সর্বশেষ

বিনোদন

নায়িকা বনশ্রী আর নেই: নিঃসঙ্গতায় কেটেছে জীবনের শেষ অধ্যায়

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৭:১৩ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
নব্বই দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী বনশ্রী আর নেই। ঢাকার একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে অবশেষে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। 

বাংলা চলচ্চিত্রের নব্বই দশকের জনপ্রিয় মুখ বনশ্রী আর নেই। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।

বহুদিন ধরে কিডনি, হার্ট ও মস্তিষ্কের জটিল রোগে ভুগছিলেন এই প্রাক্তন নায়িকা। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও শেষ দিকে ফিরে যান নিজ জেলা মাদারীপুরে। মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন না কোনো চলচ্চিত্র-জগতের মানুষ। ছিলেন তাঁর একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান, ছোট ভাই হারুন শিকদার ও অল্প কয়েকজন আত্মীয়স্বজন। সন্ধ্যার পর বনশ্রীকে দাফন করা হয় তাঁর নানাবাড়ি কুমিরপাড় গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে।

১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সোহরাব-রুস্তম চলচ্চিত্র দিয়ে রূপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে বনশ্রীর। নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে তাঁর প্রথম ছবিটিই বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়। এরপর মান্না, রুবেল ও আমিন খানের মতো জনপ্রিয় নায়কদের সঙ্গে একে একে অভিনয় করেন প্রায় ৮-১০টি ছবিতে।

 

দর্শকের কাছে পরিচিতি পান নতুন প্রজন্মের নায়িকা হিসেবে। শুটিং সেট, গান, নাচ, ক্যামেরার ঝলক—সব মিলিয়ে ছিল রঙিন এক জীবন।

তবে বেশি দিন টেকেনি সেই রঙিন সময়। সিনেমা থেকে বিদায় নেওয়ার পর শুরু হয় বাস্তব জীবনের কঠিন সংগ্রাম। আয়-রোজগার না থাকায় এক সময় বাসে বাসে হকারির কাজও করতে বাধ্য হন বনশ্রী।

এক সাক্ষাৎকারে বনশ্রী বলেছিলেন,“চলচ্চিত্র ছেড়ে দেওয়ার পরই আর্থিক অনটনে পড়ি। শাহবাগে ফুলের ব্যবসা করেছি। বাসে বাসে হকারিও করতে হয়েছে তিন বেলা খাবার জোগাড় করতে।”

জীবনের শেষদিকে মাদারীপুরের শিবচরে সরকারিভাবে দেওয়া একটি ছোট ঘরে বসবাস করতেন বনশ্রী। এক সময় শাহবাগে ফুল বিক্রি করে কিংবা বাসে হকারি করে সংসার চালালেও পরবর্তীতে সরকার প্রদত্ত ২০ লাখ টাকার অনুদান ও তার সুদই ছিল তাঁর একমাত্র ভরসা।


প্রতিবেশীদের ভাষ্যমতে, বনশ্রী ছিলেন বিনয়ী ও নির্লিপ্ত। একসময়কার খ্যাতি তাঁর জীবনে কোনো বাড়তি জৌলুস আনতে পারেনি। সাধারণ জীবনেই তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের শেষ অধ্যায়।

১৯৭২ সালে মাদারীপুরের শিবচরের মাদবরের চর ইউনিয়নের শিকদারকান্দি গ্রামে জন্ম বনশ্রীর। তাঁর বাবা মজিবুর রহমান মজনু শিকদার ও মা সবুরজান রীনা বেগম। তিন ভাইবোনের মধ্যে বনশ্রী ছিলেন বড়। সাত বছর বয়সে পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসেন তিনি।

বোনের মৃত্যুর খবর পেয়ে ছোট ভাই হারুন শিকদার ও ভাগনে মেহেদী হাসান ঢাকা থেকে শিবচরে ছুটে যান। শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বনশ্রীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নানাবাড়ি কুমিরপাড় গ্রামে। সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।

বনশ্রী ছিলেন সেইসব মুখদের একজন, যাঁরা নব্বই দশকের বাংলা সিনেমাকে স্মরণীয় করে তুলেছিলেন। একসময় দর্শকদের করতালি ও ক্যামেরার ফ্ল্যাশে যাঁর দিন কাটত, সেই বনশ্রীর জীবনের শেষ দৃশ্যটি ছিল নিঃসঙ্গ ও করুণ।

আলো ঝলমলে রূপালি জীবনের অবসান ঘটল অন্ধকার, নিঃসঙ্গতা ও সংগ্রামে ঘেরা এক বাস্তব জীবনে। বনশ্রীর মৃত্যু কেবল একজন অভিনেত্রীর বিদায় নয়, বরং স্মরণ করিয়ে দেয় শিল্পীদের জীবনের অনিশ্চয়তা ও মূল্যহীনতার নির্মম বাস্তবতা।

১০৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
বিনোদন নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন