সর্বশেষ

রাজনীতি

নির্বাচন বর্জন ৫ প্যানেলের, বিভিন্ন অভিযোগে পুনর্নির্বাচনের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৫:১৪ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নেওয়া আটটি প্যানেলের মধ্যে পাঁচটি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে ভোটগ্রহণ শেষে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে গণনার কাজ।


ভোটার উপস্থিতি ও ভোটের হার

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১,৮০৫ জন ভোটারের মধ্যে ৮,০১৬ জন শিক্ষার্থী ভোট দিয়েছেন। এতে গড় ভোটার উপস্থিতির হার দাঁড়িয়েছে ৬৭.৯ শতাংশ।

সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে (৮১.৪৩%)
সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে: নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে (৪৮.৯৩%)
ভোটগ্রহণ চলে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ২১টি হলে স্থাপিত ২২৪টি বুথে ৪০টি করে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। কেন্দ্রীয় জাকসুর ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৭৭ জন প্রার্থী এবং হল সংসদের ৩১৫টি পদে ৪৬৭ জন প্রার্থী।


কারচুপির অভিযোগ ও ভোট বর্জন
ভোটগ্রহণ চলাকালেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাগছাস সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম, সম্প্রীতির ঐক্য, সংশপ্তক পর্ষদ ও অঙ্গীকার পরিষদসহ মোট পাঁচটি প্যানেল নির্বাচন বর্জন করে।
তাদের অভিযোগ, ব্যালট পেপারে ভুল, জাল ভোট, ভোটারদের ছবি না থাকা, পোলিং এজেন্টদের বাধা, শিবিরপন্থীদের বিশেষ সুবিধা, প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ। 

 

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের জিএস পদপ্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী বলেন, “এটি একটি সাজানো নির্বাচন। আমাদের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমলে নেয়নি। নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়েছে।”

ভোটার পরিচয়ে জালিয়াতির অভিযোগ

 

শহীদ রফিক-জব্বার হলের ভোটার রবিউল ইসলাম অভিযোগ করেন, তাঁর ভোট আগেই অন্য কেউ দিয়ে ফেলেছে।
হলের পোলিং অফিসার মো. জাকির হোসেন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানান।


১৫ নম্বর হলে ভোটগ্রহণে বিঘ্ন
বিকেল ১২টার দিকে ছাত্রী হল (সাবেক বঙ্গমাতা হল)-এ ভোট কারচুপির অভিযোগে এক ঘণ্টার জন্য ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি পদপ্রার্থী শেখ সাদী হাসান সহযোগীদের নিয়ে হলে প্রবেশ করলে উত্তেজনা ছড়ায়।

নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব রাশিদুল আলম জানান, “ভুল বোঝাবুঝির কারণে সাময়িক সমস্যা হয়েছিল। পরে ভোটগ্রহণ স্বাভাবিক হয়েছে।”

ব্যালট পেপারে নির্দেশনার ভুল

কাজী নজরুল ইসলাম হলে কার্যকরী সদস্য পদে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যালটের নির্দেশনায় বিভ্রান্তি দেখা দেয়। ভোটারদের একজন বলেন, “ব্যালটে বলা হয়েছে একজনকে টিক দিতে, অথচ তিনজনকে ভোট দেওয়ার কথা।”

 

হলের পোলিং অফিসার উজ্জ্বল মণ্ডল বলেন, “ভুল ব্যাখ্যার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে বলা হয়েছে।”

ভোট বর্জন করেছেন তিন শিক্ষকও

জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের তিন সদস্য—অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খান, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ও অধ্যাপক শামীমা সুলতানা—অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করেন।

অধ্যাপক নাহরীন বলেন, “এ ধরনের অনিয়মের দায়ভার আমাদের নেওয়া উচিত নয়। এটি দায়িত্বজ্ঞানহীন একটি নির্বাচন।”


নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, “ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গণনা হওয়ায় ফল পেতে শুক্রবার সকাল বা দুপুর পর্যন্ত লাগবে।”

পুনর্নির্বাচনের দাবি ও প্রতিবাদ কর্মসূচি

 

নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে জাহাঙ্গীরনগর শাখা ছাত্রদল মিছিল ও সমাবেশ করেছে। কবির সরণি থেকে শুরু হওয়া মিছিলে শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন এবং পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে স্লোগান দেন।

একই দাবিতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামও রাত ১টা ৪৫ মিনিটে সংবাদ সম্মেলন করে।


সময় পেরিয়ে এক হলে ভোট

সন্ধ্যা ৭টায়ও কাজী নজরুল ইসলাম হলে ভোট দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের, যদিও ভোটের সময় শেষ হয়েছিল বিকেল ৫টায়। প্রিজাইডিং অফিসার বলেন, “ভোটারদের সময় লাগায় নির্ধারিত সময়ে ভোট শেষ হয়নি।”

ভোট চলাকালীন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল পরিদর্শন শেষে উপাচার্য ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচনের পরিবেশ আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভোটগ্রহণ স্বাভাবিকভাবেই হচ্ছে।”

জাকসু নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ যেমন ছিল, তেমনি অনিয়ম ও বিতর্কও ছড়িয়েছে সর্বত্র। একদিকে বর্জন, অন্যদিকে শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবি—এ দুই বিপরীত স্রোতের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ কোন দিকে এগোবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে।

১১২ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
রাজনীতি নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন