গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত ৫৩

সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২:৩১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলায় একদিনেই অন্তত ৫৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজা সিটিতে চালানো বিমান হামলায় ধ্বংস হয়েছে অন্তত ১৬টি ভবন, যার মধ্যে রয়েছে তিনটি আবাসিক টাওয়ার। এদিকে অপুষ্টি ও খাদ্য সংকটে মৃত্যু হয়েছে আরও দুজনের। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ক্ষুধায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২২ জনে।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলের চলমান অভিযান উত্তর গাজার নগরকেন্দ্র দখল এবং সেখানকার জনগণকে জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই পরিচালিত হচ্ছে। রবিবারের হামলায় নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জনই গাজা সিটির বাসিন্দা।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রেমাল এলাকার আল-কাওসার টাওয়ার সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাপক বোমাবর্ষণে হাজার হাজার মানুষ নিরাপত্তার আশায় দক্ষিণে পালিয়ে যাচ্ছে। গাজার বাসিন্দা মারওয়ান আল-সাফি বলেন, “আমরা জানি না কোথায় যাব। এভাবে আর চলতে পারে না। আমরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি।”
গাজা সরকারের গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই “পদ্ধতিগত বোমাবর্ষণের” উদ্দেশ্য আসলে গণহত্যা ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি। তারা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল সাধারণ জনগণের ওপর হামলা চালাচ্ছে—লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে স্কুল, হাসপাতাল, আবাসিক ভবন, ত্রাণ দপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক অবকাঠামো।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (UNRWA)-র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) জানান, শুধু গত চারদিনেই গাজা সিটিতে ইউএনআরডব্লিউএ’র অন্তত ১০টি ভবনে হামলা চালানো হয়েছে, যার মধ্যে সাতটি স্কুল ও দুটি ক্লিনিক রয়েছে।
ইসরায়েল ঘোষিত “নিরাপদ অঞ্চল” আল-মাওয়াসির-এও চলছে বিমান হামলা। পরিবারগুলো বাধ্য হয়ে আবারও সেখানেই আশ্রয় নিচ্ছে। বাস্তুচ্যুত আহমেদ আওয়াদ বলেন, “টয়লেট নেই, পানি নেই, খাবার নেই—খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছি। এটা জীবন নয়, একপ্রকার মৃত্যু।”
অন্যদিকে, ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, আল-মাওয়াসির অঞ্চলেও মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। সংস্থার মুখপাত্র টেস ইঙ্গ্রাম বলেন, “এই কথিত নিরাপদ অঞ্চলেও বোমা পড়ছে। মানুষ আশ্রয় পাচ্ছে না, মা রাস্তায় সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হচ্ছেন।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিদিন হাজার হাজার পরিবার গাজা সিটি থেকে পালিয়ে আসছে। তারা খাবার, পানি, আশ্রয়—কোনো কিছুই পাচ্ছে না। এ অবস্থায় শিশুদের জীবন চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ ও মানবিক বিপর্যয় এখন 'নজিরবিহীন পর্যায়ে' পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক মহলের দ্রুত ও কার্যকর হস্তক্ষেপ ছাড়া এ সংকট কাটানো সম্ভব নয়।
১০৯ বার পড়া হয়েছে