সর্বশেষ

সারাদেশ

নৌকা তৈরিতে সুনাম ছড়াচ্ছে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা
স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা

বৃহস্পতিবার , ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৯:১৫ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
বর্ষা মৌসুমে নদ-নদীর প্রবল পানি বৃদ্ধি ও দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে সাতক্ষীরার অনেক এলাকাই ছয় মাসের বেশি সময় পানির নিচে থাকে।

ফলে জেলার মানুষজনের চলাচলে নৌকা হয়ে উঠেছে এক অপরিহার্য বাহন। এ চাহিদাকে ঘিরেই জেলার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা এলাকায় গড়ে উঠেছে নৌকা তৈরির এক সমৃদ্ধ শিল্প।

গত এক দশকে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের পাটকেলঘাটা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় ২০টি নৌকা তৈরির কারখানা। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এই কারখানাগুলো থেকে প্রতিবছর উৎপাদিত দুই হাজারেরও বেশি নৌকা সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

কারখানাগুলোর পরিবেশে চোখ রাখলে দেখা যায়—শ্রমিকরা দম ফেলারও ফুরসত পান না। কেউ কাঠ কাটছেন, কেউ কাঠামো তৈরি করছেন, আবার কেউ ফিনিশিংয়ের কাজ করছেন। একেকটি নৌকা তৈরিতে সময় লাগে দুই থেকে তিন দিন। মেহগনি, খৈ ও চম্বল কাঠ দিয়ে তৈরি এসব নৌকার দাম শুরু হয় ১০ হাজার টাকা থেকে, যা আকার ও ধরন অনুযায়ী কয়েক লাখ পর্যন্ত হতে পারে।


বছরজুড়েই ব্যস্ততা
আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসকে নৌকা ব্যবহারের মৌসুম বলা হলেও জলাবদ্ধতার কারণে এখানে প্রায় সারা বছরই চলে নৌকা তৈরি ও বিক্রি। পাটকেলঘাটার তৈরি নৌকা শুধু স্থানীয় চাহিদা পূরণেই সীমাবদ্ধ নয়, তা খুলনা, যশোর, নড়াইল, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। অনেকে সরাসরি এসে রেডিমেড নৌকা কিনে নিয়ে যান, আবার অনেকেই অর্ডার দিয়ে নিজেদের প্রয়োজনমতো তৈরি করিয়ে নেন।

চাহিদা বাড়লেও খরচও বেড়েছে

সুমি ফার্নিচার অ্যান্ড নৌকা কারখানা, তৈয়াবা ফার্নিচার, রহমান ফার্নিচার, আল ইমরান ফার্নিচার, রফিক ও ঐশী নৌকা কারখানার মালিকরা জানান, ট্রলার, পাল তোলা নৌকা, কোষা ও ডিঙি—সবধরনের নৌকাই এখানে তৈরি হয়। তবে কাঠসহ অন্যান্য কাঁচামালের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে।

স্থানীয় কারখানা মালিক মো. শাহিনুর আলম বলেন, “উপকরণের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি কারিগরদের মজুরিও বাড়াতে হয়েছে। এজন্য আগের চেয়ে কিছুটা বেশি দামে নৌকা বিক্রি করতে হচ্ছে।”


সরকারি সহায়তা পেলে সম্ভাবনা বিশাল
পাটকেলঘাটা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ সরদার বলেন, “নৌকা তৈরির এ শিল্প পাটকেলঘাটাকে বিশেষ পরিচিতি এনে দিয়েছে। প্রয়োজনীয় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখান থেকে আরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব।”

সাতক্ষীরা বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন) শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক গৌরব দাস জানান, “আমরা ইতোমধ্যে এসব কারখানা পরিদর্শন করেছি। বিসিকের আওতায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ঋণ সুবিধা দিয়ে তাদের সহায়তা করার সুযোগ রয়েছে।”

সম্ভাবনার দোরগোড়ায়
নৌকা তৈরিকে কেন্দ্র করে পাটকেলঘাটার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন শত শত শ্রমিক ও কারিগর। সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি সহায়তা পেলে এই শিল্প শুধু স্থানীয় চাহিদা মেটানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—এটি হতে পারে দেশের একটি উদীয়মান শিল্পখাত, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।  

১০৬ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন