সর্বশেষ

জাতীয়

'হাজার বছরের চীনমৈত্রী' ও 'আমাদের অতিশ দীপঙ্কর' স্মরণে আলোচনা ও সম্মাননা প্রদান

রনজক রিজভী
রনজক রিজভী

শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হলো 'হাজার বছরের চীনমৈত্রী' ও 'আমাদের অতিশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান' শীর্ষক আলোচনা ও অতিশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান স্মরণীয় অ্যাওয়ার্ড ২০২৪। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের কনফারেন্স রুমে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে দেশের সংস্কৃতি ও গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া। অতীশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কাদেরের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রখ্যাত লেখক, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কবি গাউছুর রহমান, দ্য কুমিল্লা ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম ও গণযোগাযোগ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. হানিফ খান, কবি ও কথা সাহিত্যিক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, জিসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রোকেয়া সুলতানা কেয়া চৌধুরী, তালুকদার কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামাল হোসেন টুয়েল, মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান আসাদ, সমাজসেবক হিরু কুমার দেব, আপনার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জহুরুল আলম জাবেদ এবং মাসিক জনপ্রশাসন সম্পাদক ও প্রকাশক নাঈম মাশরেকী।  

আলোচনার শুরুতেই প্রখ্যাত লেখক, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কবি গাউছুর রহমান বলেন, বর্তমানে মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর এলাকার এক গ্রামে তার জন্ম নাম চন্দ্রবর্মন। তিনি ২৯ বছর বয়সে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। এবং দীপঙ্কর শ্রীধাম নাম গ্রহণ করেন। তৎকালীন তিনি লালন দা বিক্রমশিলা সারা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ১৫৫ বিশ্ববিদ্যালয় দীক্ষা নেন।  এবং এর মধ্য দিয়ে তিনি ধর্ম ও জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সম্পর্কে সম্মুখ জ্ঞান লাভ করেন। এবং বৌদ্ধ ধর্মের যে সমস্ত সীমাবদ্ধতা ছিল, সেগুলো করতে তিনি সচেষ্ট হন।এবং এক সময় তিনি সুমাত্রা গঠন করেন, যেটাকে সুবর্ণ বলা হয়। যেটা এখন ইন্দোনেশিয়ায়। তিনি সেখানে যান। এবং সেখানে ১২ বছর তিনি বিশেষ শিক্ষা লাভ করেন। সেই শিক্ষা লাভের মধ্য দিয়ে তিনি নিজের মনকে বিশুদ্ধ করার জন্যে এবং বলা যায় প্রজ্ঞা এবং করুনা এই দুটি বিষয়ে তিনি নিজেকে পরিস্ফুটিত করেছিলেন।

তিনি বলেন, বৌদ্ধ ধর্মের যে অভীংশ নীতি সেই নীতি তিনি প্রচার করেছিলেন। একটি বিষয় হল,  তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন একটি রাজকীয় পরিবারে। কিন্তু রাজকীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি স্বাভাবিক সংসার জীবনের প্রতি আগ্রহী ছিলেন না। এবং এই বিষয়টি তার মা নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা তাদের পুত্রকে, তার যে সমস্ত, যে কঠোরতা অনুযায়ী ধর্ম কর্ম করার যে সুযোগ, সন্ন্যাস গ্রহণের যে সুযোগ সেটি তারা দিচ্ছিলো না। এর মধ্য দিয়ে আমরা, যদিও তিনি বৌদ্ধ ধর্মের, তার মধ্যে একটা অভিংসনীতি ছিলএবং তিনি মানবতাবাদী ছিলেন। এর মধ্য দিয়ে একজন মানুষকে এই বাংলাদেশ পেয়েছে বিক্রমপুর পেয়েছে মুন্সীগঞ্জ পেয়েছে। 

গাউছুর রহমান বলেন, আমি মনে করি গোটা পৃথিবী পেয়েছে। তিনি সবাইকে জয় করেছেন। জয় করেছেন বলেই এই অতীশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা জেনেছি, এটি প্রায় ৪ দশক যাবত এই অতীশ দীপঙ্কর চর্চা করছে। অতীশ দীপঙ্কর সম্পর্কে আলোচনা, গবেষনা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা,  পুরস্কার বিতরণ করা, এই মহাকর্মকাণ্ডে সঙ্গে এই অতীশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদ জড়িত। এটি আমাকে অত্যন্ত আনন্দ দিয়েছে। আমি অতিশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদ সম্পর্কে জেনেছি। আজকের এই অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিতি অপ্রত্যাশিত, কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত নয়। কারণ এখানকার যে উদ্যোক্তা তাদের সঙ্গে আমার এর আগে সরাসরি কোনো যোগাযোগ ছিল না। 

তিনি আরো বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে ইসলাম ধর্মের অনুসারী। কিন্তু আমি ইসলাম ধর্মের অনুসারী হলেও ধর্মের যে মহৎ ব্যক্তি, তাদের জীবন থেকে তাদের জীবনের ভালো দিকগুলো আমি নিতে পারি আমার মতো করে। আমার ধর্মীয় বিশ্বাসকে অক্ষুন্ন রেখে আমি মনে করি যে, আমাদের বাংলাদেশে সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একটি রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। এবং সাহিত্য সংস্কৃতির নৈরাজ্য চলছে। এই রুচির দুর্ভিক্ষ এবং সাহিত্য সংস্কৃতির এই নৈরাজ্যের মধ্যে একটি সুস্থ সাহিত্য সংস্কৃতিরচর্চা করা আমাদের জন্য খুবই দরকার। 

গাউছুর রহমান বলেন,  শ্রম দেন তিনি শ্রমিক। যিনি কাজ করে শ্রম দেন, যিনি কৌশল প্রয়োগ করে শ্রম দেন তিনি প্রকৌশলী। আর যিনি কৌশল প্রয়োগ করে শ্রম দেন এবং তার সঙ্গে হৃদয় যোগ করেন তিনি শিল্পী। তিনি একজন কবি একজন কর্মসাহিত্যিক, কণ্ঠশিল্পী, আমি মনে করি। কারণ সবাই শিল্পী। এই শিল্পের চর্চা করা, এই শুদ্ধ শিল্পের চর্চা করা- এটি আমরা মনে করি, যারা সমাজের অগ্রসর মানুষ তারাই এই কাজগুলো করেন। কারণ এই কাজটা অনেকটাই অবৈষয়িক। এর বৈষয়িক প্রাপ্তি খুব বেশি থাকে না। অনেকটা নিজের খেয়ে বনের বনের মোষ তাড়ানোর মতো। আজকের এই সমাজে আমরা যেখানে লাভ-ক্ষতির হিসাব করি, সেখানে সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা- এটা আমাদের অনেকের কাছেই অলাভজনক মনে হতে পারে। অনেকে কিন্তু এটা খুব পরিহাস করে।

তিনি বলেন, এই লোক তো খুব বোকা, কি সাহিত্য চর্চা করে? আমাকে অনেকে বলতো, আপনি গবেষণামূলক বই না লিখে আপনি গাইড বই লেখেন। তাতে অনেক পয়সা হবে। কিন্তু গবেষণামূলক বই লেখা বা এটার যে গুরুত্ব সে কিন্তু সেটা বুঝেন না। তিনি মনে করেন যে, গাইড বই লিখলে প্রকাশকরা অনেক টাকা দেবে। অর্থনৈতিক প্রাপ্তি বা ব্যাংক বলা যায়। কিন্তু সবকিছুই তো আমরা অর্থনৈতিক মাপকাঠি দিয়ে পরিমাপ করি না। এটা আমরা কেন করবো? তাহলে মানুষ আর এতো লেখাপড়া করে কেন? লেখাপড়া না করেও কিন্তু অনেক পয়সা উপার্জন করা যায়। তারপরও কেন মানুষ পড়াশোনা করে, কেন বিশ্ববিদ্যালয় যায়, কেন সে নিজেকে পরিস্ফুটিত করে? শুধু ডিগ্রিই তো একটা লোকের শিক্ষা না। পুরো জীবনটাতেই শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। প্রতি মুহূর্তে মানুষ শেখে। তার সমাজ থেকে, পরিবেশ থেকে, তার প্রতিবেশ থেকে। 

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন,  অতীশ দীপঙ্কর অক্ষণ্ড জ্ঞানের সাগর। কোন দিকে যাবেন সর্বদিকেই অতীশ দীপঙ্কর আছে। চীনে গেছেন ধর্ম উদ্ধারে জন্য। অনুরুদ্ধ হয়ে। ওখানে তিনি, বন্যায় সমস্ত ভেসে যাচ্ছে, সেটা প্রতিহত করে সেখানে ফসল ফলানোর কায়দা আবিষ্কার করছেন। তিনি নিজের রক্ত দিয়ে ছবি এঁকেছেন প্রচুর, সেরকম কর্ম তার, দেড়শ' এর উপরে তার বই আছে। তার ভেতরেও তিনি যখন নেপাল হয়ে চীনে যান ধর্ম উদ্ধারের জন্য- তখন নেপালে গিয়ে বাংলার তৎকালীন ন্যায় পাল রাজাকে একটা চিঠি দিলেন। তার মধ্যে একটি চিঠিতে লিখলেন, 'জিহ্বাকে সংযত রাখবেন।' আমাদের রাজা যারা, এই যে ধরেন পতিত সরকার- তার কিন্তু মুখের জন্য পতন হয়েছে।  প্রাচীনকালে সে বলে গেছে, ' রাজা তুমি জিহ্বাকে সংযত রাখবে।' আমরাও যারা বেশি কথা বলি বেশি ভুল করি, ভুল হয়। এজন্য যত কথা কম বলা যায়। এখানে প্রসঙ্গক্রমে আমি বলছি, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কম কথা বলতেন। শুনতেন বেশি। আমরাও শুনবো বেশি। কম কথা বলব। আমাদের ভুল কম হবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের এই ধারাবাহিকতা আশপাশ এবং বিশ্বের- উনি শুধু বাংলাদেশের একজন স্কলারই না, তিনি দার্শনিকই না, তিনি সারাবিশ্বের। সর্ব ধর্মের নেতাদের উনিও একজন নেতৃস্থানীয় লোক। তার দেড়শ'টি বই আছে। তার মধ্যে চিকিৎসা শাস্ত্র আছে। সেই তৎকালের।  মাথা ব্যথা করলে কি চিকিৎসা, সেটা তিনি আবিষ্কার করে গেছেন। সে বাধ প্রযুক্তি তৈরি করে, সেখানে কিভাবে শস্য ফলাতে হবে সেগুলো বলে গেছেন। চিত্রাঙ্কন করে গেছেন। উনি 'হীনযান ও মহাযান' বৌদ্ধ ধর্মের দুটি বিভাগ দুটাতেই পারদর্শী। ইন্দোনেশিয়াতে তিনি শিষ্য সাগরেদসহ ১৩ মাস সমুদ্রে ভেসে ভেসে বিদ্যা অর্জনের জন্য গেছেন। ১৩ টি মাস সমুদ্রে নদীতে তিনি ভ্রমণ করেছেন। 

ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, চীনা বহুলোক দুইবার তিনবার আসছে, তারা বলেছেন যে কত সৈন্য লাগবে, আপনি আমাদের দেশে যান ধর্ম উদ্ধার করতে। অতীশ দীপঙ্কর বলেছেন, যে আমি যদি শুধু স্বর্ণের লোভে যাই, তাহলে আমি যাব না। তিনি পরবর্তী পর্যায়ে গেছেন শিষ্য-সাগরেদ নিয়ে। তিনি বলেছেন, আমার একটি বছর লাগবে। তিনি ৫১ টি মন্দিরের প্রভাষক ছিলেন। সেই চাবিগুলা, মূল চাবিগুলো সবাইকে দিয়েছেন। একজন বড় প্রভাষক ছিলেন, একজন শিল্পী ছিলেন, একজন চিকিৎসক ছিলেন, অখন্ডজ্ঞানের সাধক ছিলেন। আমরা এখন কি - সিইসি, কম্পিউটার সাইন্সে বা বিশেষভাবে নাক কান গলা ইত্যাদি বিশেষ বিশেষ সাবজেক্টে পারদর্শী। আর ওই সময় সর্বজ্ঞানে গুণান্বিত হয়ে তিনি গড়ে উঠেছেন। সেখানে বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ছিলেন। আচার্য ছিলেন যেটাকে আমরা বলি ভিসি। আমি বলতে চাই এই অতীশ দীপঙ্কর ১৩ বছর চায়নাতে ছিলেন। আসতে চেয়েও তিনি আসতে পারেন নাই। তিনি সেখানে দেহ রাখেন। আমার দেশের সন্তান। পরবর্তী পর্যায়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সোনার বক্সে ভরে দেশে আনছেরন। তার দেহভষ্ম এখন বৌদ্ধ বিহারে রক্ষিত আছে।

 

অনুষ্ঠানের শেষে প্রধান অতিথির হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। এ সময় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা গান ও কবিতা পরিবেশন করেন। 

১১৬ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন