪.৫ ডিগ্রি, যার ফলে ডায়রিয়া, দীর্ঘমেয়াদি কাশি, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, মানসিক চাপ ও ক্লান্তিজনিত অসুস্থতার হার বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে।

বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা যখন ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়, তখন শ্রমজীবী মানুষের উৎপাদনশীলতা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রীষ্মকালে ডায়রিয়া এবং দীর্ঘমেয়াদি কাশির হার শীতকালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। নারীরা হিট স্ট্রোক ও ক্লান্তিজনিত রোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় গত ১৫ বছরে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি। ঢাকার হিট ইনডেক্স জাতীয় গড়ের তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি, ফলে রাজধানীতে তাপ-প্রবাহজনিত ঝুঁকি ও ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেশি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রীষ্মে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার হার ২০ শতাংশে দাঁড়ায়, যেখানে শীতকালে তা ছিল ১৬.২ শতাংশ। ক্লান্তিজনিত অসুস্থতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ৩৬ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মধ্যে।

বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছে, তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় জাতীয় প্রস্তুতির সক্ষমতা জোরদার করতে হবে এবং তা করতে হবে বহুমাত্রিক সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে। স্বাস্থ্যখাতে হিট-সংক্রান্ত ঝুঁকি কমাতে উন্নত প্রযুক্তি, শক্তিশালী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নির্ভরযোগ্য আবহাওয়ার তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহায়তা ও অর্থায়নেরও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “মন্ত্রী-এমপিদের প্লট দিতে গিয়ে রাজউক পরিবেশ ও শহরের যে ক্ষতি করেছে, তা আর চলতে দেওয়া যায় না। সবুজ ধ্বংস করে আবাসন প্রকল্প গ্রহণ অগ্রহণযোগ্য।”

বিশেষ অতিথি প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, “তাপ-সম্পর্কিত স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে অভ্যন্তরীণ পদক্ষেপের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহায়তাও প্রয়োজন।”

বিশ্বব্যাংকের ডিভিশনাল ডিরেক্টর জেন পেসমির সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির সিনিয়র অপারেশন অফিসার ইফফাত মাহমুদ ও হেলথ স্পেশালিস্ট ওমিকিউ এ রাজা। তারা জানান, ২০২৪ সালে ১৬ হাজারের বেশি মানুষের ওপর পরিচালিত এক জরিপের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তথ্যভিত্তিক নীতিনির্ধারণ ও লক্ষ্যমাত্রাভিত্তিক বিনিয়োগের মাধ্যমে অভিযোজন সক্ষমতা বাড়ানো গেলে দেশের জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি অনেকাংশে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।


সংক্ষিপ্ত পয়েন্টে মূল তথ্য:

২০২৪ সালে তাপ-সম্পর্কিত অসুস্থতায় ক্ষতি: ১৩৩–১৭৮ কোটি ডলার
নষ্ট কর্মদিবস: প্রায় ২.৫ কোটি
গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি: ১.১°C (ঢাকায় ১.৪°C)
অনুভূত তাপমাত্রা বেড়েছে: ৪.৫°C
শারীরিক ও মানসিক রোগ বেড়েছে: ডায়রিয়া, কাশি, বিষণ্ণতা, ক্লান্তি
কর্মক্ষমতা হ্রাস, অর্থনৈতিক ক্ষতি স্পষ্ট
সুপারিশ: প্রস্তুতি জোরদার, আন্তর্জাতিক সহায়তা, প্রযুক্তির ব্যবহার। 

১৯৭ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন